মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন,“আমরা কারো বেডরুম পাহারা দিতে পারব না”। সেই তত্ব থেকে এখন সাধারণ মানুষ নিত্যদিন মারা গেলেও কেউ কোন কথা বলে না। আগে প্রেস ক্লাবের সামনে বিচার চেয়ে দফায় দফায় মানবন্ধন দেখা গেলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না। বাংলাদেশের বুকে হত্যা,খুন,গুম নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার। এসব নিয়ে খামোখা মানববন্ধন,সেমিনার করে টাইম নষ্ট করার কোন মানে হয় না। বরঞ্জ ‘সুলতান সুলেমান’ নামের বিদেশী সিরিয়ালটিকে কিভাবে বন্ধ করা যায় সেদিকে নজর দিয়েছেন সুশীল সমাজ। তাই তো, গাইবান্ধায় সাঁওতালদের ঘুর পুড়িয়ে উচ্ছেদ করে নিঃস্ব করা হলেও সুশীল সমাজ শীতল অবস্থান ধারন করে বসে আছেন।
দেশের মিডিয়াতো আর এক গন্ঠার। দেশের আপামোর জনতার কান্না যেন তাদের কানে পৌঁছাতো দূরে থাক তাদের শরীরে কোন প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে না। কিন্তু তাই বলে তো আন্তর্জাতিক মিডিয়া চুপ করে বসে থাকতে পারে না। আল জাজিরা টেলিভিশন সাঁওতালদের বাড়িতে পুলিশ কতৃক আগুন লাগানোর দুর্লভ ভিডিওটি প্রকাশ করে দিয়েছে। দেশের মিডিয়া পুলিশ বাবুদের যতোই হীরো বানানোর চেষ্টা করে কিন্তু বাবুরা কর্মদোষে বিশ্বের কাছে টেরোরিস্ট হিসেবে চিন্হিত হয়। ভাবতে পারেন, একটি দেশের পুলিশ বাহিনী কতোটা উন্নত আচরন করলে তাদেরকে টেরোরিষ্ট বলা যায়। এটাই উন্নয়ন। এটাই নেত্রীর ফর্মূলা।
গাইবান্ধার সাঁওতালদের পাশ কাটিয়ে সেই গাইবান্ধারই সদ্য প্রয়াত এমপি লিটনকে প্রসঙ্গে বলি। এমপি খুন হওয়া মাত্রই জাহাঙ্গীর কবির নানক সাহেব বলে দিলেন, এই কর্ম জামায়াত শিবিরই ঘটিয়েছে। উপরে সেই নিউজ নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন। নানক সাহেবের এই বক্তব্যের পর মিডিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গর্ব পুলিশ বাহিনী হা.রে.রে.রে রব তুলে উত্তরবঙ্গে ঝাপিয়ে পড়লেন। আর যায় কোথায়, এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু ভাবির হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশ দেবররা রাতারাতি সারাদেশে ১৮ হাজার জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছিলেন। তারই দেখাদেখি, এমপি লিটনের হত্যাকারীকে ধরতে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে পুলিশ এই পর্যন্ত ৭০ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কপাল সবই কপাল। এই জামায়াত শিবিরের কর্মীদের কপালের নামটিকে গোপালই বলতে হয়। দেশে যা কিছুই হোক প্রথম অভিযোগটা চোখ বন্ধ করে এই জামায়াত শিবিরের উপরই চলে আসে। একটু আগে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ভূমিকম্প হয়ে গেল। হাসান মাহমুদরা ব্রাসেলসে বোমা হামলার জন্য যদি জামায়াত শিবিরকে দায়ী করতে পারে তবে এই ভূমিকম্পের জন্যও জামায়াত শিবিরকেও দায়ী করতে পারে। তাতে জামায়াত শিবির কিংবা দেশবাসী যে খুব একটা হতবাক হবেন তা কিন্তু না। কারণ তাদের পূর্বঅভিজ্ঞতা আরো তিক্ত। দেশের একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলতে পারেন, “জামায়াত শিবির ধাক্কা দিয়ে রান্না প্লাজা ভেঙ্গে ফেলেছে” তাদের কাছে একথা তো অতি সাধারণ।
যাইহোক ৭০ জন জামায়াত শিবির কর্মীকে ধৃত করার পর এখন শুনছি উল্টো কথা।
এসব কিছুর মূল কারণ ১৯ কোটি টাকা। প্রয়াত এমপি সাহেব যে বিরাট বাহাদুর ছিলেন সেকথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন দেখি না। তিনি একাই মস্তবড় এক সন্ত্রাসী শিশুকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছেন তার এই বীরত্বগাঁধা তো সবারই জানা। সেই বীরকেই নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করল জামায়াত শিবির। নানকদের কথানুসারে। এখন দেখা যাচ্ছে রক্তের শিরায় উপশিরায় আওয়ামীলীগের চেতনা লালন করা এমপি লিটনের বাড়ির সবাই জামায়াত শিবির। অবস্থা যদি এমনই হয়, তবে দেশনেত্রীর লজ্জা পাওয়া উচিত। লজ্জা পেয়ে পাইকারীহারে জামায়াত শিবিরকে গ্রেফতার করা বন্ধ করুন। এসব নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন। এমন নোংরা রাজনীতির খেলা আর কতদিন খেলবেন। এমন করে তো ৭ টি বছর চলে গেল কিন্তু কোন কিছুরই তো সুরাহা হল না। সন্দেহ হয়, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার লজ্জা আছে কিনা। জিজ্ঞাসা করতে মন চায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কি লজ্জা আছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১০