বৃষ্টি দিনে অন্যদের মন কেমন থাকে বা কেমন লাগে তা জানেনা মেঘলা। কিন্তু তার মন প্রথম বৃষ্টি দেখে উৎফুল্ল হলেও পরে খারাপ হয়ে যায়। এই যেমন এখন খুব মনমরা হয়ে আছে সে। কোন কিছুই ভাল লাগছেনা, মন বসছেনা অফিসের কাজে।
ডেস্ক থেকে উঠে যেয়ে তার ডান পাশেই যে বারান্দাটা সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। বারান্দাটা তার ভাল লাগে, ঝুল বারান্দা ৭তলার মধ্যে। সামনে কিছু গাছপালা আছে।
বারান্দাটা মেঘলাকে আরো যে কারণে টানে তা হল, উপরতলার ভাড়াটেদের মানিপ্ল্যাটের কিছু লতা বড় হয়ে এসে পড়েছে তাদের অফিসের বারান্দাতে। খুব যত্ন করে মেঘলা সেটিকে পেঁচিয়ে দিয়েছে তাদের বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে। প্রায় সকালে এসে পাতাগুলোতে হাত বুলায়, কখনো বা বিকেলে লতাগুলোকে নেড়েচেড়ে দেয়। এই এখন যেমন পাতাগুলোতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি স্পর্শ করছে।
"কি হইল খাওন কাম বাদ দিয়া ঐহানে গিয়া খাড়াইয়া রইসেন ক্যান?" পেছন থেকে বলল রঞ্জন। বারান্দার দরজার সাথেই তার ডেস্ক। সেও একই অফিসে কাজ করে সিআরএম হিসেবে। মেঘলার সাথে তার ভাল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মেঘলাও তাকে পছন্দ করে। সারাদিন দুজনের খুনসুটি লেগে থাকে। অল্পতে রেগে যায় মেঘলা, আগে এমন ছিলনা, এখন যত দিন যাচ্ছে ততই যেন এটা বাড়ছে। আর তাই ইচ্ছে করে রঞ্জন মেঘলাকে বিরক্ত করে, রাগায়।
মেঘলা শুনে কেবল একবার সবসময়ের মত নির্লিপ্ত হয়ে রঞ্জনের দিকে পেছন ফিরে তাকালো।
গ্লাসের ওপাশ থেকে রঞ্জন তার হাসি দিয়ে কিছুটা ভয় নিয়ে বলল, "বৃষ্টি তো শ্যাষ, এহনো এহানে কি করেন?"
মেঘলা রাগ নিয়ে বলল, "আমার ইচ্ছে তাই, আপনার কোন সমস্যা?"
আবারো হেসে রঞ্জন বলল, "কি কইলেন এইডা? সমস্যা তো আছেই, বারান্দার সব পানি গুলি পাড়াইয়া আমার জাগাডা ভিজাইয়া যাইবেন। এইডা সমস্যা না?"
মেঘলার এখন কিছু ভাললাগছেনা, এর সাথে খুনসুটি করতেও না। সে তার ঘাড় ফিরিয়ে আবারো মানিপ্ল্যান্টের দিকে তাকালো। এখনো মেঘলা করে আছে আকাশ, টিপটিপ ঝরছে বৃষ্টি।
মেঘলা কিছু না বলায় রঞ্জন আবারো তার কথা দিয়ে খোঁচাতে লাগল, "শুধু এই পাতা দেখলেই হইব? ঐ ব্যাডাগো কামগুলি শ্যাষ করতে হইব না?"
এইবার রাগ নিয়ে মেঘলা দু' কদম রঞ্জজনের কাছে যেয়ে বলল, "এই লোক, আপনার সমস্যাটা কি? হুম? শান্তিতে একটু থাকতে পারিনা আপনার জন্য।"
কার্য সিদ্ধিতে সফল এমন হাসি হাসতে হাসতে রঞ্জন বলল, "ও মা, আমি আবার কি করলাম?"
রঞ্জনের সামনের ডেস্কে বসা শান, সেও মুচকি হাসছে রঞ্জনের কথায়। তার দিকে তাকিয়ে রঞ্জন বলল, "বুঝছেন ভাই, মানুষের বালা করতে নাই"।
ততক্ষণে মেঘলা বারান্দা থেকে এসে কাজে বসেছে। তার বারবার মন চলে যাচ্ছে পেছনের কোন এক সময়ে। যে সময়গুলো আর কখনো ফিরে পাবার নয়। যে সময়গুলো প্রায় দিন তাকে এমনি করে ভেংগে দেয়, গলা টিপে ধরে।
চলবে....