হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন " যদি শিক্ষার পেছনে খরচ করতে না পারো তবে অশিক্ষিত থাকতে পারো।" ভদ্রলোকের নাম ডেরেক বক। নিতান্তই বোকা ধরণের উক্তি। অন্তত আমাদের দেশের জন্য । তবে ভাগ্য ভালো উনি হার্ভার্ড এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নইলে এতক্ষনে উনার ভয়াবহ অবস্থা হতো। আমেরিকা বা ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষা লোন নির্ভর। মানে কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হলে ছাত্রদের হয় মেধা দিয়ে স্কলারশিপ নিতে হয় নাহয় লোন নিয়ে টুইশন ফি ভরতে হয়। এই লোন এর টাকা ছাত্ররা যখন লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে ঢুকে তখন মাসে মাসে অল্প অল্প করে শোধ করে। আর চাকরি না থাকলে না দিলেও চলে। মোটামুটি এই হলো উন্নত দেশের উচ্চশিক্ষার অর্থনীত।
আমাদের দেশে প্রায় সব সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয় একেবারে ফ্রি। মানে তেমন কোনো টাকা পয়সা লাগে না। ফলাফল ১৫ টাকার ডাল ভাত আর ৩৫ টাকার বিছানা পাতি। ঠিক কি কারণে সরকার ১৫ টাকা্য় ভাত খাওয়ায় আর কি কারণে ছাত্ররা সেই ভাত খায় আমার জানা নেই । যেখানে মাথা পিছু আয় আমাদের হাজার ডলারের উপর। ছাত্রদের লোন নিয়ে লেখাপড়া করার কথা বলার মতো সাহস খোদ সরকারের আছে কিনা জানা নেই। অথচ এ নিয়ে কেউ কথা বলতেও রাজি না। শিক্ষা মৌলিক অধিকার। কিন্তু কোন পর্যায়ের শিক্ষা পর্যন্ত এই মৌলিকতার ব্যাপ্তি তা কোথাও লেখা নেই। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা নিয়ে যেখানে সরকার হিমশিম খায় তখন উচ্চশিক্ষার পেছনে সরকার ঠিক কি কারণে টাকা লগ্নি করছে তা কারোরই জানা নেই। আমরা শুধু এটুকু জানি লেখাপড়া মানে ফ্রি।
উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্রদের লোন নেয়া বেশ যোক্তিক একটা ব্যাপার। এতে ছাত্ররা এক ধরণের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যায় । তাদের মাথায় থাকে চাকরি করে এই দেনা পরিশোধ করতে হবে। অন্তত আমেরিকার মতো দেশে সরকার এমনটাই ভাবে। তবে এই ভাবনার সাথে আমার আপনার ভাবনার মিল নাও থাকতে পারে। যার ফলাফল হয়তো আমাদের অবাস্তব মুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। যেখানে ঘরে ঘরে এম বি এ পাশ করা ছাত্ররা বেকার। আমাদের দেশে যত এম বি এ পাশ করা ছাত্র বেকার আছে তা আমেরিকার মোট পাশ করা এম বি এ ছাত্রদের থেকে অনেক বেশি। যাই হোক যেহেতু ফ্রি তাই এম বি এ করা কোনো ব্যাপার না।
মৌলিক অধিকার এর সংজ্ঞা অনেক আগেই পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষা স্বাস্থ্য এই সব মৌলিক অধিকার ফ্রি তে পাবার সংজ্ঞা আদতে কোথাও ছিল কিনা জানা নেই। কারণ যে সব দেশের অনুকরণে আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সাজাই এদের কারোরই শিক্ষা বা স্বাথ্য কোনোটাই ফ্রি না। আমেরিকায় চিকিৎসা নিতে হলে ইন্সুরেন্স লাগে। নইলে আপনি মারা গেলেই কেউ টু শব্দটাও করবে না। হয়তো আমরা মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা বুজতে ভুল করেছিলাম এক সময়।
ভুল সবারই হয়। তবে ভুল শিকার করে পরিবর্তন না করলে আরো ভয়াবহ ভুল হয়ে যেতে পারে। সরকার যে পরিমান অর্থ ১৫ টাকার ভাতের পেছনে খরচ করছে তা কতটা যোক্তিক ভাবার সময় এসেছে। কারণ ১৫ টাকার ডাল ভাত কখনই মৌলিক অধিকার হতে পারে না। আর সরকার কেন উচ্চশিক্ষার পেছনে টাকা লগ্নি করবে আর উচ্চশিক্ষিত ছাত্ররা বিদেশে এসে ট্যাক্সি চালাবে তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। সরকারের ফ্রি সার্ভিস নিয়ে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ইউরোপে আমেরিকার ভিসা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জামালেই দায়িত্ত্ব শেষ হয়ে যায় না। আজকে যদি শিক্ষা লোণের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে এই সব ছাত্ররা বিদেশে এসে ট্যাক্সি চালানোর আগে অন্তত একবার ভাবতো। অথবা বিদেশে ভিসা পাবার আগে তাকে এই লোন শোধ করে আসতে হতো। খুব সম্ভব এটাই সরকারের মৌলিক অধিকার। সরকার তার লগ্নি করা অর্থ ফেরত চাইতেই পারেন। কারণ এই লগ্নি কৃত অর্থ আমার আপনার ট্যাক্স এর টাকা।
তারমানে ঘুরে ফিরে আমি আর আপনি মিলে একটা উচ্চশিক্ষিত জাতি তৈরী করছি যারা ভালো করে ইংরেজিও বলতে পারছে না আর যাদের বেশির ভাগের স্বপ্ন নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ট্যাক্সি চালানো দিয়ে শেষ হয়। নিউ ইয়র্কে ট্যাক্সি চালাতে এম বি এ পাশ করতে হয় না। ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেই চলে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের উচিত ছাত্রদের নানা রকমের অপশন দেয়া। যেমন মেধা . ছাত্র লোন অথবা অন্য কিছু। কিন্তু কোনোভাবেই ফ্রি সার্ভিস দেয়া উচিত না। ছাত্রদের ধ্যান ধারণাই হয়ে যাচ্ছে সব কিছুই ফ্রি আর সরকার ফ্রি দিতে বাধ্য। শুধু তাই নয় চাকরি ক্ষেত্রে নতুন কোটার ব্যবস্থা করলে আরো ভালো। যেমন যারা লোন নিয়ে পড়বে তাদের জন্য আলাদা কোটা। কারণ এই ছাত্ররা অন্তত অন্যদের চেয়ে একটা ভালো চাকরির দাবিদার। কারণ তার চাকরি হলেই সরকার তার লগ্নি করা টাকা ফেরত পাবে।
এভাবে ভাবা কি রীতিমতো অন্যায় ? হয়তো অনেকের কাছে। কিন্তু এতো আমার নিজের ভাবনা না। সারা পৃথিবী চলছে এই নিয়মে। তাহলে আমাদের চলতে বাধা কোথায় ? দ্বিমত থাকতেই পারে। অনেক বছরের ১৫ টাকার ভাতের মেনু এক দিনে পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে এই ভাতের মেনু পরিবর্তন খুবই জরুরি। নাহয় অপুষ্টিতে উচ্চ শিক্ষিত বেকার ছাত্ররা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৪৯