এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা বিশ্বাস করে পৃথিবী গোলাকার না। সমতল। এই শ্রেণীর সংখ্যাও খুব একটা কম না। ইউরোপ আমেরিকাতে তাদের নিজ্বস্য অফিস আছে। মাঝে মাঝে তারা আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথেও সাক্ষাত করে। এরা নিজেদের ফ্লাট আর্থ থিওরির সমর্থক বলে দাবী করেন। এই উদ্ভট শ্রেণীর মানুষগুলোকে নিয়ে লেখার কারণ হলো এরা পৃথিবীর অনেক দ্রুব সত্যকে অস্বীকার করে আর সাথে সাথে এ নিয়ে অতি জ্ঞান গর্ব যুক্তি তর্কে অবতীর্ণ হতে পারে। এই মহাজ্ঞানী শ্রেণীর একটা বিশ্যাস হলো পৃথিবী থেকে কখনো কোন কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে উঠেনি। উঠার কোন কারণও নেই। যেহেতু এদের পৃথিবী সমতল সুতরাং মহাকাশ বলেও এদের কাছে কিছু নেই।
দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ইতিমধ্যে মহাকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। সবার চোখের সামনে দিয়ে আকাশ ফুঁড়ে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উঠলেও দেশের একটা শ্রেণী এখনো কোন এক অদ্ভুত কারণে ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছেন না। না পারারই কথা। মানা বা না মানা যেহেতু নিজের উপর তাই তারা না মানতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দেশীয় এই শ্রেণীটির কাছে আমাদের প্রথম স্যাটেলাইটটি নিয়ে তেমন একটা কন্সপিরেসি থিওরী নেই। বা এখনো তারা বানিয়ে উঠতে পারছেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলছেন " আগে যাক, মহাকাশের আসে পাশে ঘুরুক , এরপর দেখা যাবে " উনি ঠিক কি দেখবেন খালি চোখে আমার জানা নেই। তবে সমতল পৃথিবীর ধারণা উনার ক্ষেত্রে হয়তো বেশ প্রযোজ্য।
সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক তরুণ নানান ভাবে তাচ্ছিল্লের পোস্ট দিচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট নিয়ে। দিতেই পারে। ফেসবুকে পোস্ট দিতে খুব একটা সমস্যা থাকার কথা না। কিন্তু সমস্যা হলো এরা কেউই যথাযত যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেনা কিভাবে নিজেদের সমর্থন করবে। তাদের জন্য হয়তো সমতল পৃথিবীর ধারণা। কারণ পৃথিবী সমতল এটা মেনে নিলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
জ্ঞানের পরিসীমার শেষ নেই। তবে জ্ঞানের সাথে যদি ঘৃণা যোগ হয় তবে তার সীমা স্বাভাবিক ভাবেই বেশ সীমিত। একটা স্যাটেলাইট উঠবে আকাশে। আমরা এর সুফল ভোগ করবো। সবাই মিলে আনন্দ করবো। এটাই স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক আচরণ থাকতেই পারে। যারা আনন্দ করছে তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের আচরণ হতেই পারে। তাই বলে পৃথিবী সমতল স্বীকার করে নেয়া ঠিক হবে কিনা তা আপাতত অবিস্বাসীরাই ভালো বলতে পারবেন।
বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী উভয় পক্ষের যুক্তি থাকতে পারে। যেমন যারা বিশ্বাস করে পৃথিবী সমতল তাদের কাছে এর অকাট্য যুক্তি আছে। এমন সব যুক্তি যা আসলেই খণ্ডানো সম্ভব না। যেমন ধরুন আপনি সাগর পারে দাঁড়িয়ে আছেন। দূর থেকে একটা জাহাজ দেখছেন এগিয়ে আসছে। এক্ষত্রে পৃথিবী যদি গোল হয় তাহলে প্রথমে আপনি জাহাজের মাস্তুল দেখবেন এরপর ধীরে দিয়ে সমস্ত জাহাজ। কিন্তু আদতে জাহাজটি খুব ছোট থেকে আস্তে আস্তে আপনার দিকে বড় হতে থাকবে। বিশ্বাস না হলে একবার সাগর পারে গিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এই রকম ডজন খানেক অকাট্য যুক্তি নির্ভর এই শ্রেণীর বিশেষ গুন্ এরা সবাই কন্সপেরিসি থিওরিতে বিশ্বাস করে। দুনিয়ার সহজ সরল সমীকরণ এরা সহজে মেনে নিতে পারেনা ।
আমাদের আসে পাশেই এই রকম অনেকে আছেন যারা সহজভাবে কোন কিছু মেনে নিতে পারে না। এই মুহূর্তে অনেকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশের নিজের একটা স্যাটেলাইট কিভাবে মহাকাশে যায় ? তাদের জন্য যুক্তির প্রয়োজন। যুক্তিবাদী এই মানুষ গুলু এই মুহূর্তে যথেষ্ট যুক্তির অভাবে আছেন। আসুন তাদের জানাই পৃথিবী গোল নয়। সমতল। আর এর পেছনে অনেক যুক্তি আছে। দেখবেন হয়তো তারা এটাও বিশ্বাস করে বসবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ১:২৬