মানুষটা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। বাইরে পুরো দেশ দুই ভাগ। পক্ষে বিপক্ষে। আমি নিশ্চিত এর মাঝেও যদি ঘাতক ফয়জুরকে জাফর ইকবাল স্যারের সামনে এনে দেয়া হয় দেখবেন উনি বেশ হাসি মুখে কথা বলবেন। হয়তো মিনিট পাঁচেকের কথায় ফাউজুর ভেউ ভেউ করে কান্না করে স্যারের পা ধরে ক্ষমা চাইবে। অসম্ভব মৌলিক মানুষকে কখনই অংকের মৌলিক সংখ্যার মতো ভাগ দেয়া যায় না। শুধু গুণিতক দিয়ে বাড়িয়ে নেয়া যায়।
যে মানুষটি ধানের শীষ ঘৃণা করে সেও দু বেলা ভাত খায় আর যিনি নৌকা প্রতীক ঘৃণা করেন উনিও নৌকাতে চড়তে ইতস্তত বোধ করেন না। কারণ এই দুইটিই আমাদের জন্য মৌলিক একটা বাপ্যার। মৌলিক বাপ্যারটাই এমন।
যে মানুষ গুলোর কথা চিন্তা করলে বুক ধড়ফড় করে উঠে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় তারাই আমাদের জন্য মৌলিক। একবার চোখ বন্ধ করে পরিচিত সবার মুখ মনে করার চেষ্টা করুন। দেখবেন কিছু মৌলিক মানুষের চেহারার সাথে আপনার বুক ধড়ফড় করে উঠছে। যেভাবেই নাম দেন সম্পর্কের এটাই মৌলিক মানুষের রূপ। কারো নিজের স্ত্রীর কথা মনে পড়লে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। কারো আপনজনের কথা মনে উঠলে ভেউ ভেউ করে কান্না আসতে পারে। আবার অপরিচিত অনেকের সাথেও এমন হতে পারে। আমার যেমন ক্যাটরিনা কাইফ এর কথা মনে পড়লে হাত পা ঘামতে থাকে। প্রেসার বেড়ে যায়। এরকম অনেকেরই হয়তো হয়। এটা দোষের কিছু না। মৌলিক মানুষদের নিয়ে এমন হতেই পারে।
ছুরিকাঘাতের খবরটা দেখার তৃতীয় দিন বুজতে পারলাম আমার বুক কেঁপেছিল। ভয় পেয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি নিজের সব লেখার কথা মনে করলাম। কোথাও কোন সোলাইমান জাতীয় কিছু ছিল কিনা। যেভাবেই হোক বুকটা কেঁপেছিল। বুঝলাম জাফর ইকবাল স্যার মৌলিক একজন মানুষ। অন্তত আমার জন্য।
ফেসবুকে নানান রকমের ভক্তি বিভক্তি মূলক পোস্ট। কেউ মাথার ব্যন্ডেজকে দেখছেন টুপি হিসাবে আবার আরেক দল আছেন যারা রীড অনলি মুডে থাকেন। মানে এরা সবার পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়েন কিন্তু কোন কমেন্ট করেন না বা নিজেরাও কোন পক্ষে বিপক্ষে যান না। সাধারণত অতি উঁচু মাপের কর্পোরেট শ্রেণীর এরা। কিন্তু যারা পক্ষে বিপক্ষে লিখছেন তারা কি একবার চোখ বন্ধ করে দেখবেন আর মনে করার চেষ্টা করবেন খবরটা শোনার পর আপনার বুক কেঁপেছিল কিনা ? বা আপনার আনন্দ লেগেছিলো কিনা ? ভয়ে বুক কাঁপা বা আনন্দ লাগা যেটাই হোক না কেন এটাই মৌলিক মানুষের রূপ।
মৌলিক মানুষগুলোর হৃদয় বেশ গোছানো। তীব্র রক্তক্ষরণের সময়েও নিজের ঘাতককে না মারতে বলা বা নিজের রক্তের গ্রুপ বলে দিয়ে যাওয়া। একজন অসম্ভব গোছানো মনের মানুষের পক্ষেই সম্ভব এতো কিছুর পরও সবাইকে শান্ত থাকতে বলা। আমরা সবাই মৌলিক হতে পারি না। রক্তাক্ত অবস্থায় নিজের রক্তের গ্রূপ বলে যাবার মতো সাহস মেধা কোনোটাই আমাদের অনেকের নেই। আমরা কিং কর্তব্য বিমূড়ও।
মৌলিক মানুষগুলোকে অংকের মতো চাপাতি দিয়ে ভাগ করা যায় না। এদের পাশে গুণিতক দিয়ে সংখ্যার মান বাড়ানো যায় মাত্র। পক্ষে বিপক্ষে সবার এই মৌলিক মানুষটি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫