ভ্রমণ আমার সব সময়ই প্রিয়। আমেরিকায় ভ্রমণের একটি সুবিধা হল দেশটি অনেক বড়, লম্বা সফরে বেরিয়ে পরলে অনেক কিছুই দেখা যায়। গাড়ি কেনার পর থেকে আমার ইচ্ছা ছিল লম্বা একটি সফরে বের হব কয়েক দিনের জন্য। এখন ফল চলে, এই সময়টা ঘুরার জন্য উপযুক্ত সময় কারণ এই সময়ে গাছে পাতার রং হলুদ এবং লাল বর্ণ ধারণ করে, স্মোকি মাউন্টেইন দেখা যায়। পাহাড়ে গাছগুলো দেখতে দারুন লাগে, রোড ট্রিপে গেলে প্রকৃতির এই অসাধারণ লাবণ্য উপভোগ করা যায়।
আমার ছেলের পাসপোর্ট রিনিউ করতে হবে শীঘ্রই, বাংলাদেশী এম্বাসি ওয়াশিংটনে। আমি থাকি আলাবামাতে, আমাদের এখান থেকে ওয়াশিংটন প্রায় ৮০০ মাইল যা প্রায় ১৩০০ কিমি এর মত। যেহেতু এত দূরে যাব ভাবলাম প্লেনে না গিয়ে গাড়ি চালিয়েই যাই, ঘুরাঘুরিও হবে আবার কাজও হবে। এই শনিবারে পাচ-ছয় দিনের জন্য বেড়িয়ে পড়লাম রোড ট্রিপে,। আলাবামা থেকে ওয়াশিংটন যেতে বেশ কয়েকটি ষ্টেইটের উপর দিয়ে যেতে হয় যেমন জর্জিয়া, টেনেসি, ভার্জিনিয়া তারপর ওয়াশিংটন। এক নাগারে ড্রাইভ করে যাবার ইচ্ছে ছিল না, আমাদের প্লান ছিল গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় প্রত্যেকটা ষ্টেইটে এক রাত করে থাকব, আর রাস্তায় যেখানে মন চায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলব, ঘুরব এবং খাব।
আলাবামে থেকে জর্জিয়া হয়ে টেনেসি
আমরা শনিবার সকাল নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। যেহেতু বেশ কয়েক দিনের জন্য বের হয়েছি তাই বেশ কয়েক দিনের খাবার সাথে করে নিয়ে নিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য হল রাস্তায় খাবারের দোকান না পেলে অন্তত যেন আমাদের খাবার দিয়েই কাজ চালানো যায়, যাবার সময় বিরানি, মাছ, রান্না করে নিয়ে গেলাম সাথে রাইস কুকার এবং চাল ডাল নিয়ে নিলাম। আমরা টেনেসি গিয়ে পৌঁছলাম বিকেল তিনটা চারটার দিকে, আমেরিকাতে হাইওয়েগুলোতে প্রায় পঞ্চাশ ষাট মাইল পর পর রেস্ট এরিয়া পাওয়া যায়, আমরা যাবার সময় একটি রেস্ট এরিয়াতে নেমে ভোজন কর্ম সম্পাদান করলাম।
টেনেসি গিয়ে কোন একটি রেস্ট এরিয়াতে গাড়ি থামিয়ে ভোজন কর্ম সম্পাদান করলাম।
রাস্তার দুধারের দৃশ্যগুলো দেখারমত ছিল।
টেনিসি যাবার সময় জর্জিয়ার উপর দিয়ে গিয়েছি, তবে সেখানে তেমন কোন বিরতি দেইনি। এক আলাবামাই বাংলাদেশের সমান বা তার চেয়ে বড় হবে, সেই তুলনায় মানুষ অনেক কম। পুরো হাইওয়ে দিয়ে যাবার সময় পাহাড় পর্বত, লেইক ভেদ করে ছুটে চলেছি, যেখানেই চোখ যায় বিভিন্ন রং বেরঙ্গের গাছ, হলুদ, লাল আর সবুজে ভরপুর। টেনেসিতে সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছলাম, সেখানে একটি হোটেলে রাত কাটালাম।
চোখ ধাঁধানো রংবেরঙের গাছ।
টেনেসি থেকে ভার্জিনিয়া
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই হোটেল থেকে সকালের নাস্তা করলাম। সকালের নাস্তা হোটেল থেকেই দিল, দানার দান খানা খাদ্য চালান করলাম পেটে। এর মাঝে এক ভাই ফেইসবুকে মেসেজ দিল ওয়াশিংটন আসলে যেন তার ওখানে উঠি, তার বাসা ভার্জিনিয়াতে তবে তার বসা থেকে ওয়াশিংটন যেতে পনের থকে বিশ মিনিট লাগে। তাই সেখানে গিয়েই উঠার চিন্তা করলাম।
রাস্তায় যাবার সময় বিভিন্ন যায়গায় থামলাম, ছবি তুললাম। হাইওয়ে দিয়ে যাবার সময় সাইন বোর্ডে লেখা থাকে টুরিস্ট স্পটের কথা। ভার্জেনিয়ার পুরো জায়গা জুরেই রং বেরঙ্গের গাছ দেখলাম, আর স্মোকি মাউনটেইনের সৌন্দর্যে দেখে মুগ্ধ হলাম।
হলুদ রঙের গাছ!
লাল রঙের মেলা।
ভার্জিনিয়া থেকে ওয়াশিংটন
আমরা সোমবারে ওয়াশিংটন গেলাম। ভার্জিনিয়াতে এক ভাইয়ের বাসায় থেকে ওয়াশিংটনে এক রাতের জন্য হোটেল নিলাম। আমরা এমবাসির কাজ সকাল সকাল সেরে সিটিটা ঘুরতে বের হলাম। ওয়াশিংটন অনেক বিজি শহর, রাস্তাগুলো অনেক ব্যস্ত, গাড়ি চালাতে এখানে বেশ বেগ পেতে হল, কেউ কাউকেই ছাড় দিতে চায় না, তাছাড়া আমাদের আলাবামার মত এখানে গাড়ি পার্কিং এভেইলেবল না। রাস্তা টাকা দিয়ে পার্ক করতে হয়। প্রথমেই গেলাম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট প্রধানের কার্যালয় মানে হোয়াইট হাউজের সামনে।
হোয়াইট হাউজের সামনে প্রচুর দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে থাকে সবসময়, কেউ ছবি তুলছে, কেউ গল্প করছে, পুলিশ পাহাড়ে দিচ্ছে তবে কাউকেই বাধা দেয়া হয়না এখানে। ওয়াশিংটনে অনেক মিউজিয়াম, বাঙালি দোকান আছে, এবং টুরিস্টদের জন্য অনেক কিছুই আছে। আমরা মিউজিয়ামে যাইনি, তবে বাঙ্গালী দোকানে কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলাম, সেখানে একটি পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করলাম।
হোয়াইট হাউজের সামনে।
ভ্রমণ শেষে গতকাল বিকেলে সুইট হোম আলাবামা এসে পৌঁছলাম।