দেশে কারাগারের সংখ্যা প্রায় ২১। এর মধ্যে ৬ টি বিভাগীয় আর ১৫ টি জেলা পর্যায়ে। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় চাইলেই এই ২১ টি কারাগার থেকে প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারে। এটা মোটেও হাস্যকর নয় বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ যুগসই। অন্তত শ্রেণীকক্ষে ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র প্রকাশ থেকে। যা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেহেতু সরকার আউট অফ দা বক্স চিন্তা করছে তাই জেল খানা থেকে প্রশ্নপত্র প্রকাশও অনেকটা আউট অফ দা বক্স এর মতো একটা ব্যাপার। এটা নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে।
সরকার এই মুহূর্তে প্রশ্নপত্র প্রকাশের সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকেই তেমন বিশ্বাস করতে পারছে না। কারাগারের ভেতর দাগি আসামিদের বিশ্বাস করা ছাড়া আর ভালো কোনো পন্থা আছে বলে মনে হয়না। এতে সুবিধাও অনেক। আসামিদের যেহেতু কোন চাওয়া পাওয়ার নেই তাই প্রশ্নপত্র বেচা কেনা বা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবার ভয়ও নেই। থাকলেও খুব একটা উপায় যে আছে তাও না । এদের কারো কাছেই জীবনের এই সময়টায় মোবাইল ফোন থাকার কথা না। বাইরের কারো সাথে এদের যোগাযোগ থাকাটাও অবাঞ্ছনীয়। আর চাইলেই এদের যে কাউকে আবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কিছু শাস্তি বাড়িয়ে দেয়া যাবে। অন্তত মন্ত্রী বা সচিবের উপর দায় কিছুটা কমতে পারে এতে।
কারাগারের প্রশ্নপত্রের জন্য লক্ষ্য টাকা খরচ করে ডিজিটাল স্ক্রিন বসাবার প্রয়োজন নেই। শুধু কারাগারের বাইরে থাকা মানুষগুলোর চোখের স্ক্রিনের ধারা বদলালেই বদলে যেতে পারে একটা জাতির ভবিষ্যত।
প্রায় প্রতিটা কারাগারই জেলা বা বিভাগীয় ডিসি অফিসের আসে পাশে অবস্থিত। বর্তমান প্রশ্নপত্র ডিস্ট্রিবিউশন পক্রিয়াতে ডিসি সাহেবদের কাছ থেকেই স্কুল পর্যায়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। পার্থক্য শুধু কারাগার থেকে প্রিন্ট করা প্রশ্নপত্র গুলো ডিসি অফিস থেকে না নিয়ে কারাগার থেকে নিলেই হবে। এক্ষেত্রে ডিসি সাহেব তদারকিতে থাকলেও বেশ একটা বেমানান হবে বলে মনে হয় না।
বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ কারাগারে বন্ধীরা নানা রকম কারুপণ্য তৈরী করে। এইসব আবার মেলায় মেলায় বিক্রীও হয়। যদি বন্দীদের বানানো কারুপণ্য আমরা কিনতে পারি তাহলে নিজেদের বাচ্চাদের প্রশ্নপত্রও তাদের হাত থেকে নিতে অসুবিধা থাকার কথা না। এর চেয়ে বিশ্বস্থ আর কোন হাত এই মুহূর্তে দেশে আছে কিনা জানা নেই।
আমেরিকার কারাগার গুলুতে জিইডি নামক একটা হাই স্কুল ডিপ্লোমা আছে। এটা বাইরের যে কোনো হাই স্কুল ডিপ্লোমার সমমাণ। আমাদের দেশেও এই জিইডি পরীক্ষা আছে। তবে আমাদের দেশে এই ডিপ্লোমা নিতে যায় সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর যত্নপ্রাপ্ত সন্তানরা। জিইডি ডিপ্লোমা আবার দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্দ্যালয় গুলু সমানে গ্রহণও করে থাকে। যদি আমেরিকার প্রিসনার এডুকেশন ডিপ্লোমা আমরা সমানে মানতে পারি আমাদের প্রিসনারদের হাত থেকে প্রিন্ট হওয়া প্রশ্নপত্র মানতে সমস্যা কোথায় ?
পুরো জাতি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্নিগনো আর নানা রকম প্রক্রিয়া সাজাতে ব্যস্ত। সবাই বেশ সমান তালে সামনের দিকে চিন্তা করে চলছে। কারাগারের বাইরে থাকা মানুষ গুলুর এতদিনে নিজেদের প্রতি ঘৃণা জন্মানোর কথা। হয়তো তাই। আর হয়তো এই কারণেই এখন চিন্তা চলছে ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রশ্ন প্রকাশের। বাইরের মানুষগুলোর পরীক্ষা শেষ। একবার কারাগারের ভেতর মাঁনুষগুলুর একটা পরীক্ষা নেয়া যেতেই পারে। এদের হাতেই হতে পারে আগামীর সুন্দর একটা শিক্ষা ব্যবস্থার পথ।
অন্তত ডিজিটাল ফরম্যাটে চিন্তার আগে কারাগার নিয়ে চিন্তা করতে আশা করি বাইরে থাকা আমাদের খুব বেশি লজ্জা পাওয়া উচিত না। কারণ আমরা অনেক আগেই নিজেদের বাইরে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছি। কারাগারের ভেতর কোনো বাবা হয়তো এই মুহূর্তে বাইরে থাকা সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ উদ্নিগনো। কারণ আমরা বাইরে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছি ভেতরের মানুষগুলোর কাছেও।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৩২