somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ : The Painted Veil (2006) মানব-মানবীর মনস্তত্ত্ব ও সম্পর্কের রসায়ন

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তত্ত্বীয় ভালবাসা কি সম্ভব?নাকি অন্যান্য পরম বিষয়ের মত এটিও সম্ভব নয়?কথায় বলে আগুনে না পুড়লে নাকি ধাতু খাঁটি হয় না।যে ভালবাসায় কোন খাঁদ নেই,সেটি কি করে পরম হয়?বরং চরম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যে এই খাঁদকে নিখাদ করতে পারে,সেই তো সত্যিকারের ভালবাসা।বেশীরভাগ রোমান্টিক মুভিতে নিখাদ ভালবাসার ছিমছাম গল্প আঁকা হয়,কেন্দ্রীয় চরিত্রকে নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়।আলটিমেটলি লুতুপুতু প্রেমে আর খানিক কমেডির মিশ্রণে প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনই মুল ভবিতব্য,এমন মুভি দেখতে দেখতে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম।অনেক দিন ধরেই তাই এমন একটি মুভি খুঁজছিলাম,যেখানে মানব মানবীর রোমান্টিক আবহের তুলনায় তাদের মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বকে প্রাধান্য দেয়া হবে।সম্প্রতি দেখা "The Painted Veil"এ অবশেষে এই আবহ পেলাম।

The Painted Veil বের হয়েছে ২০০৬ এ।ছবিটি চীন ও আমেরিকার যৌথ প্রযোজনায় তৈরি।পরিচালনা করেছেন John Curran.পরিচালকের আর কোন মুভি দেখি নি।অভিনয় করেছেন Edward Norton, Naomi Watts, Toby Jones, Liev Schreiber প্রমুখ।ছবিটি এর আগেও দুবার চিত্রায়িত হয়েছে,যথাক্রমে ১৯৩৪ ও ১৯৫৭ সালে।১৯৩৪ সালের ভার্সনে স্বনামধন্য Greta Garbo অভিনয় করেছিলেন।



ছবিটি মূলত W. Somerset Maugham এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি।এই লোকটা কি করে যে এত এত ফাটাফাটি উপন্যাস ও ছোট গল্প লিখে গেছেন,ভাবতে অবাক লাগে।মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে খুব সিম্পলভাবে নাড়াচাড়া করার দক্ষতায় মম ছিলেন ভীষণ পটু।যা তার রচিত এই উপন্যাস ভিত্তিক চলচ্চিত্রে উপজীব্য হয়ে উঠেছে।The Painted Veil নামটা তিনি নিয়েছিলেন Percy Bysshe Shelley-র একটি সনেটের প্রথম লাইন "Lift not the painted veil which those who live / Call Life" থেকে।

ছবির প্লট এই রকম...

মাত্র দুইদিনের পরিচয়ে bacteriologist উইলিয়াম ফেন-এর সাথে কিটির বিয়ে হয়ে যায়।ফেন ছিল পড়ুয়া,ধীরস্থির আতেল প্রকৃতির লোক,অপরদিকে কিটি চপলা চঞ্চলা জীবনকে উপভোগ করতে চাওয়া একটি মেয়ে।কিটি বিয়েতে রাজী হয়েছিল শুধু তার বাচাল মার থেকে দূরে থাকার কারণে,কিন্তু ফেন-এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ছিল লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট।যাহোক বিয়ের কিছুদিনের মাথায় নবদম্পতি ফেন-এর কর্মস্থল সাংহাই এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।



সাংহাইতে তারা নিজেদের আবিষ্কার করতে শুরু করে।ফেন-এর বুকিশ লাইফস্টাইল,রুটিন বাউন্ড লাইফ ফলশ্রুতিতে কিটির প্রতি অবহেলা ধীরে ধীরে কিটিকে দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।এই একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে সে চার্লিস টাউনসেন্ড নামে এক বিবাহিত ব্রিটিশ ভাইস কনসালের সাথে পরকিয়ার লিপ্ত হয়।কথাসর্বস্ব টাউনসেন্ডের বাগপটুতায় সে প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে এবং দেহ বিনিময় করে।

কিটির ধারণা ছিল তার নীরস স্বামী এই ব্যাপারে টের পাবে না।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ফেন তাকে সরাসরি চার্জ করে এবং দুটো অপশন দেয়-হয় তাকে তার স্বামীর সাথে কলেরা এপিডেমিক দুর্গত অজপাড়াগায় যেতে হবে অথবা adultery-র জন্য তাকে ডিভোর্স দিতে হবে।কিটি টাউনসেন্ডের সাথে গোপনে দেখা করে তাকে বিয়ে করার জন্য আহবান জানায়।কিন্তু টাউনসেন্ড কিটিকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।কিটি শাখের করাতের মধ্যে পড়ে গিয়ে অবশেষে সম্পুর্ন অনিচ্ছা সত্ত্বে ফেন-এর সাথে কলেরা দুর্গত অঞ্চলে রওনা হয়।

নাহ...এইভাবে বলে ফেললে আপনারা মুভির মজাটা পুরুটাই মিস করবেন।আমি যেটুকু বলে ফেলেছি সেটুকু মাত্র গল্পের শুরু।এরপর থেকে পুরু মুভিতে কিটি ও ফেন-এর অন্তর্দ্বন্দ্ব,চরাই উতরাই এবং অবশেষে বিশুদ্ধ প্রেম অর্জন মোটকথা ছবিটিকে চরমভাবে বিশেষায়িত করেছে।মানব মনের গলিঘুপচিতে যে জটিল রসায়ন কাজ করে,তার উপর অর্জিত ভালবাসার প্রভাব কতটুকু সেটা এই মুভিতে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ছবিটার ট্যাগলাইন হল,"“Sometimes the greatest journey is the distance between two people.”কিটি ও ফেন-এর মানষিক দূরত্বের যে প্রকৃতি পুরু ছবি জুড়ে চিত্রিত,মুভির শেষভাগে তাকে জয় করার যে সংগ্রাম কিটি করেছে..মোটকথা মনোমুগ্ধকর।mismatched lifestyles, set against cultural turmoil and the menace of death-এই ধরণের ব্যাকগ্রাউন্ডে যা আরো বেশি মহিমামন্ডিত হয়েছে।মুভির ডায়ালগ গুলো অসাধারণ,বিশেষত Mother Superior এর ডায়ালগগুলো এখনো কানে লেগে আছে।

পুরু ছবিতে মিউজিক কম্পোজার Alexandre Desplat অসাধারণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন,বিশেষত পিয়ানোর ব্যবহারে।এই ছবির জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব জিতে নেন।

মোটকথা সচরাচর রোমান্টিক মুভি থেকে যারা একটু স্বস্তি খুঁজছেন,তাদের জন্য এটা একটা মাস্ট সি।আরেকটু স্পেসিফাই করি-যাদের কাছে Notebook মুভিটা ভাল লেগেছে,তাদের জন্য এই মুভিটার রিকমেন্ডেশন রইল।

আই এম ডি বি র‍্যাঙ্কিং ৭.৫।

ডাউনলোড লিঙ্ক

মিডিয়াফায়ার থেকে

টরেন্ট থেকে

স্টেজভু থেকে

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৩৬
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×