পুরোনো সেই দিনের কথা (অষ্টম বারো)
97. কারো কাছে কি ৮২/৮৩ সালে স্কুলে পাঠ্য সমাজবিজ্ঞান বই আছে? আমরা সে সময় পড়েছিলাম বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ; পরে যখন জানলাম বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ তখন বুঝেছিলাম বাংলাদেশের অবস্থান উন্নীত হয়েছে। কিন্তু আজ ২০১৮ সালে এসে এ কি শিখছি? বাংলাদেশ ৩৫ বছর পর ৩৫ বছর পূর্বের স্থানে পৌঁছালো।
98. ’৮০ এর দশকেও সিংহভাগ বাসায় ফ্রিজ ছিল না, প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিন করতে হতো। মহিলারা বাজারে কমই যেতেন। কুরবানী ঈদের মাংস জ্বাল দিয়ে, রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হতো। আত্মীয় প্রতিবেশীদের বন্টন করে দেয়ারই প্রচেষ্টা থাকতো। এখন যেটা কমই হয়।
99. প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথম সেনাদল পাঠানো হয়; বিরোধিতা করে হরতাল করেছিল রাজনৈতিক দলগুলো।
100. ছেলেবেলায় আমদের খেলার উপকরণে বৈচিত্র কম ছিল। দেশী খেলনার মধ্যে ছিল কেরোসিনে চলা টিনের লঞ্চ, বারুদ-কাগজের গুলিসহ টিনের পিস্তল, বাঘের কাগজের মুখোস, সুঁতো বাঁধা প্লাস্টিকের ইদুঁর, সুঁতো বাঁধা কাগজের কুমীর, বেলুন বাঁশি, লাটিম, মার্বেল, ঘুড়ি ইত্যাদি।
101. প্রথম জেনারেশনের লিফটের ডোর হতো ডাবল কাঁচিগেটের মানে কলাপ্সিবল গেটের। এরপর পেয়েছিলাম বাসাবাড়ির এক পার্টের সদর দরজার মতো; খুলতো লিফটের বাইরের দিকে। ছোটো আকারের ওয়াল ফ্যান থাকতো মাথার উপরে। এখনো কিছু অফিসে এগুলো দেখা যায়।
102. এখন যেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এটাই প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমলে ছিল রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। শেরে বাংলা নগরের জাতীয় সংসদ ভবনে কার্যক্রম শুরুর আগে এটাই ছিল দেশের সংসদ ভবন।
103. কেরোসিন তেলের রঙ সাদা ছিল মানে পানি রঙের হতো। তখন ভেজাল হিসেবে তুলনামূলক দামী তেলে মেশানো হতো। ভেজালের প্রতিষেধক রূপে নীল রঙে রাঙ্গানো হয়।
104. এটলাস বাংলাদেশ তৈরি করতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২য় সাফ গেমসের মাস্কট ‘মিশুক’ এর নামে ত্রি-চক্রযান, মোটর সাইকেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হতো। এই বাহন এখনো ১/২টি ঢাকাতে দেখা যায়। যারা আজো চড়তে পারেন নি উঠে দেখতে পারেন।
105. বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে নতুনদের মধ্যে সালমান শাহ একমাত্র ‘পুরুষ’ নায়ক ছিলেন, কাঞ্চন ও মান্নাকে ব্যতিক্রম ধরে। মৌসুমী আর তার অভিনীত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মূল হিন্দি কেয়ামত সে কেয়ামত তক এর চেয়ে ভালো হয়েছিল। তার অকাল অনাকাংখিত মৃত্যু এদেশের চলচ্চিত্রকে পিছিয়ে দিয়েছে।
106. আমাদের সময় হরতালে দোকানপাট খুলতো না; রিকশা পর্যন্ত চলতো না। বেসরকারী অফিস-স্কুল বন্ধ থাকতো। ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চ এর সময় থেকে সব বদলে যেতে থাকে।
107. ঢাকা স্টেডিয়াম ফুটবল আর ক্রিকেট ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতো। ১৯৮৯ সালে এশিয়া কাপ ক্রিকেটেও আমরা ব্যানার, লাঠি, কাঁচের বোতল নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। সেবার কপিল দেব এসেছিল এলিফ্যান্ট রোডের বাটা দোকানে, পরে পাকিস্থানী কিছু খেলোয়াড়ও আসে। সে সময় ঢাকায় কোনো ব্রান্ড শো রুম ছিল না বলেই মনে পড়ছে।
108. ঢাকার মানুষ সফেদা ফল চিনতো না, লটকনও কোনো অর্থকরী ফল ছিল না, বিভিন্ন অপ্রচলিত ফল পাওয়া যেতো আজিমপুর অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে। অড়বরই, পানিয়াল, বেতফল, ডেউয়া, আরো কি সব যেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪১