বছর খানেক আগেও আরবদের জন্য আমাদের মায়া ছিল বেশ প্রখর । কোনো এক অদ্ভুত কারণে এই মায়া এখন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। একসময় ফিলিস্তিনে কেউ মারা গেলে ফেসবুকে ঝড় উঠতো। এখন খুব একটা এইরকম হয়না। এর কারণও আছে। আমরা হয়তো অনেক বেশি নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। বা আরবদের ৭০ বছর ধরে চলা এইসব আর খুব একটা মনে টানে না। মনে না টানাই স্বাভাবিক। আর কত ? অদ্ভুত আরবদের কোনোভাবেই যেন চেনা যাচ্ছে না। সৌদি প্রিন্স গত তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ। অনেকে বলছেন মারা গেছে। একটা প্রিন্স মারা যাবে আর দেশের কেউ জানবে না ? সম্ভব। এটা আরব রাজাদের দেশে সম্ভব। অদ্ভুত তাদের সব রীতি নিয়ম।
গত বছর সৌদি এক প্রিন্সকে বাদশা আটক করে। ভিডিওতে দেখা যায় প্রিন্স চিৎকার করে বলছে " আমেরিকান এম্বাসিকে খবর দাও " ভাববার বিষয়। আমাকে আপনাকে যদি কেউ জোর করে তুলে নিতে আসে আমরা কি বলবো ? যাই হোক প্রিন্সদের নিরাপত্তা হয়তো অন্যদের হাতে। পুরো আরব জুড়ে অস্থির অবস্থা। কেউ কাউকে মানতে চাইছে না। এই সময় ফিলিস্তিনে ৫৫ জনের মতো আরব নিহত হলো। কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমেরিকান এম্বেসী জেরুজালেমে আসলো। এটা আমার আপনার কি সমস্যার কারণ হতে পারে। অথবা ফিলিস্তিনিদেরও ঠিক কি কারণে মাথা ব্যথা ? সমস্যা গুলু একেবারেই নিজস্ব। বাইরের দুনিয়াতে এর প্রভাব খুবই ক্ষীণ।
আরব আমিরাতের প্রিন্সেস পালিয়ে ভারতে চলে আসলো। বিশেষ এক বাহিনী প্রিন্সেসকে আটক করে আবার আরব আমিরাতে নিয়ে গেলো। এখন প্রিন্সেস কোথায় আছে কেউ জানে না। অবাক ব্যাপার।
আজকে বাংলা ট্রিবিউন একটা লেখা পড়লাম যার শিরোনাম " কোনো মেয়ে যাতে সৌদি আরব না যায় "। আলবৎ। এই সময় মেয়ে না ছেলেদেরও আরব সীমানার ধারে কাছে না ঘেঁষা উচিত। কোথাকার প্লেন কোথায় গিয়ে ল্যান্ড করে কেউ জানে না। দেখা গেলো আপনি ঢাকা থেকে রিয়াদ এর উদ্দেশে উঠেছেন। প্লেন গিয়ে নামলো তেল আবিব। হতেই পারে।
আরবদের সাথে আমাদের সম্পর্কের প্রধান উৎস ধর্ম। সৌদি প্রিন্স বর্তমানে মক্কা মদিনাকে অনেকটা ভ্যাটিকান সিটির মতো করে তৈরী করতে চাচ্ছেন। মহৎ উদ্যোগ। যদি তাই হয় তাহলে আমরা শুধু মক্কা মদিনা নিয়েই ভাববো। বাকি আরব সমাজে কি হচ্ছে তা নিয়ে ভাববার খুব একটা প্রয়োজন নেই। আর আরবরা যে খুব একটা আমাদের ভাবনা নিয়ে চিন্তা করা তাও না। তাদের আপদ বিপদের সঙ্গী পচ্ছিমারা। সুতারং আমাদের ফেসবুকে ঝড় বা কান্না কাটি খুব একটা আরবদের কানে যায় কিনা জানা নেই।
সত্যিকারের আরবদের সম্পর্কে জানতে ইউটিউব বা গুগল সার্চ দিতে পারেন। আমি নিশ্চিত বেশিক্ষন সহ্য করতে পারবেন না। ধর্মের সাথে যদি মিশিয়ে না ফেলেন তবে আপনার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসতে সর্বোচ্চ মিনিট খানেক সময় লাগতে পারে। আর যেহেতু মক্কা মদিনা বা ইসলাম তর্কের উর্ধে মিশিয়ে না ফেলাটাই উত্তম।
প্রধানমন্ত্রী গেলো মাসে সৌদি আরব গেলেন। নানান রকম সামরিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলো। তবে প্রধানমন্ত্রী অতন্ত্য দক্ষতার সাথে যা করলেন তা হলো খুব স্বাভাবিক ভাবে এড়িয়ে গেলেন সম্মুখ সামরিক সাহায্যের আবেদনটি। এই মুহূর্তে আরবদের সাথে যে কোনো চুক্তিই বেশ বিপদজনক। ৭০ বছর ধরে আরবরা যে দেশটিকে স্বীকার করেনি। আজকে সেটা আরবদের প্রধান বন্ধু। এখন বাংলাদেশ কি করবে। বন্ধুত্ব পাতবে ?
আপনি কি করবেন কাল সকালে উঠে যদি দেখেন সৌদি প্রিন্স ইসরালাইদের সাথে বসে চা কফি খাচ্ছে ? ঠিক এই কারণেই প্রিন্স মক্কা মদিনাকে আলাদা করে ধর্ম নির্ভর একটা শহর করে তুলতে চাইছে। যার অর্থ হলো প্রিন্স চা পানি খেলেও যাতে আপনি না খেয়ে থাকতে পারেন তার জন্য একটা ব্যবস্থা। ভালো। এই ব্যবস্থাটা বেশ পোক্ত। আর ঠিক এই কারণেই আমাদের আর তেমন একটা আগ্রহ নেই আরব বিশ্ব নিয়ে। নিজেদের নেকি নিয়ে চিন্তা করা মানেই যে আরবদের নিয়ে চিন্তা তা কিন্তু না। এটা হয়তো দেরীতে হলেও আমরা এখন বুজতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৬