পুরুষ মানুষের মোছ থাকাটা অনেকটা ফরজ ব্যাপার ,এটা অনেকটা পৌরষত্বরে প্রতীক।এক সময় রাজা বাদশা এবং তাদের সিপাহিসালাগন লম্বা ঘন মোছ রাখত।এছাড়া গত শতাব্দীর অন্যতম পরাক্রমশালী হিটলারের কথাই বা কেন ভুলি, আমার মনে হয় তার থেকে-তো তার সেই খতনাক মোছটাই বেশী পরিচিত সবার কাছে! যদিও বর্তমানে ইয়ো ইয়ো হানি সিং প্রজন্মের কাছে এর আবেদন অনেকটা কমেছে বৈকি!তবে এটা সর্বজন স্বীকৃত যে সব যুগের ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিকের কাছে খোঁচা খোঁচা মোছ দাড়ির কদর অনেক বেশী! আমার দৃষ্টিতে এই খোঁচা খোঁচা মোছ দাড়ি রাখার একটা সুবিধা আছে , এটা অনেকটা শেল্ফ ডিফেন্স হিসেবে কাজে দেয় । ধরুন রাস্তায় একা বের হয়েছেন , হঠাৎ কোন ছিনতাইকারীর কবলে পরলেন , আপনার হাতে কিছু নাই, খোঁচা খোঁচা মোছ দারি থাকলে আপনার কোন চিন্তা নাই। খোঁচা-খোঁচা মোছটাকে আপনি দাঁড়াল চাকু হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন, খোঁচা খোঁচা মোছ দিয়ে যদি গরুরমত ছিনতাইকারীর পেটে গুঁতা দিতে পারেন তাহলে কেল্লা ফতে! ছিনতাইকারী ওখানেই কাইত হয়ে যাবে! এছাড়া ধরেন আপনার হাতে চুলকানি হয়েছে , ছোঁচা ছোঁচা মোছ থাকলে আপনার কোন সমস্যা নাই। হাতটা ধারালো খোঁচা খোঁচা মোছ বরাবর নিয়ে ঘর্ষণ করুণ ভাল আরাম পাবেন নিশ্চিত! নয়ত পয়সা ফিরত !
আমার জীবনে মোছ নিয়ে এক করুণ কাহিনী আছে। আমি তখন টগবগে কিশোর। সবে মাত্র মেট্রিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছি।দাড়ি উঠার কোন নাম গন্ধ নাই মুখে কিন্তু কিছু ছোটখাটো মোছ হয়েছে। কিশোর থেকে তরুণ পদোন্নতি পাবার পথে মোছই একমাত্র বাধা। তাছাড়া মেয়ে সম্প্রদায়ের সাথে টাংকি মারার ক্ষেত্রে মোছ থাকাটা নাকি একটা বড় মাইনেস পয়েন্ট। যদিও আমি শরিফ লোক, এই সমস্ত টাংকি ফাংকি থেকে নিরাপদ দুরুত্বে থাকি, এই ধরনের কু-কর্ম করার পাত্র আমি নই। তারপরও এই মাইনাস পয়েন্টকে প্লাসে পরিণত করতে প্রয়োজনে মোছ কুরবানি দিতে আমি বদ্ধ পরিকর।যেই-ভাবা সেই কাজ, কচকচে এক টাকা দিয়ে একটা বলাকা ব্লেড কিনে ঘরের চিপায় চাপায় গিয়ে গে-চাং করে মোছ বিসর্জন দিয়ে দিলাম।
আমি রাতে খেতে বসেছি, চোরের-মত মাথা নিচু করে টপাটপ খানা-দানা একের পর এক পেটের ভিতর চালান করে চলছি। হঠাৎ মা আমার চেহারা মোবারকের তাকেই যেন ভূত দেখার-মত চমকে উঠলেন। গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বলে এইটা কি ? মোছ কই ? আমি শরমে মরে যাই অবস্থা, কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে খেঁকি মেরে বললাম কি হইছে? এইভাবে তাকানোর কি হইল? খাওয়া দাওয়াই করুম না আজ বলেই শোবার ঘরে চলে গেলাম।ভাবখানা এমন যেন মোছ কামানো একটা মামুলি ব্যাপার। এক-দু কান করে ঝরের বেগে আমার মোছ বিসর্জনের খবর বাড়ি ভর্তি মানুষের কাছে রটে গেল।
মোছ কাটানোর কয়েকদিন পর্যন্ত আমি নতুন জামাইয়ের মত সারাদিন প্রায় ঘরের ভিতরেই থাকি, রাস্তাঘাটে বিচরণ কমিয়ে দিয়েছি। ঘটনার দুই দিন পর এলাকায় বের হয়েছি বন্ধু সম্প্রদায়ের সাথে বাৎচিৎ করতে ,কৌতূহলী বন্ধুরা আমার দিকে তাকিয়ে বলে মুখ থেকে হাত সরাতে। আমি অনড় হাত সরাব না মুখে থেকে। আমি ভাব দেখিয়ে বললাম আমি স্বাস্থ্য-সচেতন পাবলিক, বাহিরে ধুলাবালি যাতে মুখে না আসে তাই পন্থা অবলম্বন করেছি তোদেরও এভাবেই চলা উচিৎ!হঠাৎ এক বন্ধু জোর করে একটানে হাত সরি দিল । আমার মোছের করুণ অবস্থা দেখে হাসা হাসি করে দিল, আমি পুরা নাস্তানাবুদ হয়ে গেলাম !
যারা প্রথম মোছ বিসর্জন দিতে যাচ্ছে তাদের জন্য এটা সতর্কতামূলক বার্তা। এই ধরনের উটকো ঝামেলা পহাতে যাদের হিম্মৎ নেই তারা আপাতত মোছ কাটানোর চিন্তা বাদ দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১২:২৫