যদিও লেখার অভ্যাসটা নেই বললেই চলে, কিন্তু আজ মাঝরাতে নিরব একটি কক্ষে বসে বড় বেশি মাকে মনে পড়ছে, তাই মনে করলাম দু-চারটে কথা লিখি মা’কে নিয়ে, যদি মনটা একটু হালকা হয়।
আমি বাড়ীর বড় ছেলে... বংশের বড় ছেলে। গ্রামে জন্ম হলেও ছোট বেলা থেকে গ্রাম হতে দূরে থেকেছি। তাই যখন বাড়ীতে যেতাম তখন মা যে কি যতনে আমাকে আগলে রাখতো আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
আমি নিজের কাজগুলোকেও ভালভাবে করতে পারতাম না। কাপড় চোপড় তো না ধুইলে নয় তাই কষ্ট করে হলেও ধুইতে হত। গায়ে সাবান দিতাম বাট শরীর পরিস্কার পারতাম না.... নখগুলো কাটতে পারতাম না... তাই যখনই বাড়ীতে যেতাম তখন মা আমার শরীর সাবান দিয়ে পরিস্কার করে দিত, নখগুলো কেটে দিত।
আজ মা’র কাছ থেকে অনেক দূরে তারপরও মনটা যেন মায়ের কাছে পড়ে থাকে। কখনও কখনও মনে হয়... আহা যদি এক দৌড়ে ছুটে যেতে পারতাম মায়ের আঁচলে মুখটি লুকাতে পারতাম। মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলত : খিদে পেয়েছে তোর খোকা... সারাদিন না খেয়ে কোথায় ঘুরে বেড়াস?
আজ সেই দিনগুলোর কথা অসম্ভব মনে পড়ছে। মনে পড়ছে মায়ের আদর, মায়ের শাসন, মায়ের ভালবাসা। সব সবকিছু আজ যেন জমা হচ্ছে আমার মনে কিন্তু সেগুলো প্রকাশ করার ভাষা তো আমার জানা নেই। আমি তো পারি না আমার ক্ষুদ্র ভাষাজ্ঞান দিয়ে মায়ের স্মৃতিগুলোকে তুলে ধরতে। সীমাবদ্ধ জিনিস কখনও কি পারে সীমাহীনের ব্যাখ্যা দিতে? পারে না। আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্ক সীমাবদ্ধ আর মায়ের ভালবাসা তো অসীম, সীমাহীন... কিভাবে আমি তার কথাকে ভাষায় প্রকাশ করবো।
তবে একটি কথা পাঠকদেরকে বলতে পারি, যদি আমার মনের কথা জানতে চান তবে এক মুহুর্তের জন্য চোখ দু’টি বন্ধ করে মা’কে স্মরণ করুন। তাহলে আমার না বলা কথাগুলোর সবটাই আপনি জেনে যাবেন।
তবে মায়ের একটা কথা আমি কোনদিন, কোন ক্ষণই ভুলি না।
প্রায় ৫/৬ বছর আগে গ্রীস্মের ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম। তিনি একদিন বিকেলে আমার পাশে এসে বসে বললেন: খোক! তুমি জান কেন তোমাকে আমি এত আদর করি? কেন তোমাকে সবার চেয়ে বেশী ভালবাসি?
আমি বললাম: না তো মা।
মা বললেন: যখন আমি মারা যাব তখন তোমাকে আদর করার মত কেউ থাকবে না। তখন সবাই তোমার দিকে চেয়ে থাকবে.. কেননা তুমি বড়। তাই সেদিন যেন তুমি আদর-ভালবাসার অভাব অনুভব না কর তাই আমি তোমাকে অনেক বেশী আদর করি।
মহান আল্লাহ’র নিকট এ দোয়াই করি যেন: আল্লাহ আমাকে সেই দিন না দেখান যেদিন আমার মা আমার পাশে থাকবে না।
উত্সর্গ সেই মা’কে যিনি আমার জন্মের পূর্ব হতে আমাকে আগলে রেখেছেন তার ভালবাসার মাঝে।#