"আপা একটা ফুল নেন.. ভাইজান একটা চকলেট নেন.।"
এসব কথাগুলোর সাথে আপনি, আমি আমরা সবাই অনেক পরিচিত তাই না? এই শহরে রাস্তায় চলতে ফিরতে এসব বাচ্চাদের সাথে আমাদের সবারই একবার না একবার দেখা হয়েই যায়। কখনও বা আপনি একটু মনোযোগ দেন ওদের প্রতি, কখনও বা দেন না। এটা নির্ভর করে মুডের ওপর অনেকটা। কিন্তু মাঝে মাঝে বিশেষ কিছু সময়ে এই বাচ্চাদের, যাদেরকে রনবী স্যার নাম দিয়েছেন "টোকাই" -তাদের দাম বেড়ে যায়। এই যেমন ধরুন এই সময়টায় -রোজা, ঈদের আগে, শিশু দিবসে ইত্যাদি ইত্যাদি।
একটা বিশেষ কারণে কিছুদিন আগে কয়েকজন টোকাইয়ের ইন্টারভিউ নিতে হয়েছিল। ভেবেছিলাম হাল্কার ওপর ঝাপসা কিছু কথা বলে ছেড়ে দেব। কিন্তু বাস্তবতা দেখা গেল ভিন্ন।
একেকজনের লাইফস্টাইল একেকরকম। কেউ কথা বলতে পছন্দ করে, কেউ বা কথাই বলতে চায় না, কেউ আবার কথা বলতে গেলে নানারকম অভিব্যক্তি দেখায়। কারও বাবা -মা আছেন কারওবা একজন আছেন একজন নেই। নিজেদের ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিচ্ছে ওরা ওদের কাজের মধ্য দিয়ে।
একটা বাচ্চা মেয়ে জানালো তার এই এতটুকুন বয়সেই কিছু পুরুষ নামধারী জানোয়ারের ইঙ্গিতের কথা। জানতে চাইলাম কাউকে বলেছে কিনা এ ব্যাপারে। বাচ্চাটা বলল সিগন্যালের এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে বলেছে এবং এখন ওই সার্জেন্ট ওর দিকে খেয়াল রাখছেন।
একটা ছেলে ভাবলেশহীন ভাবে বলে গেল খুব ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার কারণে ওর এখন ওর মাকে মনে পড়ে না। বাবা ওকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করে সংসার পেতেছে অনেক আগেই। কিন্তু এখন ছেলের কাছে নাকি টাকা চায়। কিন্তু ছেলে এক পয়শাও দিতে রাজি না। যে দাদা -দাদী ওকে বড় করেছে, ও তাদের জন্যই সবকিছু করতে চায়।
ওদের ডাক্তার হবার অনেক ইচ্ছে ছিল। কিন্তু জীবনের টানাপড়েনে ইচ্ছেটা এখন ফিকে হয়ে গেছে অনেক। এখন শুধু খেয়ে পড়ে বাঁচতে চায়।
কাজটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। মনেও থাকল না ওদের কথা।