( বিঃদ্রঃ হাজং জাতিসত্তার সংস্কৃতি বাংলার সংস্কৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ । বাংলা ভাষী এবং বাংলা জানেন এমন অন্যদের কাছে উপস্থানের জন্য এই অনুবাদটি করেছি )
এই গীত হাজং রমণীদের বারোমাসী গানঃ ঐতিহ্যবাহী রসিগীত যাকে বাংলায় অনুবাদ করলেঃ-
০১ । অগ্রাহায়ন
সাধুরে,
আগুন মাসে গো সাধু ক্ষেত ভরা ধান ,
কেহ কাঁটে, কেহ মারায়, কেহ করে নবান ।
নবান করিয়া সাধুরে মহানন্দে খায় ,
সেই সময় আমার সাধু বানিজ্যেতে যায় ।
বানিজ্যেতে গিয়ে সাধু আমায় রইলে ভুলে ,
ধরেছে ডালিম ফল খেতে না দিলে ।
কাঁচা ডালিম খেলে সাধু দাঁতে লাগে কষ ,
পাঁকা ডালিম খেলে সাধু মিলে মধুর রস ।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০২ । পৌষ
সাধুরে,
পৌষ মাসে গো সাধু পুঁজি অধিকারী ,
পতি ভক্তি করে যারা ভাগ্যবতী নারী ।
পতি ধন, পতি মন, পতি সকল সার ,
পতি বিনে নাইরে গতি এই ভব সংসার ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০৩ । মাঘ
সাধুরে,
মাঘ মাসেতে সাধু লাগে ভীষন জার ,
কাঁথা-বালিশ নিয়া আমি কান্দি বারে বার ।
সাধু আমার শীতের কাঁথা সাধু আমার প্রান ,
ঘরে থাকলে সাধুরে আমি জড়িয়ে শুইতাম ।
সাধু আমায় গেছে ফেলে দূর পরবাসে ,
এত বেশী শীতে আমার কেমনে প্রাণ বাঁচে ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০৪ । ফাল্গুন
সাধুরে,
ফাল্গুন মাসেতে সাধুরে ফাল্গুয়া খেলে রাজা ,
হাতির কপালে দেখি সিঁদুরের ফোঁটা ।
সিঁদুরের ফোঁটা আর চন্দনের ফোঁটা ,
যে নারীর পতি নাইরে মনে কত ব্যাথা ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০৫ । চৈত্র
সাধুরে,
চৈত্র মাসেতে সাধুরে খরায় মারে টান ,
পানির তৃষ্ণা লাগে সাধু বাঁচে না এ প্রাণ ।
রান্না করে ভাত আমি ঢেলে রাখি পাতে ,
কোথায় আছে আমার সাধু বলবো কার কাছে ।
সাধু যদি থাকতো বাড়ী খেতো গাভীর দুধ ,
রাত-দিন সাধুর সাথে করতাম কৌতুক ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০৬ । বৈশাখ
সাধুরে,
বৈশাখ মাসেতে সাধুরে জন্মে পাখির ছাও ,
গাছের আগা থেকে ছাও করে কত রাও ।
পাখির মত কেঁদে ভাসাই ঘরের কোনে বসে ,
সাধু আমার রইলো ভুলে কোন যুবতী পেয়ে ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০৭ । জৈষ্ঠ্য
সাধুরে,
জৈষ্ঠ্য মাসেতে সাধুরে ক্ষেত-খোলায় ধান ,
ডাহুক ডাকে, কুড়া ডাকে কাঁপে আমার প্রাণ ।
ডাহুক ডাকে, কুড়া ডাকে, ডাকে কত পাখি ,
যে নারীর স্বামী নাইরে আক্ষেপে কাটে রাতি ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০৮ । আষাঢ়
সাধুরে,
আষাঢ় মাসেতে সাধু সবাই করে আশা ,
বনের বাবুই পাখিগুলো তারাও বাঁধে বাসা ।
জোড়া জোড়া মিলে থাকে বনের বাবুই পাখি ,
আমি শুধু অভাগিনী একা ঘরে থাকি ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
০৯ । শ্রাবণ
সাধুরে,
শ্রাবণ মাসেতে সাধু শ্রাবণ ব্রত করে ,
দৈ-চিরা খায়রে সবাই গোষ্ঠী নিয়ে ঘরে ।
আমার সাধু নাইরে ঘরে ভেবে দিন যায় ,
দৈ-চিরা নইয়ে কাঁদি হায়রে হায়রে হায় ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
১০ । ভাদ্র
সাধুরে,
ভাদ্র মাসেতে সাধুরে পেঁকে পড়ে তাল ,
তালপিঠা বানিয়ে আমি রাখি কতকাল ।
কেহ চায় আঁড়ে আঁড়ে, কেহ চেয়ে থাকে ,
আর কতকাল রাখি যৌবন লোকের বৈরী হয়ে ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
১১ । আশ্বিন
সাধুরে,
আশ্বিন মাসেতে সাধুরে মন্ডপেতে গিয়ে ,
কত নারী করে পূজা গন্ধধূপ দিয়ে ।
মন্ডপেতে গিয়ে আমি চেয়ে নেবো বর ,
কোথায় আছে আমার সাধু ফিরে আসুক ঘর ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।
১২ । কাতিক
সাধুরে,
কাতিক মাসেতে দিবো বাস্তুভূমির বাঁতি ,
আমি নারী কেঁদে মরি ধরে সাধুর ছাতি ।
দিন গেলো মাস গেলো, গেলো সারা বছর ,
কোথায় রইলো আমার সাধু আমায় কইরা পর ।।
সাধুরে, সেই মাস গেলো সাধু এই মাস গেলো,
কান্দে যুবতী কন্যা হাত দিয়ে কপালে ।।