অপদার্থ গোবর গণেশদের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি ধরিয়ে চাকুরি পাইয়ে দিতে
'ব্যবসা প্রশাসনের' জুড়ি মেলা ভার। 'বিজ্ঞান' ও 'শিল্প সাহিত্য' অর্থে 'কলা' বিমুখতায় এদের অবদান ১৮ আনা। জীবন আর কর্মের বাস্তব 'রঙ' বুঝে ওঠার আগেই, ওরা 'সঙ' এর প্রদর্শনী আর 'ঢঙে'র আচরণ (বিহেভিয়ার) রপ্ত করে উপার্জনই তাদের পেশা ও নেশা।সহজে পাঠ যোগ্য 'হিসাব বিজ্ঞান' (আদতে এক মহাবিজ্ঞান) শিখিয়ে ক্যালকুলেটর চেপে কিছু ডেবিট-ক্রেডিট শিখে, ফুল বাবু সেজে অপিসের চেয়ারে বসে নথি পত্রে দস্তখত, আর 'এক্সকিউজ মি' টাইপ ঘিন ঘিনে বাংলিশে ন্যাকামো করাই তাদের জীবিকা। এদের ঠেলায় ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনবিদ্যার সুসার নাই, নাম মাত্র উপার্জনের দুঃখে এরা আবার 'ব্যবসা প্রশাসনে" স্নতোকত্তোর করছে, বেসরকারিতে।
'ব্যবসা প্রশাসনে'র সাথে 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়' যোগ হলে তো কথাই নাই,"আলালের ঘরে দুলালদের অদ্বিতীয় ও শেষ সম্বল গাইড"। অঢেল বিত্তকে পুজি করে বিদ্যা কিনে আবার সেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির 'সেলস একজিকিউটিভ' ফুল বাবু।
পরিচিত এক বড়দা আছেন। ইস্কাটনে আলিশান বাড়ি। বাবা মা দুজনেই পিজি'র জাদরেল ডাক্তার। নর্থ সাউথ থেকে ব্যবসা প্রশাসন পড়ে লক্ষ টাকা ছুই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী (এম্প্লোইই,অফিসার বললে ভাল শোনাত হয়ত।) । এসি ঘর ছেড়ে এসি গাড়িতে তারপর আবার এসি অপিসে। ম্যাগি নুডুলস, রেপ গান, ডিসকো পার্টি, ফি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন বদল, সাকুরা, গ্যালাক্সি, পি ককের নিয়মিত ভোক্তা, কি নেই তার জীবনে!!! এখন এতকাল পর এসে "হা হুতাশ, দুঃখ কষ্টের বিলাসী ভাব ধরে "মরে যেতে ইচ্ছে হয়, নিজেকে খুব হীন আর ক্ষুদ্র মনে হয়, এইসব আবেগ তাড়িত ভাবনা।"
ঢাকা বাসী আইডিয়াল, নটরডেম হয়ে বুয়েট-মেডিক্যাল-আই বি এ বলে কথা নয়, প্রচন্ড সুবিধাভোগী ও অর্থ বিত্তশালী সম্প্রদায় এক "অবাস্তব কষ্ট কল্পনার বিলাসিতা করবে" বিপরীতে পবিত্র শ্রমজীবী রিক্সাওয়ালা কেন ১/২ টাকা বেশি নিবে সেটার তর্ক করবে, গরীবের গলা চিপে দিবে জন্মের মত মা বাপ তুলে গাল। এইসব সমাজের ঝড়কন্যারা "মন খারাপ", "মন খারাপ","মন খারাপ"...."কিছু ভাল লাগেনা", "লাইফ সাকস", "লাইফ ডাল" বলে কাতরাতে থাকবে পুরুষ ব্লগারদের কাছ থেকে রমণী মোহন সমবেদনা, স্তুতি শোনার জন্য। সমালোচনাও যে বন্ধু সুলভ ব্যাপার সেটা এক ঘেয়ে স্তুতি শোনতে অভ্যস্তরা বুঝেনা, "ধমকের স্বর নারীর জন্য নয়", এতে অবলা নারীদের উপর শক্তি প্রদর্শনের কারণে পাল্টা দোষ আসে, নারীদরে মুখের উপর সমালোচনা করাটা "অভদ্রতা", ফলত মেয়েরা অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে "আত্মহত্যা করে" পুরুষকে আমৃত্যু বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে যায়।
অনর্থক হাসাহাসি টা পাগলামির প্রকট লক্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়, অথচ নারী কন্ঠে পুনঃ পুনঃ হাস্যরোল কিংবা ফিচফিচে হাসি (হাসির সাথে বক্তব্যের নিকটতম সম্পর্ক না থাকলেও) শুনলে পুরুষেরা পুলক অনুভব করে নিরবে। উল্টো মন্তব্য করে মেয়েটা কত জলি, মিশুক। হিন্দী সিরিয়াল আর ছবি দেখে ভাব, ভাষা, পোশাক আমদানি করে ন্যাকা সুরে কথা আর হিস্টিয়ার মত কথায় কথায় হাসা এ প্রজাতিকে পা দিয়ে মাড়িয়ে মারতে ইচ্ছা হয় খুব।
বনানীতে এক পুরনো সহপাঠীর (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক) সাথে দেখা করতে গেলাম, দুপুরের খাবার টা জুটানোর জন্য। লিফটের ভিতর সেই বীভৎস অভিজ্ঞতা, গা ঘিন ঘিনে বাংলিশে চারপাশ পরোয়া না করে হাসাহাসি, চিৎকা। নারী পুরুষ, ভদ্রতা বাছ বিচার না করে গায়ের উপর ঢলে পড়া। মেয়েদের হাসি, কান্না প্রকাশের আতিশাজ্যটা মৃদুস্বরে সায় দিতে থাকে তাদের পুরুষ সহপাঠীরা। ফটো কপি পড়বে তাও ভাল, ১০০-১৫০ টাকা দিয়ে পাঠ্য বই কিনতে তাদের আপত্তি। মোবাইলে ১০০০+ টাকার কথা বলে ওদের সুখ।২০,০০০ টাকার ক্যামেরা মোবাইল না হলে চলেনা। ২-৪ টা সিম কার্ডে ও ওদের জৈবিক চাহিদা মিটেনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ডিসটেম্পার' নামে এক মেয়ের খ্যাতি ছিল, চুন কাম করে নিজের কৃত্রিম রূপটা প্রদর্শনী করত নিয়মিত। লিপস্টিক দেয়ার প্রয়োজন কেন, খুব নিরীহ প্রশ্নের জবাব টা হত দাঙ্গাবাজদের মত, 'নিজের কাছে ভাল লাগে তাই'। আমি বলি, আপনি তো আপনার লিপস্টিক আয়না ছাড়া দেখতে পারেন না, ওটা কেমন যেন কামুক পুরুষের বুকের রক্তের মত মনে হয়। আমি সংকীর্ণ মনা, মধ্যযুগীয় কারণ নিজের ঘরের বোন কে বিল বোর্ড সজ্জার পণ্য ছবি হতে বাধা দিই। এমকি পুরুষের ক্ষুরের বিজ্ঞাপনে নারী এসে নপুংশক দর্শন পুরুষের গাল ছুয়ে না দিলে পণ্য বিক্রয়ে ভাটা পড়ে যায়।
ঈদ, বিয়ে, জন্মদিনের মত সব সামাজিক অনুষ্ঠানে আমি সদা সর্বদা অনুপস্থিত। জানা ছিলনা ওসব জায়গা কি হয়, যতদিন না ফেস বুকে দেখলাম বাঙালির কর্ম কান্ড। বঙ্গ থেকে ২০০ টাকায় কেনা পাঞ্জাবি পরে কুদর্শন, রোগাটে এক বর রূপী ছেলের পাশে বসে আছে, অভূতপূর্ব ভীষন গৌর বর্ণের সজ্জাধারী সুন্দরী। পাশে ছেলেটা আপেক্ষিকভাবে কুদর্শন সেটা মেয়েটার অতি সজ্জার কারণেই। ভীষন এ বৈষম্য আমাকে নাড়া দেয়। অলংকার থাকা ভিন্ন ব্যাপার, কিন্তু চুনকাম করে 'নারী'কে প্রদর্শনীর মডেল হিসেবে ডায়াসে বসিয়ে দেয়া, যেন কোন পুরুষ কত বেশি সুন্দরী বিয়ে করল সেটার প্রতিযোগীতা-প্রদর্শনী, পুরুষের সজ্জা আর প্রসাধন নিয়ে মাথা ঘামানোর লোক নাই। আর অন্য কোন দেশে এ বীভৎস কাজটা করা হয়না বলেই জানি।
চুল মাথায় থাকা কালে কেউ কোন দিন 'নিজের চুল' দেখেছে জানা নেই। মূল্যবান চুলের ভীষণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুকি থাকার পরেও ৮-১০ হাজার টাকায় রঙ করে, সোজা করার একটা মহামারী চলছে ব্যাপক। বেচারি নিজেই দেখতে পেলনা এ চুলে নিজেকে কেমন লাগছে। আমার মত মানসিক প্রতিবন্ধীরও বোধ আসে যে , এটা প্রকাশ্যে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণের প্রবল একটা প্রচেষ্টা, অনেকটা ওড়না টাকে গলায় পেচিয়ে হাটার মত পাশবিকতা। পুরুষের জুতার সোল ক্ষয়িষ্ণু, ভোতা নিঃশব্দে চলার সাথী। আর মেয়েদের টা কায়দা করে বানানো হয় যেন "কট কট কট" শব্দ তুলে জন মানবকে চোখ তুলে তাকাবার আহবান করতে পারে।
পুরুষের জন্য চলছে শর্ট শার্ট নামের ব্লাউজ জাতীয় জিনিস। উবু হলেই আন্ডার ওয়্যার, পিঠ ও আংশিক পশ্চাৎদেশ দেখনো যায়। দু'কাধে ঝুলানো ব্যাগ থেকে, এক্স ফাইলসের ফাইল ব্যাগ আর এখন চলছে শিক্ষার্থীদের কাধে ঝুলে 'লেডিস মার্কা' এক কাধে লম্বা করে ঝুলানো ব্যাগ, হাটুর কাছে গিয়ে ব্যাগ-বই পুস্তক গিয়ে ঠেকে।১০০ জন কে গড্ডালিক অনুসরণে যে ফ্যাশন হয়না, সেটা বুঝার বোধ বুদ্ধি নাই। ছেলেদের 'সালোয়ার কামিজ' টাইপ "পায়জামা-পাঞ্জাবি"র সাথে এখন ওড়না সদৃশ বৃহৎ কাপড়ের ফালির উদ্ভব হয়েছে।
সহচর, সহপাঠীরা যখন 'ডিজুস সঙ' সেজে এসে বলে, "শেরিফ চল, নন্দন যাই, কক্সবাজার যাই, নিউ মার্কেট যাই, বসুন্ধরা যাই, ঐমুকের বিয়ে, তমুকের বিয়ে বার্ষিকি...."। আমার উত্তর হয় একটাই,
"তোরা দূরে গিয়ে মর!"