তত্ত্বীয় ভালবাসা কি সম্ভব?নাকি অন্যান্য পরম বিষয়ের মত এটিও সম্ভব নয়?কথায় বলে আগুনে না পুড়লে নাকি ধাতু খাঁটি হয় না।যে ভালবাসায় কোন খাঁদ নেই,সেটি কি করে পরম হয়?বরং চরম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যে এই খাঁদকে নিখাদ করতে পারে,সেই তো সত্যিকারের ভালবাসা।বেশীরভাগ রোমান্টিক মুভিতে নিখাদ ভালবাসার ছিমছাম গল্প আঁকা হয়,কেন্দ্রীয় চরিত্রকে নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়।আলটিমেটলি লুতুপুতু প্রেমে আর খানিক কমেডির মিশ্রণে প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনই মুল ভবিতব্য,এমন মুভি দেখতে দেখতে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম।অনেক দিন ধরেই তাই এমন একটি মুভি খুঁজছিলাম,যেখানে মানব মানবীর রোমান্টিক আবহের তুলনায় তাদের মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বকে প্রাধান্য দেয়া হবে।সম্প্রতি দেখা "The Painted Veil"এ অবশেষে এই আবহ পেলাম।
The Painted Veil বের হয়েছে ২০০৬ এ।ছবিটি চীন ও আমেরিকার যৌথ প্রযোজনায় তৈরি।পরিচালনা করেছেন John Curran.পরিচালকের আর কোন মুভি দেখি নি।অভিনয় করেছেন Edward Norton, Naomi Watts, Toby Jones, Liev Schreiber প্রমুখ।ছবিটি এর আগেও দুবার চিত্রায়িত হয়েছে,যথাক্রমে ১৯৩৪ ও ১৯৫৭ সালে।১৯৩৪ সালের ভার্সনে স্বনামধন্য Greta Garbo অভিনয় করেছিলেন।
ছবিটি মূলত W. Somerset Maugham এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি।এই লোকটা কি করে যে এত এত ফাটাফাটি উপন্যাস ও ছোট গল্প লিখে গেছেন,ভাবতে অবাক লাগে।মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে খুব সিম্পলভাবে নাড়াচাড়া করার দক্ষতায় মম ছিলেন ভীষণ পটু।যা তার রচিত এই উপন্যাস ভিত্তিক চলচ্চিত্রে উপজীব্য হয়ে উঠেছে।The Painted Veil নামটা তিনি নিয়েছিলেন Percy Bysshe Shelley-র একটি সনেটের প্রথম লাইন "Lift not the painted veil which those who live / Call Life" থেকে।
ছবির প্লট এই রকম...
মাত্র দুইদিনের পরিচয়ে bacteriologist উইলিয়াম ফেন-এর সাথে কিটির বিয়ে হয়ে যায়।ফেন ছিল পড়ুয়া,ধীরস্থির আতেল প্রকৃতির লোক,অপরদিকে কিটি চপলা চঞ্চলা জীবনকে উপভোগ করতে চাওয়া একটি মেয়ে।কিটি বিয়েতে রাজী হয়েছিল শুধু তার বাচাল মার থেকে দূরে থাকার কারণে,কিন্তু ফেন-এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ছিল লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট।যাহোক বিয়ের কিছুদিনের মাথায় নবদম্পতি ফেন-এর কর্মস্থল সাংহাই এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সাংহাইতে তারা নিজেদের আবিষ্কার করতে শুরু করে।ফেন-এর বুকিশ লাইফস্টাইল,রুটিন বাউন্ড লাইফ ফলশ্রুতিতে কিটির প্রতি অবহেলা ধীরে ধীরে কিটিকে দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।এই একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে সে চার্লিস টাউনসেন্ড নামে এক বিবাহিত ব্রিটিশ ভাইস কনসালের সাথে পরকিয়ার লিপ্ত হয়।কথাসর্বস্ব টাউনসেন্ডের বাগপটুতায় সে প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে এবং দেহ বিনিময় করে।
কিটির ধারণা ছিল তার নীরস স্বামী এই ব্যাপারে টের পাবে না।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ফেন তাকে সরাসরি চার্জ করে এবং দুটো অপশন দেয়-হয় তাকে তার স্বামীর সাথে কলেরা এপিডেমিক দুর্গত অজপাড়াগায় যেতে হবে অথবা adultery-র জন্য তাকে ডিভোর্স দিতে হবে।কিটি টাউনসেন্ডের সাথে গোপনে দেখা করে তাকে বিয়ে করার জন্য আহবান জানায়।কিন্তু টাউনসেন্ড কিটিকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।কিটি শাখের করাতের মধ্যে পড়ে গিয়ে অবশেষে সম্পুর্ন অনিচ্ছা সত্ত্বে ফেন-এর সাথে কলেরা দুর্গত অঞ্চলে রওনা হয়।
নাহ...এইভাবে বলে ফেললে আপনারা মুভির মজাটা পুরুটাই মিস করবেন।আমি যেটুকু বলে ফেলেছি সেটুকু মাত্র গল্পের শুরু।এরপর থেকে পুরু মুভিতে কিটি ও ফেন-এর অন্তর্দ্বন্দ্ব,চরাই উতরাই এবং অবশেষে বিশুদ্ধ প্রেম অর্জন মোটকথা ছবিটিকে চরমভাবে বিশেষায়িত করেছে।মানব মনের গলিঘুপচিতে যে জটিল রসায়ন কাজ করে,তার উপর অর্জিত ভালবাসার প্রভাব কতটুকু সেটা এই মুভিতে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ছবিটার ট্যাগলাইন হল,"“Sometimes the greatest journey is the distance between two people.”কিটি ও ফেন-এর মানষিক দূরত্বের যে প্রকৃতি পুরু ছবি জুড়ে চিত্রিত,মুভির শেষভাগে তাকে জয় করার যে সংগ্রাম কিটি করেছে..মোটকথা মনোমুগ্ধকর।mismatched lifestyles, set against cultural turmoil and the menace of death-এই ধরণের ব্যাকগ্রাউন্ডে যা আরো বেশি মহিমামন্ডিত হয়েছে।মুভির ডায়ালগ গুলো অসাধারণ,বিশেষত Mother Superior এর ডায়ালগগুলো এখনো কানে লেগে আছে।
পুরু ছবিতে মিউজিক কম্পোজার Alexandre Desplat অসাধারণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন,বিশেষত পিয়ানোর ব্যবহারে।এই ছবির জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব জিতে নেন।
মোটকথা সচরাচর রোমান্টিক মুভি থেকে যারা একটু স্বস্তি খুঁজছেন,তাদের জন্য এটা একটা মাস্ট সি।আরেকটু স্পেসিফাই করি-যাদের কাছে Notebook মুভিটা ভাল লেগেছে,তাদের জন্য এই মুভিটার রিকমেন্ডেশন রইল।
আই এম ডি বি র্যাঙ্কিং ৭.৫।
ডাউনলোড লিঙ্ক
মিডিয়াফায়ার থেকে
টরেন্ট থেকে
স্টেজভু থেকে