একটু বড় হলেও পোস্ট টা পারলে পুরোটা পড়ুন। শুনেছি দুখ শেয়ার করলে নাকি কমে যায়। তাই আমার কিছু কথা শেয়ার করা। আপ্নারা আমার মনটা এক্টু হালকা করে দিবেন ?
আমার মন টা অসম্ভব খারাপ। অনেক ফ্রেন্ড কেই হারিয়েছি আমি এই জীবনে। সময় থেমে থাকেনা। "একটি ফটোগ্রাফ" এর মত হয়তো সেই স্মৃতিগুলোও মলীন হয়ে যাবে। গতকাল আমার এক ফ্রেন্ড আত্মহত্যা করেছে। জানিনা, তাকে কাপুরুষ বল্বো, নাকি সাহসী বল্বো। আমার জীবনেও এমন কিছু পরিস্থিতি গেছে, যখন চোখের সামনে শুধুই একটা ব্লেড, বা একগাদা স্লিপিং পিল চোখে পড়তো। সে কি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো তাও আমার অজানা নয়। তবে তার অকাল মৃত্যু আমাকে নাড়া দিয়েছে । আমার লাইফ টা হটাত ফ্লাশব্যাকের মত উপস্থিত হয় আমার সামনে। সেই সময়টাকেই বন্দী করার চেষ্টা করছি এই পোস্টে। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, আমার পরিবার বন্ধুবাধবের সাথে সেই ছেলেটার সম্পর্ক কোথায়, বলবো যথাসময়ে।
আপনাদের অনেকের সাথেই আমার ব্লগিয় পরিচয় অনেক দিনের। আবার কারো সাথে শুধুই ভার্চুয়াল পরিচয়। আজ কেন যেন আমার পরিবারের সব মেম্বারদের কথা শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে। আপ্নারাও শেয়ার করতে পারেন আপনাদের ভালোলাগা খারাপ লাগা, পরিবার ও প্রিয় মানুষদের কথা। ব্লগার বন্ধুদের সাথে না হয় আরেকটু দৃড় হোক বন্ধন।
আমার পরিবার টা বেশ অদ্ভুত কিসিমের। ভালো রকমের ধার্মিক, কিন্ত এট দা সেইম টাইম সংস্কৃতিমনা। টিপিকাল, আবার একই সাথে মডার্ন। উদাহরন দেয়া যাক, একটা সময় ছিলো যখন আব্বুর রাতের কোরান শরিফ পড়ার জন্য টিভি দেখতে পারতাম না। কি টিপিকাল ধার্মিক ! আবার সেই বাবা মার মুখের কথাই হচ্ছে, তারা নাকি আমার বিয়ের পর আলাদা হয়ে যাবে। কারন আমার বউ হয়তোবা অনেক মডার্ন হবে য, যে কারনে যৌথ ফ্যামিলি তার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। এই কথাটা সাধারনত ছেলেরা বলে প্যারেন্টসদের, আর আমার বেলার আমার প্যারেন্টস রা বললো আমাকে। আমার কোন গার্লফ্রেন্ডদেরি আমার বাসায় আসার ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ ছিলোনা। দীর্ঘ ৬ বছরের রিলেশন এক মেয়ের সাথে। এমনো হয়েছে, আমি বাসায় নেই, সে এসে আম্মু আব্বুর সাথে গল্প গুজব করতো। ছেলে আর মেয়ে ফ্রেন্ডের মাঝে তারা কখনো ডেস্ক্রিমিনেট করেনি। তাহলে তাদের মডার্ন বল্বোনা ?
ছবিঃ আম্মু আর আমার বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড হৃদি।
আমার মনে পড়ে ছোটবেলা থেকেই বাবা আমাকে কোন কিছুতে প্রেশার করতো না। যেহেতু কলোনীতে থাকতাম, তাই প্রতিদিন বিকাল বেলাতেই ক্রিকেট খেলতাম। সন্ধার এক্টু আগে আব্বু বাসা থেকে নামতেন দুইটা টুপি নিয়ে। একটা নিজে পরতেন, আরেকটা আমাকে দিয়ে বলতেন," টুপিটা পরে ফেল দেখি", এই কথার পর আর নামাযে না গিয়ে উপায় থাকতো না। সুইট একটা এপ্রোচ। আস্তে আস্তে বড় হবার সাথে সাথে সোশিওলজি আর ফিলোসফির বিভিন্ন বই পড়তে পড়তে কিছুটা মুক্তমনা হয়ে গেলাম। যাকে বলা যেতে পারে নাস্তিক। মজার ব্যাপার হচ্ছে , এই নিয়েও আব্বুর সাথে অনেক আলোচনা হতো। তিনি আমার ব্যাক্তিগত অপিনিয়ন কে কটাক্ষ করে কোন কথা বলেন নি। বরং বলেছে, আরো পড়। যুক্তির সাথে বিশ্বাসের তাল্গোল পাকিয়ে ফেলো না।
আরেকটা ঘটনা শেয়ার করি, আমি তখন নতুন নতুন সাইন্সের মজা পেয়েছি। একদিন আব্বুকে প্রশ্ন করলাম, "আচ্ছা আব্বু, আমি যদি কোরানের পাতায় একটা তারের পজেটিভ বসাই আর দোতলা থেকে তারের নেগেটিভ প্রান্ত পায়ে লাগাই, তথলে কি গুনাহ হবে ?" কি বদ ছিলাম চিন্তা করেন। য়াব্বু শান্ত ভিঙ্গিতে উত্তর দেয়, "বাবা, তোমার উউদ্দেশ্য যদি হয় কোরান কে অপমান করা তাহলে তুমি লাথি মার আর তার দিয়ে পা লাগাও, একই কথা। আর যদি ইন
টেনশনালি নাহয়, তাহলে আমার মনে হয়, পা লেগে গেলেও সেটা অপ্রাধ হবেনা। কারন কোরান শরীফ কে সন্মান দেখানোটাই আসলে মুল কথা। এই যে দেখ, জামাত শিবিরের নিকৃষ্ট মানুষজন কোরারন কে সামনে রেখে মিছিল করে, কোরান কে বা ইসলাম কে ইউজ করে পলিটিক্যাল উইপন হিসেবে, তাদের কি আসলে ক্ষমা করা যায় ? মনে রেখ- যদি বিশ্বাস করতে চাও কোন কিছু, তা বুকে ধারন কর। আর একটা কথা, রাজাকার মাত্রই নিকৃষ্ট জীব, এদের থেকে সাবধান। এদের জন্য ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই রেখো না। সেই আমার ছাগুদের বিরুদ্ধে প্রথম পাঠ।
ছবিঃ আমার আব্বু
আমার দাদু ছিলেন একজন কোরানের হাফেজ। অথচ তিনি মরার আগেও বিড়বিড় করে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী কবিতাটা শোনাতেন আমাদের। সাধারন এক গ্রাম্য বৃদ্ধার মুখে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আমাকে অবাক করে দিতো। আর দাদা ছিলেন একটা মশজিদের মুয়াজ্জিন। আমি সম্ভবত একজন এরাবিয়ান ধর্মপরাচকের বংশধর। তার ৭ম জেনারেশন। কাজেই ধর্ম জিনিস টা আমাদের পরিবারের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত।
ছবিঃ আমার দাদু আর ছোট বোন ফারিহা
আমাদের ফ্যামিলির একটা ট্রেডিশন হচ্ছে- যে কোন একজন আরবীতে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বাইরে পড়তে যাবে। আমার একটা কাজিন ফিয়েছিলো মিশরে। আমার ছোট ভাইটাও কিন্ত একজন কোরান হাফেজ। সম্ভবত তাকেও মিশরের আল আজাহার বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইউনিভার্সিটি অফ তেহরানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ওর হাফেজি শেষ হয় বেশ অল্প বয়সে। আমি তখনো ভেটো দিয়েছিলাম। কিন্ত এখন দেখি, ও আর অন্য ১০ জনের মত নয়। সে কোরান পড়ে, কোরানের উপর গবেষোনা করে, এর বাংলা ও ইংলিশ অনুবাদ রেগুলার স্টাডি করে। সে নাকি মজাই পায় এতে। হাফেজ রা অনেক দুষ্ট হয় এবং পরে হাফেজি ছেড়ে দিয়ে নানান অপকর্মে লিপ্ত হয়, এই ধারনা আমার ভেঙ্গে যায় আবীর (আমার ছোট ভাই) কে দেখে।
আমি অন্যন্ত গর্বিত, একজন মাদ্রাসার ছাত্র হয়েও সে, সংসকৃতিমনা। সে ভালোবাসে রবীন্দ্রনাথ, নজ্রুলের কাব্য। সে দস্তয়ভস্কির বই পড়ে আবার হুমায়ুন আজাদের বই ও পড়ে। সে প্রায় সময় আমাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করে। সে জানতে চায়, সে ব্লগ পড়ে, সে আসিফ মহিউদ্দীনের লেখা পড়ে। অবাক হয়ে দেখলাম সে আসিফ মহিউদ্দিনের লেখার সমালোচনা করলেও অনেক আগ্রহ নিয়ে পারভেজ আলমের বিষলেষন ধর্মী লেখাগুলো পড়ে। না বুঝলে আমাকে জিজ্ঞেস করে। একদিন দেখলাম মারামারি করে এসেছে স্কুল থেকে। বল
লো, তাকে নাকি শিবিরে জয়েন করানোর জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়েও ব্যার্থ হয়ে শিবিরের ছেলেরা তাকে পিটিয়েছে। স অবশ্য ছেড়ে কথা কয় নি। তার ইতিহাস ও রাজনিতী সচেতন সত্তা দিয়ে সে টিচারদের ফেভারে চলে আসে।
আমার এই ভাইটা কিন্ত তাইকোয়ান্ডোর ন্যাশ্নাল প্লেয়ার। ইন্ডিয়ার এক ছেলের সাথে প্রতিযোগিতায় সে একটা ১৬০ ডিগ্রি কিকে নক আউট করে দিয়েছিলো। সে একটা কম্পিউটা্র পুরাটা প্ররটস টু পার্টস খুলে আবার এসেম্বেল করতে পারে।
ছবিঃ আমার ছোট ভাই আবীর
এত কথা তাকে নিয়ে বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাদের একটা ধারনা দেয়া আমার পরিবার সম্পর্কে। এই পরিবারে এক একজন সদস্য এক এক রকম। সবার আঝেই দৈত সত্তার একটা ছায়া দেখা যায়। আমি অনেক আদর করি আমার এই ভাইটাকে, কিন্ত কখনো বুঝতে দেই না। যদিও আমরা দুই ভাই অনেক ফ্রি এন্ড ফ্রাঙ্ক।
আমার আম্মুর বিয়ে হয়ে যায় ইন্টারের পরেই। কিন্ত আব্বু তাকে অনার্স মাস্টার্স করায় ডি ইউ থেকে। বি এড এম এড দেয়ায়। তার শিক্ষকতার চাকুরিকে কখনই বাধা দেয় নি, বরং রাতের পর রাত শিক্ষার্থিদের খাতা দেখে গেছে। আম্মু কবিতা আবৃত্তি করে। জীবনে প্রথম "কেউ কথা রাখেনি" কবিতাটা আই শুনি আম্মুর কাছ থেকে। সেইখান থেকেই হয়তো আমাদের ভাইবোন দের মাঝে অবচেতনভাবেই একটা সংস্কৃতিমনা ভাবনা ঢুকে গেছে।
ছবিঃ আমার আম্মু
আর ছোট বোনটা র কথা কি বল্বো। সে আমাদের দুই ভাইয়ের অনেক আদরের। নতুন নতুন রান্না করে আমাদের খাওয়ানোটাই তার প্রধান হবি। সেও ছবি আকে, গান গায়। সুইট একটা বোন আমার।
ছবিঃ আমার ছোট বোন ফারিহা
আমরা যখন ডিনারে বসি, তখন নানা রকম কথা হয় সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম অনেক কিছু নিয়েই স্বাভাবিক ভাবেই আব্বু আর আবীর থাকে এক পক্ষে। অপরদিকে আমি একা, যেহেতু আমি কিছুটা নাস্তিক মাইন্ডের। আম্মু বসে বসে আমাদের তর্কাতর্কি দেখে। আর ছোট বোন টা বসে বসে ফিক ফিক করে হাসে। তবে কখনই আমরা কেউ কারো অপিনিয়নে যুক্তি ছাড়া কটাক্ষ করিনি।
আমার মেডিকেলে চান্স পাওয়াটা ছিলো সবার জন্য বিরাট খুশির কেটা ব্যাপার। আসলে আমার কোন ইচ্ছাই ছিলোনা, বাট গার্লফ্রেন্ডের ডিমান্ড, সেষ পর্যন্ত ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি হলাম। পেলাম অবাধ স্বাধীনতা। এবপং সঙ্গতভাবেই স্বাধীনতার মূল্য দিতে পারলাম না। নষ্ট হয়ে গেলাম, জড়িয়ে পড়লাম ছাত্র রাজনীতিতে, গার্লফ্রেন্ডের সাথে তখন কমিউনিকেশন গ্যাপ, আমার মাসিক ইনকাম তখন অনেক। ড্রাগস আর বন্ধুদের পিছনেই উড়াতাম সব টাকা। সারাদিন ড্রাগস, আর সারারাত নকচারনাল জীবনে আটকে গিয়েছিলাম। জড়িয়ে পড়েছিলাম ভয়াবহ মেডিকেল কলেজের ইন্টারনাল পলিটিক্সে। ছাত্রদের উন্নয়নের কথা ভাবতে গিয়ে আন্দোলন শুরু করি ছাত্র সংসদের জন্য। চেয়েছিলাম জামাত শিবির মুক্ত একটি মেডিকেল কলেজ। কিন্ত অবাক হয়ে দেখলাম শেষ সময়ে আমি একেবারে একা। একজন ও ছিলোনা আমাকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য। অথচ পুরা স্ট্রাইক টাই করেছিলাম সাধারন ছাত্রদের অধিকারের দাবিতে। এক্সময় টিচারদের চোখে হয়ে গেলাম বখাটে। কেস খেলাম একাধিক। বুঝতে পারলাম ভুল করছি, ভুল পথে চলছি। কিন্ত ততদিনে আমি সেকেন্ড ইয়ারের লাস্টে। তবে বুঝে গেছিলাম, আমি এখানে থাকতে পারবোনা, থাকলে স্পয়েল্ড হয়ে যাবো পুরাপুরি।চলে এলাম ঢাকা, মেডিকেল থেক টিসি নিয়ে।
ছবিঃ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ
ব্রেক আপ হয়ে গেলো গার্লফ্রেন্ডের সাথে। মেয়েটার নাম বলছিনা, তবে সে বাংলাদেশের একজন টপ ক্লাশ রাইটারের এক্মাত্র কন্যা। আমার সচাইতে খারাপ টাইমে পাশে পাইনি তাকে, কিছুটা অভিমান রেয়ে গিয়েছিলো। তবে তাকে কোন ভাবেই দোষ দেই না। আমি তো তখন ভবঘুরে টাইপের একটা ছেলে। আমার প্রতি তার ভরসা না থাকাটাই অবশ্য স্বাভাবিক। মেয়েটা অসম্ভব ভালও একটা মেয়ে ছিলো। আমাদের ভালোবাসার ৬ টি বছর আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আজো তার সাথে আমার যোগাজোগ আছে। তবে অভিমান টুকু কাটিয়ে উঠতে পারিনি এখনো। যদিও জানি, আমরা একজন আরেকজনের বেস্ট ফ্রেন্ড এবং একসাথে থাকলে এর চেয় ভালো থাকা আর কারো পক্ষে সম্ভব না। আমারা এক জীবনে যা মজা করেছি, সেই স্মৃতি নিয়েই আমার মনে হয় সারাজীবন বেচে থাকা সম্ভব।
ছবিঃ আমি ও আমার গার্লফ্রেন্ড, সেইসব সুখের দিনগুলি
"খুব মিস করি তোমাকে মেয়ে। তোমার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে আমার আসলে অনেক কষ্ট হয়। কিন্ত কি করবো বল, মেডিকেল ছাড়ার পর একটা বছর আমি প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ছিলাম। প্রতিটা মুহুর্তে ভাবতাম তোমার কথা, ফোন দিতাম, তুমি চুপ থাকতে, আমারো কিছু বলার ছিলোনা। এইটা কাটিয়ে উঠে নিজের ট্রাক খুজে পেতে আমার অনেক সময় লেগেছে। এখন সামান্য দুখবোধ আমাকে আর টলাতে পারেনা। এখন আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক সচেতন। আমি এখন অনেক গ্রোন আপ। জানো, মেডিক্যাল ছাড়ার পরে আমি যে শিক্ষা পেয়েছি একলা চলার, তা আজীবন আমি কাজে লাগাবো। আমাকে ক্ষমা করে দিও মেয়ে, আমি এখন অনেক ইগোসেন্ট্রিক। মনের ভিতরে তোমার আবেদন যেমন অস্বীকার করতে পারিনা, তেমন অস্বীকার করতে পারিনা তোমার প্রতি অভিমান। মাঝখানে কয়েক জনের সাথে ডেটিং করেছি হয়তো, কিন্ত তোমার যায়গাটা কেউ নিতে পারেনি প্রিয়তমা। তুমি এখন আমার সেই বন্ধু, সেই প্রিয়া।"
শুরু হয়ে গেলো আমার ফ্রাশট্রেশন, ডিপ্রেশনের এক অতল গহবর। বারো ফুট বাই ১৫ ফিট একটা কামরায় বদ্ধ করে ফেললাম নিজেকে। সারাক্ষন গিটার টা বা পুরাতন সব ছবি নিয়ে বসে থাকতাম ঘরের কোনে। সূর্য দেক্লে ভয় লাগতো আমার। ভয় পেতাম অন্ধকার ও। এই গভীর একাকীত্ব আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। দাতে দাত চেপে সয্য করতাম ড্রাগের উইথড্রল। তারপরেও ট্রিট্মেন্ট করাইনি। বিশ্বাস ছিলো নিজের মানসিক শক্তি দিয়েই পারবো সব জয় করতে। সেই একটা বছর যে কি গেছে আমার ..... একজন বন্ধুও খোজ নেয় নি আমার।
ছবিঃ আমার বাউলা অবস্থার একটা ছবি।
কিভাবে সেই ভয়াবহ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেলাম জানিনা, তবে মনে আছে একদিন ভোর বেলা সূর্য দেখে মনে হলো অনেক কিছুই করা বাকি জীবনে। ইয়াবড় বড় চুল দাড়ি কেটে ফ্রেশ হলাম, শাওয়ার নিয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম। ঘর থেকে বের হলাম মনে হয় দীর্ঘ ছয় মাস পর। জানিনা কি থেকে কি হলো- কোথা থেকে যেন এক শক্তি এসে ভিড় করলো আমার মনে। একটা কথাই মনে হচ্ছে, আমি সৃষ্টির সেরা জীব, আমি কি এত সহজে হাল ছেড়ে দিতে পারি ? ভর্তি হলাম মিডিয়া এন্ড ম্যাস কমিউনিকেশনে। বেশ ভালো মার্ক নিয়ে এডভার্টাইজিং এ ফাস্ট মেজর এবং জার্নালিজমে সেকেন্ড মেজর করলাম। এখন আমার সেই সব ফ্রেন্ড রা প্রায় ই ফোন করে, মেডিকেল ছাড়ার পর যাদের টিকিটাও পাইনি। মনে হয় , জীবন যুদ্ধে যেন নতুন করে জয়ী হলাম।
তবে এটাও ঠিক, কিছু ফ্রেন্ড আমার সাথে ছিলো সবসময়। এরাই লাইফের সত্যিকার বন্ধু। আফসোসের ব্যাপার সবার সাহে আমার এখনো পার্টিকুলারলি যোগাজোগ থাকলেও ফ্রেন্ড ব্যাচ টা আর নেই। তাদের নিজেদের নিজেদের মাঝেই কত্ত কমপ্লিকেশন। থাক, তাতে আমাএ কি, আমি তো সুখেই আছি। আমিতো সবার সাথেই ভালো আছি।
ছবিঃ সেই সব বন্ধুরা, যারা আমার সাথে সবসময় ছিলো।
আমি অনেক কৃতজ্ঞ আমার বাবা মার প্রতি, সবাই আমাকে পোক করলেও তারা বরাবরি আমাকে সাহস জুটিয়েছিলো, সারাক্ষন আমার পাশে ছিলো। ড্রাগস নেয়া , মারামারি করা বখাটে জেলখাটা ছেলেকে তারা ফিরিয়ে দেয়নি তাদের ছায়াতল থেকে। আমিও আমার সন্তান্দের পাশে থাকতে চাই ঠিক এভাবেই।
আমি এখন ড্রাগস নেই না আজকে তিন বছর। পড়াশোনা করি, জব করি পছন্দের সেক্টরে, মনের সুখে গান শুনি, বই পড়ি , আড্ডা মারি ফ্রেন্ডদের সাথে। ভীষন ভালো আছি আমি, ভীষন। সবার মরে যাওয়া বিশ্বাস কে আমি আবার জাগিয়ে তুলতে পেরেছি। এটাই আমার জীবনের সবচাইতে বড় এচিভমেন্ট। দোয়া করবেন আপ্নারা আমার জন্য, আমি যেন দেশের জন্য কিছু একটা হলেও করতে পারি নিজ যায়গা থেকে।
আমি অনেক কে দেখেছি এই রকম আপ্স এন্ড ডাউনের পরে স্পয়েল্ড হয়ে যেতে, ব্লগার বন্ধুরা, তারা হয়তো আপনি বা আপনার কাছের কেউ। তাদের ঝরে যেতে দিয়েন না। লাইফ ইজ সো বিউটিফুল, তাদের মটিভেট করুন। লাইফের ভালো স্মৃতিগুলোকে আকড়ে ধরে বাচতে শেখান।
স্বার্থ মানুষ কে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। কিন্ত তাতে করে নিজের ট্র্যাক হারালে চলবেনা। মানুষের মন অনেক শক্তিশালি একটা জিনিস। সে সব কিছু নিজের কন্ট্রোলে আয়ত্বে নিয়ে আস্তে পারে চাইলেই। দরকার শুধু একটু বোধদয়।
আর একটা জিনিস, নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না। মনে রাখবেন আপনার জীবন আসলে আপনার একার নয়, আপনার বন্ধু বান্ধব, পরিবার, সবার প্রত্যাশা নিয়েই আপনার জীবনের স্বার্থকতা। কাজেই আপনার মন্মত সবি করবেন, তবে এইটাও মাথায় রাখবেন, আপনাকে কিছু দায়িত্ব পালন করতেই হবে। একটা ব্যাপার আপনার হয়তো করতে ইচ্ছা হচ্ছেনা, তবে আপনি জানেন, এইটা করতেই হবে, কারন এইটা দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে ইউ হাভ টু পুশ ইট। এই একটা পুশ, এক্টুখানি চিন্তাই হয়তো আপনার জীবনে নিয়ে আসবে অনাবিল সুখের মুহুর্তগুলো।
অনেক কথা শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। জানিনা কতটা বোর করলাম। তবে লেখাটাকে একজন নুয়ে পড়া মানুষের উঠে দাড়ানোর গল্প বলা যেতে পারে। অন্তত আমার জীবন দিয়ে পাওয়া অভিজ্ঞতাগুলো তো মিথ্যা নয়।
আপনাদের কাহিনী শুনতেও ইচ্ছুক।
ছবিঃ হাসিখুশি আমি, জীবন বড়ই সৌন্দর্যময়।
---------------------------------
মূলত এই লেখাটিতে আমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের প্রসংগ তুলে এনেছি দুইটি কারনে। প্রথমত, আমাদের সবারি পরিবার আছে। আছে বন্ধু বান্ধব- প্রেমিক, প্রেমিকা। কিন্ত যে কোন একটা মানুষের উপর অভিমান করে আত্মহুতি দেয়ার অর্থ অন্য সবার ভালোবাসাকে অমর্যাদা করা। এদের সবাইকে নিয়েই আমাদের জীবন, এইটা বুঝতে হবে। আর দ্বিতীয়ত, আমি আমার পরিবার আর ফ্রেন্ডদের সুখস্মৃতি নিয়ে আজীবন বেচে থাকতে চাই। সেই গভীর ডিপ্রেশনের সময়টায় যদি আমি আত্মহত্যা করতাম, তাহলে এই সব সুখের মুহুর্ত গুলো কবরে কি কাজে আসতো আমার ? আমার বোকা বন্ধুটা বুঝলোনা, আত্মহত্যা সব কিছুর সমাধান নয়, বরং এটি হচ্ছে সবকিছু থেকে পালিয়ে বেড়ানো। এমন ভুল যেন আর কখনো কেউ না করে। যেখানেই থাকো, ভালো থেকো বন্ধু। মনে রেখো- তোমার পরিবার আর বন্ধুদের আজীবনের জন্য কাদিয়ে গেলে...।
ধন্যবাদান্তে
তন্ময় ফেরদৌস।