২০১৬ অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া অমর একুশে বইমেলায় লেখকদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবে লেখকদের অনেকেই এই আশ্বাসের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছেন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া একুশে বইমেলার মাসব্যাপী আয়োজন। ২৬ ফেব্রুয়ারি-২০১৫ অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে টিএসসিতে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায়কে, দুজন কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যাকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। বন্যার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি খুনীদের চাপাতির কোপে কেটে পড়ে যায়। গত বছর একই রকম আক্রমণে নিহত হন আরো একজন প্রকাশক।
দেশে গত ৩ বছরে খুন হয়েছেন ১১ প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার। আরও ৮৪ প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার আছেন হিটলিস্টে। তারা একের পর এক খুন হলেও চিহ্নিত হচ্ছে না নির্দেশদাতারা। এখনও পর্যন্ত এসব হত্যার কোনটিরই বিচারও হয়নি। প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার একের পর এক খুনের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় অনেকেই দেশত্যাগ করেছেন। একের পর এক প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার খুনের ঘটনা বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়ভারে অভিযুক্ত হচ্ছে। এতে স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, রাজনীতিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবারের বইমেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে এবং ২০০ টি সিসি ক্যামেরা বসানোসহ নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।পাশাপাশি পুলিশ বলছে লেখকদের জন্য প্রয়োজনে বিশেষ নিরাপত্তাও দেয়া হবে।
“চাহিদার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা দেয়া হবে। আবেদনের পর আমরা যাচাই করে দেখবো এবং তার প্রেক্ষিতে আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।” বলেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গতবছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বইমেলার নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ এর আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি, ব্লগার বা লেখক বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন মনে করেন, তবে বইমেলায় আমাদের কন্ট্রোল রুমে এসে জানাতে হবে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব। মেলার দুই প্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে দুই শতাধিক সিসি ক্যামেরা ও ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অধিকতর নিরাপত্তার লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক ৭ ক্রস ফুট প্যাট্রোল টিম ও মেলার বাইরে শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ৬টি ক্রস ফুট প্যাট্রোল টিম থাকবে। তা ছাড়া ২৪ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ফোর্সসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। বইমেলা প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় বোম্ব ডিজপোজাল টিম এবং ডগ স্কোয়াডও থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। ব্লগার হত্যায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, অপরাধমুক্ত সমাজ কল্পনা করা যায় না। তবে আমাদের এখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। ৯৮ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই আমাদের সফলতা রয়েছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৯৬-৯৭ শতাংশ ঘটনা ঘটার আগেই আমরা রোধ করেছি, যা আপনারা জানেন না। ডিএমপি কমিশনার বলেন, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি চক্র। ওই চক্রকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
গতবছর চারপাশে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার পরও বাঙালির সংস্কৃতি ও মননের প্রতীক একুশে বইমেলা থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মতো একইরকম ‘জঙ্গি কায়দায়’ লেখক অভিজিৎ রায়ের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই কর্মকর্তাও স্তম্ভিত হয়েছিল এবং পরর্বতীদিন ২৭/০২/২০১৫ শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জঙ্গিরা কতোটা ডেসপারেট হতে পারে তার প্রমাণ দিয়েছে গতকাল। পাশেই থানা, বইমেলার প্রবেশমুখে পুলিশ, সবগুলো প্রবেশপথে পুলিশ... এরপরও এখানে একটা ঘটনা ঘটিয়ে গেছে তারা।”
এ প্রেক্ষাপটেই এবারের বইমেলায় নিয়ে আমারও মনে হচ্ছে লেখক ও প্রকাশকদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে একটা চাপা উদ্বেগ কাজ করছে। এ ব্যাপারে ডিএমপির উপর আশ্বস্ত হতে পারছেন না লেখক এবং ব্লগারদের অনেকেই।কেউ কেউ নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশও করছেন। জানি না এইবার কারবলি হবার পালা, শুধু এইটুকু জানি সাহস করে বইমেলায় অংশ নিলেও আমরা কেউই আসলে নিরাপদ নই।
“পুলিশের নিরাপত্তা কতটুকু কার্যকর হবে সেটা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে সংশয় অনুভব করি” সাজ্জাদ শরিফ স্যারের সাখে সহমত লেখকদের নিরাপত্তার এসব প্রতিশ্রুতির পর কথা আর কাজে কতটা মিল থাকবে তা নিয়ে তার সংশয় রয়েছে।“যখন লেখকদের মতামত প্রকাশ এবং তাদের শারিরীক অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে, তখন সরকার আদৌ এদের পক্ষে আছেন কিনা সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোন কথা শুনিনি বরং একটি দ্যোদুল্যমানতা দেখেছি। রাজনৈতিক মহলে যখন দেখি যে তাদের ব্যাপারে স্পষ্ট কোন অবস্থান নেই, তখন মধ্যবর্তী স্তরে পুলিশের নিরাপত্তা কতটুকু কার্যকর হবে সেটা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে সংশয় অনুভব করি।”সাজ্জাদ শরিফ
লেখকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রত্যেককে পৃথকভাবে নিরাপত্তা দেয়া কতটা বাস্তবসম্মত এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন লেখকরা। গত নববর্ষে কড়া নিরাপত্তার মাঝেও নারীদের হয়রানির যে অভিযোগ এসেছিলো সেই প্রসঙ্গও তুলে আনছেন কেউ কেউ।এরপরও
সফল হউক এবারের বইমেলা
জানি না এইবার হবে কি বন্ধ, নতুন কেউবলি হবার পালা!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯