ব্রিটেনে ৯ বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের সিটিজেনশিপ নামের একটা কোর্স করানো হয়। এই কোর্সের মূল বিষয় হলো সরকার কি , কিভাবে সরকার গঠন হয় , কিভাবে পুলিশ কাজ করে এই সব। ভাবার বিষয় হলো এই অতি উচ্চমার্গীয় বিষয় বস্তূ এতো কম বয়েসের একটা বাচ্চাকে এরা কেন শেখায় ? ভেবে কোনো লাভ নেই। কারণ এরা যেহেতু শেখায় হয়তো এর ভালো কোন কারণ থাকতে পারে। আমাদের দেশে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গুলোর প্রায় সবকটি ব্রিটেনের কেমব্রিজ বা এডেক্সেল সিলেবাস মেনে চলে। কিন্তু এদের কাউকে কখনো এই সিটিজেনশিপ কোর্সটি পড়াতে দেখিনি বা আমার এখনো জানার সৌভাগ্য হয়নি। আর পড়ানোও হয়তো সম্ভব না। কারণ সিটিজেনশিপ কোর্সটি ব্রিটেনের নিজস্ব নিয়ম নীতি দিয়ে তৈরী। আমাদের দেশের সরকার বা পুলিশ কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে এখনো কোন কোর্স তৈরী হয়ন।
প্রত্যেক বাবা মায়ের ইচ্ছে থাকে সন্তানকে অতি উচ্চমার্গীয় জিনিস পত্র দিয়ে ঢেকে দিতে। এতে সন্তানের ভবিষ্যত আলোকিত হবে।এইরকমই অনেকটা মনে করেন সবাই। তাই অনেকে সরকারি প্রাইমারী স্কুলের বাইরে গিয়ে সন্তানদের জমা দিয়ে আসেন ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে। আমিও এর বাইরের কেউ না। ছেলে মেয়ে ফটফট করে ইংরেজি বলবে। এটা কে না চায় ? সুতরাং আমিও আমার ৭ বছরের মেয়েকে জমা দিলাম ঐ রকম একটা স্কুলে। জমা খরচের হিসাবে একটু টানাটানি হলেও মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি। তবে স্কুলে কি পড়াচ্ছে এই ব্যাপারটা স্কুলের উপর ছেড়ে না দিয়ে আমি নিজে বোঝার চেষ্টা করি। যেটুকু স্কুলে পড়ানো হয় না আমি আর আমার স্ত্রী মিলে ঐটুকুন বাচ্চাকে পড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। অনেকটা হোম স্কুলিং এর মতো একটা ব্যাপার।
কজন বাবা মা আসলে জানেন তাদের ছেলেমেয়েরা কি পড়ছে ? যা পড়ছে তা আদৌ কোন কাজে আসবে কিনা ? অনেকেরই হয়তো এইসব নিয়ে ভাবার সময় খুব একটা নেই। মোটা মাইনের স্কুলের ফি ভরতেই হিমশিম। ফলাফল নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর সন্তান বোবা মাস্তান ধরণের হয়ে উঠে। কারণ সে যা স্কুলে শিখছে বাইরের জগতে ঠিক তার উল্টো দেখছে। যেমন তাকে স্কুলে সিটিজেনশিপ কোর্সে শিখানো হলো পুলিশ সবসময় জনগণের সাহায্য করে। আর বাস্তবে দেখলো জনগণ সবসময় পুলিশকে ভয় পায়। সুতারং তার বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না ধরণের অবস্থা হয়। ধীরে ধীরে এই সন্তানদের দুরুত্ব বাড়তে থাকে বাবা মায়ের সাথে। এবং রাষ্ট্রের সাথে । কারণ তাদের সিটিজেনশিপ কোর্সটা আসলে ব্রিটেনে বসবাস করা সন্তানদের জন্য। নিতান্তই ভুল বসত তাকে পড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
শুধু সিটিজেনশিপ কোর্স না প্রায় সব ধরণের সিলেবাসই অনেকটা এইরকম। সিলেবাস ডাউনলোড করা যতটা সহজ ঠিক ততটা কঠিন তা বুঝিয়ে পড়ানো। লন্ডন আমেরিকার প্রাইমারী স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ একজন শিক্ষক যদি সিলেবাস না বোঝাতে পারে ছাত্ররা কখনোই তা বুঝতে পারবে না। আমাদের দেশের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর বেশীর ভাগ শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্রদের বাবা মা। স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মা রা চাইলেই স্কুলের ভিতরে শিক্ষক হয়ে যেতে পারেন।
আমাদের নিজেদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি বেশ পরিপক্ক। আপনি যদি আমাদের দেশের প্রাইমারী সিলেবাস নিয়ে বসেন দেখবেন একেবারে ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড সিলেবাস। হুবহু একই রকম শিক্ষা নীতি। এরপরও বাবা মা রা শুধুমাত্র পরিবেশের কথা চিন্তা করে সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করান। ফটফট করে ইংরেজি বলা আর বাংলাতে বুঝে বুঝে শিক্ষার মাঝে বিশাল একটা পার্থক্য আছে । এটা সবাই জানলেও মানতে চায়না কেউ।
আমার লেখায় হয়তো কিঞ্চিৎ রাগবোধ হতে পারে। তবে একটা বাস্তব পরীক্ষা করে ব্যাপারটা আপনি নিজে বুঝে নিতে পারেন। একটা রশি বা সুতোকে তালগোল পাকিয়ে আপনার সন্তানকে বলুন ঐ তালগোল ঠিক করে দিতে। পরিষ্কার বুঝে যাবেন গন্ডগোল কোথায়। আপনার সন্তান যদি ফটফট ইংরেজি বলে তাহলে দেখবেন আপনার তালগোল পাকানো সুতোকে আরো তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। আর একই জিনিস যদি সমবয়সী বাংলাতে পড়া কাউকে দেন দেখবেন সুতোর জট খুলে ফেলবে নিমিষেই। কারণটা পরিষ্কার। ভাসা ভাসা ব্রিটিশ সিলেবাসের সন্তানটার ডিটেইলিং করার ক্ষমতা অনেক কম । কারণ তাকে স্কুলে হয়তো অত ডিটেল করে কিছু পড়াচ্ছে না । একবার ভাবুন তাহলে কি শিখছে আপনার সন্তান ?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৪৫