কয়েকদিন আগে আমার এক আত্মীয়ের ফেসবুক পোস্টে দেখলাম উনি লিখেছেন এক সময় নাকি উনি বড়দের ভয়ে পেতেন এখন ভয় পান ছোটদের। আসলে এটাই স্বাভাবিক ।উনার মতো অনেকেই এখন ঠিক কি করে উঠবেন বুজতে পারছেন না। মন্ত্রী সভায় প্রায় সবাই বয়সে কাঁচা। বই মেলায় লেখকদের বেশির ভাগ এখনো ইউনিভার্সিটি শেষ করেনি। যেদিকে তাকানো যায় সে দিকেই তরুনের জয় জয়কার । ভয় পাবারই কথা। এতো তরুণ আসে পাশে পরিণত মানুষ জনরা একটু ভয় পাবেই। কিন্তু সমস্যা হলো তাদের এই ভয় জাতীয় ডিপ্রেশন দূর করার জন্য কোন মোটভাটিনাল স্পিকার নেই দেশে। অথবা তারা আসলে কি করবেন সেটাও বলে দেবার কেউ নেই।
দেশের নামকরা মোটিভেশনাল স্পীকারের ফলোয়াররা ডিপ্রেশনের রোগী । দেশের নামী অনলাইন শিক্ষক নিজে অপ্রাপ্ত বয়স্ক। যে বয়সে তার হেসে খেলে বেড়াবার কথা সেই বয়সে পাঞ্জাবি পড়ে দাড়ি রেখে পরিণত সেজে আছে । আর যারা পরিণত তারা সমানে ফেসবুক একাউন্ট খুলছে আর অপরিণত পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে । গেলো সপ্তাহে জুকারবার্গ তরুণদের ফেসবুক মুখী করার কথা বললেন । মানে হলো ফেসবুকে এখন তরুণদের চেয়ে পরিণত মানুষের সংখ্যা বেশ উদ্দ্যেগ জনক ।
তরুণরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাবে এতে কোন দ্বিধা নেই। কিন্তু যে বয়সে হিমালয় জয় করার কথা সেই বয়সে দেশের মতো ভারী একটা জিনিস মাথায় নিয়ে এই কিশোর তরুণরা কিইবা করতে পারে। ধরলাম কিছু একটা করেই ফেললো। তাহলে এভারেস্ট জয় করবে কে ? ষাটোর্ধ পরিণত কেউ ?
পশ্চিমের দেশগুলোতে মানুষজন নিজেদের বয়স অনুযায়ী কাজ কর্ম করে। যেমন ইউনিভার্সিটি লেভেলের একজনের স্বপ্ন থাকে বিশ্ব ভ্রমণের বা নিজের একটা স্টার্টআপ তৈরী করার। বয়স্ক মানুষ জনের ইচ্ছে গুলো টিভি দেখা চার্চে যাওয়া এই সব। মাঝে মধ্যে নিজের আত্ত্বজীবনী লেখা।আমাদের দেশে জীবন ঠিকভাবে শুরু করার আগেই আত্ত্বজীবনী লেখা এখন সময়ের ব্যাপার। বই মেলার দিকে তাকালেই দেখা যায়। যার জীবন এখনো মাঝপথে সেও নিজের জীবন কথা নিয়ে ব্যস্ত। আর জাফর ইকবাল স্যারের মতো লোকজন মুখ লুকিয়ে চলে এদিক সেদিক । স্বাভাবিক । উনাদের চেনা বইমেলা আর এখনকার বই মেলায় বেশ পার্থ্যক্য।
ভারতের রাজনীতিতে রাহুল গান্ধী পাপ্পু নাম পরিচিত। গত দশ বছর ধরে পাঞ্জাবি পড়ে দাড়ি রেখে এখনো সংবাদ সম্মেলনে গেলো সবাই পাপ্পু নামেই ডাকে। কেন যেন কোন ভাবেই রাহুল গান্ধীকে পরিণত করা যাচ্ছে না। এই কারণেই বিজেপির মোদী এখনো বেশ শক্ত অবস্থানে। তাহলে রাহুল গান্ধী কি কখনোই পরিণত হবার নয় ? আসলে যার ডাক নাম পাপ্পু তাকে পরিণত করা বেশ দুস্কর। অপরিণত বয়সে পরিনিত আচরণের ফল।
দেশে এই মুহূর্তে তরুণদের যেমন ফেসবুক ছাড়া আর কোন ধরণের একটিভিটি নেই তেমনি পরিণত মানুষদেরও কিছু করার নেই । তাই সবাই মিলেমিশে সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় ধারণ করে চলছে । কয়েকদিন পর মেট্রো ট্রেন আসবে। মানুষের সময় বাঁচবে। আর সবাই মিলে মিশে বেঁচে যাওয়া সময়টুকু ফেসবুকে কাটিয়ে দিবে।
তরুণদের ঠিক কি করা উচিত বা উচিত নয় তা ঠিক করছে তরুণরা নিজে। রাষ্ট্র যেখানে সবাইকে মোটিভেশন দিতে পারে সেখানে তরুণদের থেকে শিখছে রাষ্ট্র । এটাই কি হবার ছিল নাকি আমরা সবাই অপরিণত রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছি । তবে আমার দেখা মতে পৃথিবীর কোন দেশে অপরিণত কেউ রাষ্ট্রকে পরিণত রূপ দিতে পারেনি । আমরা যদি পারি তবে এটাই হবে প্রথম।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:২৫