somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকার সেই হ্যান্ডসাম ফেরিওয়ালা (২৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রজন্ম পাতায় প্রকাশিত)

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ বন্ধ করে একবার কল্পনা করে দেখুন তো... রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির একটা রাস্তা ধরে আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন। দূর থেকে দেখছেন রাস্তার ধারে একটা ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে রকমারি পণ্য সম্ভার নিয়ে। লেডিস, জেন্টস সবার জন্যই পণ্য আছে সেই ছোট্ট ভ্যানটাতে। পাশেই হ্যান্ডসাম এক তরুণ দাঁড়ানো। ট্রেন্ডি পোশাক পরনে। ঘাড় থেকে ঝুলছে দামি ক্যামেরার স্ট্র্যাপ। কানে হেডফোন। তো আপনি গিয়ে ভ্যানটার সামনে দাঁড়িয়ে এমনি কৌতূহলে দেখছেন কি আছে না আছে। তরুণটি এগিয়ে এলেন আপনার দিকে। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন কিছু দরকার কিনা আপনার। উত্তর শুনে আপনাকে অবাক করে দিয়ে তরুণ নিজেই আপনি যা খুঁজছেন তা ভ্যান থেকে বের করে এনে দিলেন...


কি, কল্পনা করতে কষ্ট হচ্ছে? আর কষ্ট করতে হবে না আপনাকে। এই স্বপ্নের বাস্তবতাই দেখিয়ে যাচ্ছেন লিখন ফেরিওয়ালা। আপনি, আমি যে কাজকে নিচুশ্রেণির মনে করি, যে কাজ করতে আমাদের আত্মসম্মানে বাঁধে, সেই কাজটিই অবলীলায় করে যাচ্ছেন কোরিয়া ফেরত হ্যান্ডসাম ফেরিওয়ালা লিখন।

ছেলেটি বেশ হালকা পাতলা গড়ন। মাঝারি দাড়িগোঁফ। শ্যামলা হাসিখুশি চেহারা। চোখ দুটি বেশ আকর্ষণীয়। বলা হয় মানুষ মন থেকে যা বিশ্বাস করে তার সত্য প্রতিফলন দেখার অন্যতম এক উপায় হলো চোখ।

কথাটা মানুষটির ক্ষেত্রে একদম ‘পয়েন্টে পয়েন্টে’ মিলে যায়। তিনি সেটাই বিশ্বাস করেন, যা তিনি বলেন ও করেন। উপর্যুক্ত কথাগুলো আসলে যার ব্যাপারে বলা হচ্ছিল তিনি হলেন তাজুল ইসলাম লিখন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে রাজধানী শহরের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘হ্যান্ডসাম ফেরিওয়ালা লিখন’ এখন অন্যতম। কিন্তু কেন? সেটাই বলছি এখন।

ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করা ২৯ বছর বয়সী লিখন ২ বছর বয়সে হারান বাবা নুরুল ইসলামকে। ২০০৯ সালে তাকে একা করে দিয়ে মা রওশন আরা বেগমও পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। ২০১১ সালে স্থানীয় একটি কলেজে ডিপ্লোমা পড়াকালীন দক্ষিণ কোরিয়া চলে যান। ৫ বছর সেখানে অবস্থানের পর দেশে ফিরে আসেন এবং শুরু করেন জীবনের আরেক অধ্যায়। যে অধ্যায়ের জন্য এখন তিনি এত আলোচিত।

গত মাস দুই ধরে রাজধানীর ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তায় নিজের ছোট্ট ভ্যান ‘ড্রিম ভ্যান’-এ করে বিক্রি করছেন কলেজ ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, সানগ্লাস, স্যান্ডেল, টি-শার্ট, ক্যাপসহ টুকিটাকি আরও বহুকিছু। কেন এই কাজ বেছে নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে লিখন বলেন, কোনো কাজই ছোট নয়। সব কাজই মহান। কোনো কাজের মধ্যেই আসলে ভেদাভেদ নেই। কিন্তু আমাদের শিক্ষিত সমাজ এই ভেদাভেদের ফেরে পড়ে পছন্দমতো কাজ না পেয়ে অবক্ষয়ের দিকে ঝুঁকছে প্রতিনিয়ত। যেকোনো কাজ করার প্রতি আমাদের লজ্জাটা ভেঙে দেওয়ার জন্যই তিনি এই কাজ বেছে নিয়েছেন। আগামীতে রিকশা চালানো থেকে শুরু করে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করার পরিকল্পনার কথাও জানালেন তিনি।

পরিবারের বাকি সদস্যরা উচ্চবিত্তশালী হলেও নিজে কিছু করার তাগিদে ড্রিম ভ্যান নিয়ে স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু লিখনের। দেশের বাইরে গেলে জীবনযাপনের জন্য যদি যেকোনো কাজ করতে হয় আমাদের, তবে দেশেই নয় কেন—এই চিন্তা থেকে লিখনের এই নীরব বিপ্লব শুরু। দিনে দিনে যাকে আরও বড় করে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

লিখনের দেখানো পথে কেউ এগিয়ে গিয়ে যদি নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করেন, তবে সেটাই বড় সার্থকতা হবে বলে মন্তব্য সাধারণ মানুষের।

লিখনের দেখা পাওয়া যাবে ধানমন্ডির যেকোনো রাস্তায়। কোনো কাজকে ছোট মনে না করে, অসত্ পথে না গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন লিখনকে। জয়তু লিখন। জয়তু স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প বলেছে, বাংলাদেশ পুরোপুরি এনার্খীতে, তারা মাইনোরিটির উপর অত্যাচার করছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬



৩ দিন পরে আমেকিকার ভোট, সাড়ে ৬ কোটী মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে; ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫১ ভাগ। এই অবস্হায় সনাতনীদের দেওয়ালী উপক্ষে ট্রাম্প টুউট করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×