জন্মটা মফস্বল এলাকায় হয়েছিল। বাড়ি থেকে কয়েক কিলো দূরে গেলেই গ্রাম। মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণ এবং উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে গ্রাম এলাকাগুলোতে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। গ্রামে ঘুরতে গিয়ে বেশ মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এটা হয়তো শুধু গ্রামেই নয় শহরের মানুষের মাঝেও এই বৈশিষ্ঠ্য বিদ্যমান রয়েছে। নিজের ঘরের প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে কেউ খোড়া নুলা কিংবা ঢসা বলতে চায় না। কিন্তু পাশের বাড়ির প্রতিবন্ধী ছেলেটিকে যেভাবে পারা যায় খোড়া নুলা ঢসার চাইতে আরো বেশি কিছু বলতে চায়। হয়তো ভাষার সংকির্ণতার কারণে আর কোন বিশেষণ যোগ করতে পারে না।
সেই গ্রামের মানুষগুলোর পূর্ণ ছায়া বর্তমান সরকারের মাঝে দেখা যাচ্ছে। সাবেক স্বৈরাচারী সরকার এরশাদ সাহেবের হ্যা এবং না ভোটটিকে দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোই ক্যাঙ্গারু নির্বাচন বলে থাকে। আবার ৯৬ সালে খালেদা জিয়ার দলীয় সরকারের অধীনে স্বল্পস্থায়ী নির্বাচনকে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার এবং তাদের নেতারা প্রহসনের নির্বাচন কিংবা ‘গনতন্ত্রের মৃত্যু’ বললেও ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে অবৈধ বলতে নারাজ। বরঞ্জ এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং বৈধ নির্বাচন। এ যেন গ্রামের সেই গৃহবধূ। যে নিজের সন্তানকে কখনো প্রতিবন্ধী বলতে পারে না।
তোফায়েল আহমেদ এবং জাহাঙ্গির কবির নানকরা যখন বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সংবিধান রক্ষা করা হয়েছে। ঠিক তখন মনে পড়ে, মাধ্যমিক স্কুলে পড়াকালীন সময়ে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে সংবিধান নিয়ে অনুচ্ছেদটির কথা। “সংবিধান তৈরী হয়েছে মানুষের উপকারের জন্য। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়”। তাহলে কি এই শিক্ষাটি ভুল?
বিশাল লাইন অতিক্রম করে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য ছবি তুললাম। ভোটার হয়ে গেলাম। ভাবলাম, যাক এইবার তাহলে আমার মতামত দিয়ে দেশের কোন অংশে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখতে পারবো। কিন্তু আশায় গুড়ে বালি। সেই আশা আর পূরণ হলো না। ৪ বছর আগে ভোটার তালিকায় ভোটার তালিকায় নাম উঠলেও আজ অবধি জাতীয় নির্বাচনে নিজের ভোটাধিকারখানি প্রয়োগ করতে পারলাম না। মাঝখান থেকে চলে গেল ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এতোকিছুর পরও ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নাকি ‘গনতন্ত্র’ কে রক্ষা করেছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনই নাকি দেশের যুগান্তকারী ইতিহাস হয়ে থাকবে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নাকি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এসব আমার বক্তব্য নয়, জাতির আব্বুর বড় কন্যা কথা। তার এইসব কথা সাংবাদিকরা শোনে আবার বিরাট আনন্দ নিয়ে পত্রিকায় লিখে দেয়, ৫ জানুয়ারী নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট করে থাকে। কিন্তু ৫ জানুয়ারীর কি ইতিহাসের যুগান্তকারী অধ্যায় নাকি কালো অধ্যায়। এই সিদ্ধান্ত আগামী প্রজন্মরাই গ্রহণ করবে। আপাতোত সাংবাদিকদের এমন তেলমাখা রিপোর্ট মানুষ আর গ্রহণ করে না। বরঞ্জ কারো যদি মন খারাপ থাকে হাসির একটু প্রয়োজন হয়, তবে আজকাল পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে মানুষ চরম বিনোদিত হয়। তাই এখন আর গোপালভাঁড়দের প্রয়োজন পড়ে না। এখন সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বড় গোপালভাঁড়।
যারা এই রিপোর্ট করে থাকেন সেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, ভাইসাহেব! আপনি কি আপনার ভোটটি দিতে পেরেছিলেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৫