somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিবন্ধিতা অভিশাপ নয়,প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মান ও মর্যাদা দিন

২৪ শে মে, ২০১১ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ১১৩মিলিয়ন মানুষের এই দেশে প্রতিবন্ধিতার হার ১০%(২০০৮)।এদের বাদ দিয়ে আমাদের দেশের লোকসংখ্যা ১১ মিলিয়ন। আমরা জানি না ওদের শিক্ষা,অন্ন,বস্ত্রের জন্য সরকার কি করছে???প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকার কি পদক্ষেপ নিচ্ছে??? নাকি একটা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বানিয়েই সরকারের দাঁয় শেষ। এই মন্ত্রলায় বাসে বাসে "মহিলা,শিশু ও পতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন" লেখা বাধ্যতামূলক,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিদের কিছু কোটা,আর মাঝে মাঝে কিছু জাকজমক অনুষ্ঠান করে কিছু হুইল চেয়ার বিতরন করার মধ্যেই তাদের সমাজ কর্ম সীমাবদ্ধ রেখেছে।কিন্তু সামাজিক সচেতনতা মুলক কাজ তেমন চোখে পড়ে না বললেই চলে। আর কিছু এন জি ও আছে যারা, যখন কোন প্রতিবন্ধী কোন কাজে সাফল্য পায় তাকে প্রমোট করার জন্য উঠে পড়ে লাগে।এটা বেশি দেখা যায় এস এস সি ও এইস এস সি পরীক্ষার পর। যখন কোন প্রতিবন্ধী ভালো রেজাল্ট করে তখন তাকে নিয়ে শুরু হয় এন জি ও দের টানাটানি।সেই মাপের একটা বড় পোগ্রাম করে এন জি ওর বড়বড় কর্তা বাবুরা তাদের বিদেশী প্রভুদের উপস্থিতিতে বড় গলায় ২/১ জন প্রতিবন্দীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেয়।অবস্থা দেখে মনে হবে যেন তারা সমাজের জন্য এক বিরাট কাজ করে ফেলেছে।এরপরের ঘটনা কখনোই আর জানা যায় না।তবে এ কথাও সত্যি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থেই প্রতিবন্দীদের জন্য কাজ করছে।এবং তারা সংখ্যায় খুবই কম।তবে আজ আমার লেখার বিষয় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় বা প্রতিবন্দীদের নিয়ে ব্যাবসা করা এন জি ও দের কাজের সমালচনা নয়,বরং প্রতিবন্দীদের সম্মান,মর্যাদা আর তাদের মর্যাদার সাথে কেন ডাকা উচিত তা নিয়ে.............কিন্তু উপরের কথা গুলো বলেছি শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা আর মনের ভিতর থাকা চাঁপা কষ্ট থেকে......।

প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ নয়।এটা কোন পাপের ফসলও নয়। প্রতিবন্দীদের নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে। সবচেয়ে অবাক করা কথা হলো এই ডিজিটাল যুগে এসেও আমাদের দেশের অনেক অঞ্চলে এসব কুসংস্কার খুব ভালো ভাবেই বিশ্বাস করা হয়। প্রতিবন্দীদের দেওয়া হয় নানা অপবাদ।তাদের সহ্য করতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরিফে ইরশাদ করেছেন- আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি।বিভিন্ন ধর্মে প্রতিবন্দীদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ মর্যাদা। ইসলাম ধর্মের প্রথম মুয়াজ্জিন ছিলেন হযরত বেলাল (রাঃ) যিনি ছিলেন মৃদু বাক প্রতিবন্ধী।এ থেকে বুঝা যায় আল্লাহর কাছে অপ্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধী উভয় সমান।

আশির দশকের পূর্বে আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী বাক্তিদের অক্ষম মনে করা হতো।তখন প্রতিবন্ধী কথাটি সমাজে প্রচলিত ছিল না।তখন তাদের বিভিন্ন নামে ডাকা হতো।বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বোবা, কালা, গোঙ্গা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কানা, অন্ধ, দৃষ্টিহীন, ট্যারা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাগল, খ্যাপা, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের লেংড়া, খোঁড়া এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক বিভিন্ন নামে ডাকতে থাকে।এর ফলে প্রতিবন্ধীরা সমাজে হয়ে পরেন অবহেলিত, ভৎসনার শিকার।তাদের নিচু চোখে দেখা হতো।এর ফলে তারা মানসিক ভাবে হয়ে পরতেন চরম ভাবে বিপর্যস্ত।প্রতিবন্ধীরা সমাজে একা হয়ে পড়ে অনেকটা একঘরের মতো। তাদের দ্বারাও যে সমাজের কিছু করা সম্ভব এটা সমাজের কেউ যেমন ভাবতে পারত না,তেমনি প্রতিবন্ধীদের মাঝেও সে বিশ্বাস ছিল না। তৎকালীন যেসব সংগঠন এদের নিয়ে কাজ করতো তাদের নামও ছিল অবাক করা। যেমন-পঙ্গু পূর্ণবাসন কেন্দ্র,বধির সংস্থা, অন্ধ সংস্থ্‌ প্রমুখ। এসব নাম থেকেই আমরা তৎকালীন সমাজে প্রতিবন্ধীরা কতটা সম্মান(!!!) আর মর্যাদা(!!!) পেত তা অনুমান করা যায়।

এই দশকের মাঝামাঝি সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের টনক নড়ে এই বিপুল জনগোষ্টীকে নিয়ে। এ সময় অনেকগুলো সংগঠন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্বন্ধে পূর্বের ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যায়।সরকার অক্ষম মানুষদের প্রতিবন্ধী বলে ঘোষণা দেয়।এ সময় থেকে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দায়-দায়িত্ব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যাস্ত করা হয়। এবং প্রতিবন্ধীদের সম্মান আর মর্যাদা দিয়ে দৃষ্টি, শারীরিক, বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি এবং বহুমুখী প্রতিবন্ধী হিসেবে নামকরণ হয়।

এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো দশক।পদ্মা,মেঘনায় গড়িয়েছে অনেক পানি (যদিও নদীগুলো অনেক আগে থেকেই পানিশুন্য, তাই এগুলোকে খাল বলাই শ্রেয়)।কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় নি।অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল আমাদের দেশে এখনো প্রতিবন্ধী কথাটা ব্যাপক ভাবে প্রচলিত নয়।অনেকেই কানা, খোঁড়া, লেংড়া, বধির, বোবা ও কালাসহ নানানামে প্রতিবন্ধীদের অভিহিত করে চলেছেন।তার থেকেও দুঃখের কথা হল এই সব প্রতিবন্ধীদের দিয়ে জোর করে করানো হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির মতো জঘন্য কাজ।প্রসাশন এসব দেখেও কেন নিঃচুপ তা আমার মতো সাধারণ মানুষ জানে না। শুনা যায় অনেক সময় একটি বিশেষ চক্র অনেক সুস্থ মানুষকেও শক্তি প্রয়োগ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবন্ধীত্বে রুপান্তিরিত করে।আরও শুনা যায় এর সাথে রাজনিতিবিদ ও প্রশাসনের অনেক কর্তা বাবুরাও জড়িত। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষরা এটা বিশ্বাস করি না,করতে চাই ও না যে আমাদের নেতারা এত নিচু মানসিকতার হতে পারেন।কিন্তু এই ঘটনাগুলোর যখন পুনরাবৃত্তি ঘটে,যখন দেখি এসব ঘটনা নিয়ে করা কেসের ফাইল গুলোর উপর পড়ে ধুলার আস্তরণ তখন আমাদের বিশ্বাস করতে হয় বৈ কি।কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে??কতদিন??

আমরা আজ প্রায়ই বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সাফল্যের খবর দেখি।প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন খেলাধুলায় অবদান রেখে চলেছে।সরকারি পৃষ্টপোষকতা আর আমার আপনার একটু সহানুভূতি,একটু ভালোবাসা, একটু সাহায্য পেলে এরাও দেশ গঠনে ভালো ভুমিকা রাখতে পারবে।এরাও পারবে একজন সক্ষম মানুষের মতো জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে।এরাও পারবে দেশের পতাকা বিদেশের মাটিতে তুলে ধরতে।তবে কেন আমরা তাদের অবহেলা করবো??কেন তাদের কানা, খোঁড়া, লেংড়া, বধির, বোবা বলে অপমানিত করবো??কেন তাদের মনে কষ্ট দিবো?? আমরা যেমন মানুষ,তারাও তেমনি।তাদের ও অধিকার আছে একটু ভালভাবে মান সম্মান নিয়ে বাচাঁর। একটু ভাবেন তো আজ আপনার যদি একটি পা না থাকতো, যদি ওই চোঁখ দুটি না থাকতো তাহলে এই জগতকে যতই আলোকিত করা হোক না কেন আপনি কি পারতেন জগতটা দেখতে?? এখন চিন্তা করুন ওইসব মানুষ গুলোর কষ্ট তাহলে কতখানি।এবার একটু চিন্তা করুনতো আপনার পরিবারের কেউ যদি আজ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম গ্রহন করে (আল্লাহ না করুক),আপনি কি তাকে কটু নামে ডাকতে পারবেন???পারবেন না।তাহলে কাউকে কানা,বোবা,খোঁড়া বলে না ডেকে একটু সহানুভুতি দিয়ে যদি ডাকি,আর এতে যদি তার মুখে একটু হাঁসি ফুটাতে পারি তাহলে ক্ষতি কি??ছোটকালে আমার মা একটা কথা শিখিয়েছিল ,"কানাকে কানা বলিও না,কানা মনে কষ্ট পায়।খোঁড়া কে খোঁড়া বলিও না, খোঁড়া মনে কষ্ট পায়"। আমরা যদি এই সচেতেনতাটা পরিবার থেকেই শুরু করতে পারি তাহলে আমাদের সমজে প্রতিবন্ধীরা তাদের প্রাপ্য সম্মান ফিরে পেতে বেশি দেরি নাই।প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য সম্মান আর মর্যাদা দিতে সমাজের সর্বস্তরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।আমাদের একটু সচেতেনতা এই বিশাল জণগোষ্টীকে এগিয়ে নিতে পারে অনেকদূর।আমি আমার পাশের জনকে সচেতন করছি আপনি আপনার পাশের জনকে সচেতন করুন।

আর যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলছি এবার আপনারা একটু জেগে উঠুন।অন্তত এই সেক্টরে দুর্নীতিটা একটু কম করলে হয় না????
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১১ রাত ১০:২২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×