আসুন গল্প শুনি, তথাকথিত সভ্য দেশের গল্প নয়, আরবের মরু বেদুইনদের গল্প। একবার একটি অঞ্চলে একদল মানুষদের উপর অন্যদল বেশ চড়াও হয়েছে। অতিরিক্ত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নির্যাতিত মানুষগুলো পাশের রাজ্যে পালিয়ে যায়। সেখানে তাদের বন্ধুরা ছিল। বন্ধুরা তাদের ফসলের জমি ভাগ করে দিয়েছে। ঘর ভাগ করে দিয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে যাদের একাধিক বউ ছিল তারা একটি বউকে তালাক দিয়ে নির্যাতিত বন্ধুদের সাথে বিয়ে দিয়েছিল। এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমি আসহাবে রাসূলের মুহাজির ও আনসারদের কথা বলেছি।
সেই দাবী নিয়ে ১৯৪৭- ১৯৫১ সালে ভারত থেকে এদেশে একদল মুহাজির এসেছেন হিন্দুদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে। না, আমরা তাদের সাথে মদীনার আনসারদের মত আচরণ করতে পারিনি। আমরা তাদেরকে থাকতে জমি দেইনি। তারা সরকারি জমিতে ক্যাম্প করে থাকতো। অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতো। সেই নিরীহ মানুষদের উপর আমরা গণহত্যা চালিয়েছি আমাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ১৯৭১ সালে। সেই থেকে শুরু। আমরা গণহত্যা শিখে ফেলেছি। এখন আমাদের কাছে গণহত্যা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
মানবতাকে আমরা খুন করেছি ১৯৭১ সালে। এরপর মুজিবের আমল, জিয়ার আমল, এরশাদের আমলে আমরাই খুন করেছি আমাদের। দেদারছে...। অতঃপর একটু স্থিতাবস্থা আসলেও গত ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে আবার গণহত্যা।
আজ নাকি মানবাধিকার দিবস। রক্তাক্ত মানবাধিকার দিবসের শুভেচ্ছা নিন। শুভেচ্ছার পাশাপাশি কিছু ইনফরমেশনও নিন। বাংলাদেশে ২০১৬ সালে কোন যুদ্ধ হয়নি। বিরোধী দল দেয়নি কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী। পঙ্গু হয়ে যাওয়া বিরোধী দলের যখন টিকে থাকাই দায় সেখানে দেশে একটিমাত্র দল দৃশ্যমান। নিরুত্তাপ সেই দেশে এই বছর এখন পর্যন্ত খুন হয়েছে ২০৮৭ জন। এর মধ্যে পুলিশ/র্যাব গুলি করে মেরেছে ২২৫ জনকে। ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৬৮৯ জন নারী (এই সংখ্যা সম্ভবত গৃহযুদ্ধে বিপন্ন সিরিয়ার চাইতেও বেশী)।
এই বছর গুম হয়েছেন ৪১৪ জন মানুষ। এর মধ্যে বেশীরভাগ হলেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বা তাদের প্রিয়জন। উল্লেখ করার মত হলো অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে আমান আযমী, মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যরিস্টার আরমান এবং সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের। কম যায় না প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও। তারা হত্যা করেছে এদেশের ২৪ জন মানুষ। নির্যাতন করেছে শতাধিক মানুষকে। এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্য। অপ্রকাশিতগুলো অপ্রকাশিতই থাক...
মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চলা-ফেরার স্বাধীনতা, ব্যবসা করার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার চাওয়ার অধিকার, মৃত্যুর পর লাশ চাওয়ার অধিকার এসব নিয়ে না হয় কথা নাই বললাম। ক্ষতবিক্ষত মানবাধিকারের পক্ষ থেকে আবারো রক্তাক্ত শুভেচ্ছা গ্রহন করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৬