বলিউডের দুর্দিন শুরু হল মনে হয়। দর্শকেরা লাল সিং চাড্ডা বয়কট করেছে। তবে বয়কট না বলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বললে হয়তোবা আরো পারফেক্ট হয়। প্রথম কয়েকদিন এই ছবি আশানুরূপ ব্যবসা করলেও সপ্তাহ না ঘুরতেই ইউ টার্ন নিয়ে নিল। এটা অবশ্য কেউ ভাবতে পারেনি। বলিউড আসলে মানুষের মনের কথা পড়তে পারেনা, তারা কি চায় - সেটা বুঝতে পারেনা। সেটা পারার কারণে তামিল তেলেগু চলচ্চিত্র হিট হয়, আর বলিউড ফ্লপ হয়।
ফরেস্ট গাম্প সিনেমার মাথামুন্ডু আমি কিছুই বুঝিনি। আগাগোড়া কি দেখালো বা কি মেসেজ দিলো, সেটা আমার এন্টেনায় ধরেনি। কিন্তু এটি যেহেতু ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তাই বুঝে নিয়েছি যে আমি কম বুঝি, তাই ভালো লাগেনি। সেই বোঝার চেষ্টা থেকেই লাল সিং চাড্ডা দেখা। কিন্তু ফলাফল একই। এই সিনেমায় নেই কোন ড্রামা, নেই কোন সাসপেন্স, কোন টুইস্ট - কি আছে যা দর্শক ধরে রাখবে, সেটাই বুঝা যায়নি। উপরুন্তু কিছু কিছু নাটকীয়তা আছে, যা বিরক্তিকর লেগেছে।
- বুলিদের তাড়া খেয়ে শারীরীক প্রতিবন্ধী ছেলেটা তার ক্র্যাচ ম্যাচ ভেঙে যে দৌড় দিল, সেটা কি স্বাভাবিক, নাকি বাস্তব?
- কেবলমাত্র প্রেমিকার 'ভাগ' শব্দ শুনে দৌড়ায়, পিস্তলের শব্দে রিএ্যাক্ট করেনা - সে আবার জাতীয়/ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টে কোয়ালিফাই করে কি করে?
- কেবলমাত্র ব্র্যান্ড নাম পালটে কোন ব্যবসা কি পাতাল থেকে আকাশে উঠানো যায়? প্রডাক্ট কোয়ালিটি কোন ব্যাপারই না?
ইন্ডিয়ার দর্শকেরা এখন আর এত বোকা নয় যে এসব অখাদ্য গিলবে। পিস্টার পারফেকশনিস্টের সৌজন্যে প্রথম কিছুদিন তারা গিলেছে - এরপর আর হজম না হওয়াতে ফেরত এসেছে।
কিন্তু ইন্ডিয়ার হিন্দু উগ্রবাদীদের লাভ হয়েছে। সিনেমার কোন এক দৃশ্যে এক মুসলিম সৈনিকের প্রশ্নের জবাবে সে পূজা পাঠ কেন করেনা, তার একটা উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়েছে। কোন ধর্মপ্রাণ হিন্দুর পক্ষে সে ব্যখ্যা গ্রহণযোগ্য হবেনা। তাই প্রতিক্রিয়া ওঠা স্বাভাবিক।
ইন্ডিয়ায় মুসলিম বিদ্বেষী সিনেমাগুলো ভালো ব্যবসা করে। অতীতে দেখা গেছে গাদার, ভীর জারা, এক থা টাইগার, সিক্রেট সুপারস্টার, পদ্মাবত, কাশ্মীর ফাইলস - এই সিনেমাগুলো হিট হয়েছে। মুসলিম বিদ্বেষী সেন্টিমেন্ট সিনেমা ব্যবসার এক চমৎকার উপাদান। পিকে ছবিটা কিছুটা হিন্দু বিদ্বেষী বলা চলে, কিন্তু আমীর খানের অভিনয় গুণে সে বিদ্বেষ অনেকখানি উৎরে যাওয়ায় ভারতীয়রা সিনেমাটি এক্সেপ্ট করতে আপত্তি জানায়নি।
কিন্তু মুসলিম নামধারী কোন অভিনেতা হিন্দু চরিত্রে অভিনয় করে যদি ডায়ালগ দেয়, "আমি পূজা করা পছন্দ করিনা" - সেটা হিন্দু ধর্মপ্রাণ মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই।
আমাদের দেশে পিযুষ বন্দোপাধ্যায় নামে একজন অভিনেতা ছিল। সে বিটিভিতে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় অভিনয় করত মূলত রাজাকারের চরিত্রে। সুন্নতী পোষাকে সে যখন ইয়া বড় দাঁড়ি, হাতে তসবীহ নিয়ে, মাথায় বিশাল টুপি পড়ে পাক সেনাদের পেছন পেছন ঘুরত, তখন মনে হত, কি মজা! পোশাকের অপমানও করা হল, অভিনয়ও করা হল। আমীর খানকে দেখেও সম্ভবত ভারতীয়রা সেরকম ভাবতে শুরু করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৩২