somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোটগল্পের জীবন।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ছোটগল্প বরাবরই আমাকে টানে। মনে হয় কবিতার চেয়েও ছোটগল্প আমার প্রিয়। মূলত ছোটগল্প পড়া শৈশবে চয়নিকার পাতায়। চয়নিকার কথা মনে আছে? প্রাইমারির গল্পসম্ভার, ঐ যে ডালিম কুমার বা নুনের মতো ভালোবাসি। তারপর মাধ্যমিকের দ্রুতপঠন। এর মাঝে পড়া হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ভিন্নসব গল্প। হাতে পেলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত গল্পের বইগুলো, ভয় পাওয়ার আগে, হিরে মানিক পান্না, তিন মোগল সম্রাট, এসব বইগুলো ইসলামিক ইতিহাসনির্ভর কাহিনী গল্পের আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছিল। তারপর পেয়ে গেলাম রাশিয়ার প্রগতি প্রকাশনীর মাল কাইটের ঝাপি, ফিবনক্কি রাশিমালা এবং চিন দূতাবাসের বিভিন্ন বাংলা বই নাম এমন ছিল, সিনহুয়া ও ভল্লুক, অহংকারী সেনাপতি একটি চমৎকার সিনেমাভিত্তিক গল্পগ্রন্থ মাইন যুদ্ধ। আমার মনে নেই আমি এসব বই কিভাবে পেয়েছিলাম, তবে নিশ্চয় আমার মনিকাকু এসব বই পড়তেন বা সংগ্রহ করতেন। উনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র।

একফাকে আমার পড়া হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ, বিশেষত গুপ্তধন গল্পটি আমার প্রিয় ছিল। আমি তখন সিক্স বা সেভেনে পড়ি, আমার সামনে আসলো ডিগ্রির বাংলা ছোটগল্প সমগ্র বইটি। আমার মেঝভাই বাবলুভাইয়ের বই ছিল সেটি। এই বইটি আমাকে পরিণত গল্প কি তা শেখায়। টোপ, প্রাগৈতিহাসিক, রস, জিবরাইলের ডানা এসব ঐ বইয়ে পড়েছিলাম। প্রভাতকুমার, অচিন্ত্যকুমার, আবু ইসহাক কিংবা বাংলা সাহিত্যে 'তিন বন্দ্যোপাধ্যায়'-এর কথা হামেশাই বলা হয় সেই বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, মানিক তাদের সাথে পরিচয় এ পর্যায়ে। এরপর আমার হাতে এলো সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ গল্পসমূহ। কাজী আনোয়ার হোসেনের অনুবাদে ছয় রোমাঞ্চ, ছায়া অরণ্য আর পঞ্চ রোমাঞ্চ বইগুলো আমাকে অন্য এক কল্পনার রাজ্যে অভিসিক্ত করলো। আমি গল্পগুলোর সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম একসময়, দীর্ঘদিন এই গল্পগুলোর ঘোর ছিল চারপাশে। পরে সেবার একটি গল্পর বই আমার খুব প্রিয় হয়ে উঠে, জামশেদ মুস্তাফির হাড়, বইটি আমি এখনও সুযোগ পেলে পড়ি।

কলেজে একটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলাম হুমায়ুন আহমদের শ্রেষ্ঠ গল্প বইটি। পড়লাম এতবেশি বার যে কয়েকটি গল্প মুখস্ত হয়ে গেল। মনে হয় হুমায়ুনের উপন্যাসের চেয়ে গল্প উন্নত এবং দ্রষ্টব্য। একটি দুটি গল্প এখনও মনে আছে। একজন ক্রীতদাস, একটি নীল বোতামের গল্প! বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে রুমমেট বন্ধু জেমসের কাছে পেলাম প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প সমগ্র। পড়লাম এবং অভিভূত হলাম বিশেষত তেলেনপোতা আবিস্কার। এসময় বন্ধু সুমনের লোহার গরাদে আবিস্কার করলাম বনফুল এবং পরশুরামকে একত্রে। তারা আমার ভেতরকার ছোটগল্পের ধারণাকে পুরো পাল্টে দিল। আমার কাছে চিরকালীন হয়ে উঠলো তাদের অভিনব, অনবদ্য গল্পগুলো। তারপর পড়া হলো পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, জলবেশ্যা, নিশী বিড়ালের আর্তনাদ। ততদিন আল মাহমুদ আমার প্রিয় কবি। তবে তার গল্পের ভাষা আমাকে মুগ্ধ করলো। আর পড়লাম সত্যের মতো বদমাইশ। মান্নান সৈয়দের কবিতা যদিও আমাকে কবিতা শিখিয়েছে তবুও তার গল্পগুলো মনে হয় অন্যগ্রহের ভাষালিপি, আমি এখনও মুগ্ধ তার ভাষার বিন্যাসে। আস্তে আস্তে জগদিশ গুপ্ত পড়লাম। দুটি সিরিজ গল্প আমাকে আনন্দিত করলো এবং এখন করছে, তাহলো প্রেমিন্দ্র মিত্রের ঘনাদা আর নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা। এর মাঝে বিশ্ব সাহিত্যের ছোটগল্প আমার প্রিয় বিষয় হয়ে উঠলো। ওয়াহিদ ভাই এক সন্ধ্যায় শুনালেন গী দ্য মোপাসার নেকলেস। এডগার এলেন পো, অস্কার ওয়াইন্ড, আন্তন চেকভ, কাফকা, এরনেষ্ট হেমিংওয়ে তখন পড়তেই আছি।

ছোটগল্প আমাকে আনন্দিত করে। আমার সময়গুলো কেটে যায় নিমিষেই যখন ছোটগল্প পড়ি। নিজে অনেক চেষ্টা করেছি লেখার কিন্তু যা লিখি তা শেষ পর্যন্ত কবিতার মতো হয়ে যায়। আমার মতে ছোটগল্প সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রাচীন ধাঁচ। উপন্যাস, কাহিনী, কাব্য, ইতিহাস, নাটক সবকিছুর মধ্যেই কিন্তু একটি বা একাধিক গল্প লুকিয়ে আছে। আর সেই অদেখা অভিজ্ঞানের প্রকাশ ছোটগল্পে সবচে সুস্বাদু। আমি বিশ্বাস করি।
———
কামরুল বসির
লন্ডন
২৫/১০/২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×