প্রথম বারো
দ্বিতীয় বারো
25. প্রথম আগমণ সময়ে কম্পিউটার ছিল খুবই স্পর্শকাতর ইকুইপমেন্ট; এসি রুমে রাখতে হতো, জুতো পায়ে যেখানে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল।
26. লেখালেখির জন্যে কম্পিউটার সফটওয়ার ছিল ওয়ার্ডস্টার পরে এলো ওয়ার্ডপারফেক্ট। হিসাবনিকাশের জন্যে ব্যবহৃত হতো লোটাস১২৩। প্রোগ্রামিং-এ ছিল ডি-বেইস।
27. ডট প্রিন্টারই ছিল বেশি; প্রিন্টিং-এর সময় ভীষণ শব্দ করতো, লেজার প্রিন্টার শব্দ শোনা থাকে রক্ষা করে। একই সাথে ঝকঝকে পরিস্কার স্পষ্ট লেখা ছাপায়।
28. প্রথম সেল ফোন ছিল সিমেন্স-এর C 10, ১৯৯৮ সালে জিপির মোবাইল-টু-মোবাইল কানেকশন এর সিম পেতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়। পরে T&T মানে ল্যান্ড ফোনে কল করার সুবিধা কম খরচে দেয় সিটিসেল। আর সরকারী টেলিটকের সিমের জন্যে লটারী করা হয়; সুখের কথা তাতে নাম উঠেছিল।
29. বিচিত্রা, আনন্দবিচিত্রা, তারকালোক, খেলার জন্যে ক্রীড়াজগত, বর্তমান দিনকাল পাঠকপ্রিয় ছিল।
30. ঢাকার প্রথম দু’টি ফুট ওভারব্রিজ হলো ফার্মগেট ও নিউমার্কেটের কংক্রিটেরগুলো। আজও এ দু’টোই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
31. ইস্টার্ন প্লাজা এই শহরের প্রথম এসি মার্কেট। ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখতে মানুষ সেখানে যেতো। আগে ঢাকার পশ মার্কেট ছিল নিউমার্কেট। আজিজ ক্লথ স্টোরে নিউ মার্কেট গেলে যাওয়া হতো।
32. এরশাদের সময় প্রথম ভিআইপি সড়ক চালু হয় শাহবাগ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট হয়ে কুর্মিটোলা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রথম নাম ছিল স্থানের নামেই; পরে প্রেসিডেন্ট জিয়ার নামে বদলে গিয়েছিল।
33. ১৯৮৮ সালের বন্যায় ডুবে ছিল বনানী-গুলশান-রামপুরা-মিরপুর-মোহাম্মদপুর-উত্তরাসহ ঢাকার অধিকাংশ স্থান। ২ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা কলেজে ভর্তি পরীক্ষা ছিল, দুপুরে তিতুমীর কলেজে আর বিকালে ঢাকা সিটি কলেজে। সন্ধ্যার আগে আগে হলো প্রচন্ড বৃষ্টি। সেই বছর বেশ বৃষ্টি পড়েছিল। বাসায় ফিরে দেখি বন্যা দুর্গত আত্মীয়রা আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় প্রতি বাসায় আত্মীয়রা এসে উঠেছিলেন, কয়েক মাস বয়সী শিশুসহ ৩৪ জন, ছিলেন ২২ দিন। ঢাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রয়োজনীয়তা সেবার এরশাদ সরকার ভালোভাবে উপলব্ধি করে। আমরা পুরানা ঢাকার বন্যা কবলিতদের জন্যে আটার রুটি, কাপড় সংগ্রহ করি, লায়নস ক্লাবের আহ্বানে প্রতি ঘর থেকে প্রতিদিন ২০টি করে আটার রুটি সংগ্রহ করি। অধিকাংশ পরিবার আগ্রহের সাথে সহযোগিতা করেছিলেন। কলেজের বাংলা টিচার শামীম আজাদ-এর আহ্বানে ধানমন্ডিতে আমরা কিছু ছেলে ও মেয়ে খাবার স্যালাইন বানাতাম বিকালে।
34. রাতের ঢাকায় স্ট্রিট লাইট হিসেবে জ্বলতো টিউবলাইট, সোডিয়াম লাইট ঝুলিয়ে প্রেসিডেন্ট এরশাদ কালোরাতকে হলুদ করে তুলে। নতুন আলোতে ঢাকা অচেনা নগরী মনে হয়েছিল।
35. ফুটবলের স্বর্ণযুগ ছিল তখন, ক্রিকেট ছিল মৌসুমী খেলা। আবাহনী-মোহামেডানের খেলা যেন যুদ্ধ; আবাহনী হেরে গেলে পরের দিন স্কুলে তো বটেই বিকালে মাঠে যেতেও ইচ্ছা করতো না। লীগের খেলায় দল জিতলে আবাহনীর সমর্থক গোষ্ঠী বিজয় মিছিল নিয়ে ধানমন্ডিতে ফিরতো। মিছিলের চিৎকার শোনার জন্যে উদগ্রীব থাকতাম।
36. স্টেডিয়ামে সাধারণ গ্যালারিতে চেয়ারের ব্যবস্থা ছিল না, গাদাগাদি করেই দর্শক বসতো, মহিলারা কমই খেলা দেখতে যেতেন। খেলার উত্তেজনায় সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হতো নিয়মিত। একবার আবাহনীর কয়েকজন খেলোয়াড়কে হাজতেও যেতে হয়েছিল। টয়লেটের অপর্যাপ্ততার জন্যে উপরের গ্যালারী উপচে প্রস্রাব-বন্যা ঢাকা স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানী-ক্রেতার মাথায় পড়তো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২