গতপরশু রাতে ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ আমজনতা” এর সাথে একজন মেঙ্গো হিসেবে ১১ জনের সাথে আমিও গিয়েছিলাম কক্সবাজারের চকরিয়াতে। উদ্দেশ্য “Sos misson ctrl +s চকোরিয়া” ।। এখানে জানিয়ে রাখি , আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল, তাতে চকরিয়ার মানিকপুর ও চকরিয়া সদর থানায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিল এবং শত শত বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে পানিতে।। অনেক পরিবার শুধু পানি মধ্যে থেকেই পানি খেয়ে কোন রকম জীবন বাঁচানোর ছিল আপ্রান প্রয়াস। এমন পরিস্থিতে শুধু মাত্র মানবিক খাতিরে নয়, বরং এই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর বিবেকের তারনায় “ম্যাঙ্গো পিপল | আমজনতা” সেখানে ছুটে যাওয়ার প্রোগ্রাম হাতে নেয়। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি,আমজনতা” গ্রুপটি শুধুই ফেসবুক কেন্দ্রিক ও তারুণ্য নির্ভর। অনেক তরুন দেশের জন্য কিছু করতে চায়, কিন্তু প্লাটফর্মের অভাব, আমার মনে হয় আমজনতা” এমন একটা প্লাটফর্ম দিতে পারবে।
যাই হোক, আমাদের ১১ জনের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বঃ একজন সহকারী অধ্যাপক স্যার ও ছিলেন, যা আমাদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে আরেকটি জিনিস জানিয়ে রাখা দরকার, আমরা যে কয়জন গিয়েছি, সবাই নিজ নিজ যাতায়াত খরচ বহন করেছি। আর ফেসবুক থেকে ক্যাম্পেইন করে ও পরিচিত ভাই- ব্রাদারদের মাধ্যমে মোটামুটি একটা এমাউন্ট দাড় করানো গিয়েছিল। এর মধ্যে লন্ডনপ্রবাসী ভাইদের একটা দাতব্য সংস্থা "LIGHT OF LIFE" আমাদের পাশে এসে দাড়ায়।।ব্যাস এবার কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা।।
একেবারে প্রাথমিক চিন্তায় আমাদের টার্গেট ছিল মাত্র ১৫০ পরিবার। তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, চারটা স্যালাইন, আর এক পাতা করে ফ্লাজিল ট্যাবলেট , হ্যালোট্যাব (পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট) ও ২ কেজি করে চাল দিবো ১৫০ টি পরিবারকে। কিন্তু সবার অসম্ভব সহযোগিতায় ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আমরা ৪০০ পরিবারে সহায়তা করার একটা সাহসি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমরা সিদ্ধান্ত নেই, লিস্ট করে দুই জায়গায় ত্রান দেওয়ার। একটি চকরিয়ার মানিকপুর ও আরেকটি চকরিয়া সদর থানায়।এই দুটি জায়গাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। এর মধ্যে বিশ্বস্ত লোকাল মানুষের সহায়তায় লিস্ট ও তৈরি হয়ে যায়।।
গতকাল সকালে সেখানে পৌঁছানোর পর মানিকপুর এর উদ্দেশ্যে রউয়ানা দেই। সেটা অনেক দুর্গম একটা এলাকা। সেখানে আজ অব্ধি কোন ত্রান পৌঁছায়নি বলে এলাকাবাসি জানায়। এ এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে অল্প কয়েকজন মারা গেলেও প্রচুর গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। মুলত পাহাড়ি ঢল থেকে এ পানির উৎপত্তি এবং প্রায় ৫ ফিট পর্যন্ত পানি উঠে যায়।।মানুষগুলোর চোখে মুখে ছিল রাজ্যের হাহাকার। হারনোর বেদয়া। ক্ষুদায় ক্লিষ্ট মুখগুলো দেখে যে কারো হৃদয় চিন চিন করে উঠতে বাধ্য।




এরপর বিকেলে চকরিয়া সদরে পৌঁছে বিকাল ৫ টায় ত্রান বিতরন শুরু হয়।

[শুরু হয় ত্রান বিতরন, উদ্বোধন করলেন মিরান ভাইয়ের ফুফি আম্মা। আনটি আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন আমাদের জন্য। সাথে ৪ বস্তা চাল ও দিয়েছেন আমাদের ] এখানে লিস্ট অনুযায়ী ২০০ জনকে ত্রান দেওয়ার পরও অনেক চাল বেচে যায়। বেচে যাওয়া চাল আরও প্রায় শতাধিক পরিবারের মধ্যে বিতরন করা হয়, তবে তখন ওষুধের ঘাটতি থাকায় বাকিদের ওষুধ দেওয়া সম্ভবপর হয়নি। রাতেই আবার ফিরে আসতে হয় ঢাকায়। এভাবেই শেষ হয় আমাদের একদিনের ত্রান কার্যক্রম।



তবে ত্রান কার্যক্রমই আমাদের মুল উদ্দেশ্য নয়। এটা একটা সাময়িক ইমারজেন্সি সহায়তা মাত্র। আমরা এই পানিবন্দি মানুষগুলোর জন্য একটা পার্মানেন্ট সমাধান চাই।। সশরীরে বাঁধ পরিদর্শন শেষে এটাই বুঝা গেলো, ১৯৯৭ সালে এমন একটা পরিস্থিতি ও ব্যাপক প্রানহানির পর এই বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ছিল প্রয়োজনীয় রক্ষনা বেক্ষনের অভাব। এ ছাড়া নাফ নদির ড্রেজিং না করানো এর প্রধান কারন। বলা চলে, শুধু এই কারনেই আজ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো।
পাহাড়ি এ ঢলে অনেক জায়গায় পুরো ২ তলা বিল্ডিং পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও বিল্ডিং এর দুই ইউনিটের একটা পানির নিচে, আরেকটা কোন রকমে দারিয়ে আছে।। আবার এক জায়গায় দেখা গেলো, বিল্ডিং দারিয়ে আছে, কিন্তু তার নিচে প্রায় ৩ ফুট কোন মাটি নেই। এই বিল্ডিং গুলো অচিরেই ধসে পড়বে। সবচেয়ে ভয়ানক কথা, গতকাল এই ঘটনার ৪ দিন হয়ে গেলেও সরকারি কোন পক্ষ থেকেই এখন পর্যন্ত বাঁধ পুনঃ নিরমানে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই এলাকাবাসি আশংকা করছে, এবার হালকা বৃষ্টি হলেও হয়ে যাবে অনেক বড় ক্ষতি।। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই !!!! প্রসাশন কি এগিয়ে আসবে না এই মানুষগুলোকে রক্ষা করতে???
অনলাইনে এসব নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়। এর মধ্যে আমি দুইটা শ্রেণীকে ভাগ করতে পেরেছি। এর শ্রেণী আছে, যারা কীবোর্ডে টাইপ করেই মানবসেবা করে ফেলে। স্ট্যাটাস আর ব্লগ লিখেই মানুষের চোখের জল ফেলে দেয়, কিন্তু মাঠে নামার অনুরোধ করলে লেঞ্জা তুইলা ফালায়।কিন্তু পিছনে কেউ কিছু করতে চাইলে, কিভাবে তাকে নিয়ে কটাক্ষ করা যায় , সে চিন্তায় ব্যাস্ত।
আরেকটা শ্রেণী, যারা মুলত একেবারেই তরুন। তারা এই দেশের জন্য, সমাজের জন্য আসলেই কিছু করতে চায়, স্ট্যাটাস আর ব্লগে হিট বাড়ানোর জন্য না, সামাজিক সচেতনতা ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের অবহেলিত, দুর্গত মানুষগুলোর জন্য কিছু করার তাগিদ সব সময়ই অনুভব করে কিন্তু একত্রিত হতে পারছে না, পাচ্ছে না কোন প্লাটফর্ম। আশা করছি, এ ক্ষেত্রে “ম্যাঙ্গো পিপল | আমজনতা” ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। ফেসবুকের অনেক নেগেটিভ সাইড যেমন আছে, পজেটিভ ও আছে। কোনটা আপনি গ্রহন করবেন তা একান্তই আপনার বিবেচ্য। আমরা চাই “ম্যাঙ্গো পিপল | আমজনতা” আমাদের স্বপ্নের থেকেও বড় হোক।। মানুষের সেবায় বেচে থাক যুগ যুগ।
যাই হোক,আমজনতা”র আগামী প্রচেষ্টার জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে বলে শুনেছি। সেটা হলো কুড়িগ্রাম। শুনেছি সেখানকার মানুষজনের অবস্থা নাকি খুবই খারাপ।। দেখা যাক, কতো খানি সহায়তা সংগ্রহ করতে পারে আমজনতা” ।