স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে যদি আকাশ সমান ব্যবধান হয় তা অসমই বলতে হবে। অথবা দিবা স্বপ্ন বা আকাশ কুসুম!
আমরা স্বপ্ন দেখছি উন্নয়নের মহাসড়কের!
মধ্যম আয়ের দেশের।
স্বপ্নগুলো ভাল। কোন সন্দেহ নেই। এরচে উত্তম স্বপ্ন দেখাতেও কোন বাঁধা নেই।
কিন্তু বাস্তবতা! অথবা আমাদের চলমান নীতি, পলিসি, পথ চলায় তা কি এচিভ করতে পারব?
স্বপ্ন আর বাস্তবতার সমন্বয়ে গৃহিত পদক্ষেপগুলো কি? কেমন?
উন্নয়নের মূল বলা যেতে পারে গতি। আপনার চলার নূন্যতম বাঁধাহীন গতি। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার নিশ্চয়তা। তা ব্যক্তিক অফিস হোক বা আমদানী রফতানির পণ্য হোক বা জরুরী মুমুর্ষ রোগী।
অথচ ঢাকায় যা কল্পনাও করা যায় না। মিরপুর/ উত্তরা থেকে মতিঝিলের দূরত্ব মাত্র ২০-২৫ কিলো। ঈদের ছুটি বা অন্য মুক্ত সময়ে যে দূরত্ব মাত্র ২০-২৫ মিনিটে পেরুনো যায়! অথচ ওয়ার্কিং ডেতে সেই একই দূরত্ব পার হতে সময় নেয় দেড় থেকে ২ ঘন্ট!!!
একজন ব্যবসায়ী কোন কাজে যদি ২ বারও আসা যাওয়া করতে হয় তার কর্ম দিবসের অর্ধেকেরও বেশী সময় পথেই নষ্ট হয়ে যায় পথে! যে বাস্তবতার ভূক্তভোগী আমরা সবাই সেই চিত্রই তুলে ধরল বিশ্বব্যাংক।
যানজটে ঢাকায় দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে জানাল বিশ্বব্যাংক।
সংবাদ সূত্র যানজটে ঢাকায় দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট: বিশ্বব্যাংক
এর অর্থ মূল্য ধারনা করুন-
চলুন একটু নজর বুলিয়ে নিই। একেবারে নূন্যতম মজুরী হিসাবে
প্রতিঘন্টা শ্রমমূল্য নূন্যতম ১০০ টাকা ধরে
দিনে ৮ ঘন্টা, মাসে ২৬ কর্মদিবস হিসেবে তা টাকার পরিমানে দাড়ায় বাৎসরিক ৯৯৮৪ কোটি টাকা!!
সাথে যুক্ত করুন বাড়তি জ্বালানী ব্যায়-
" the government has a record of another 964,500 registered motor vehicles. It is estimated that another 400,000 unregistered motor vehicles are also operating on the roads of Dhaka."
গড়ে ২ লাখ গাড়িও যদি জ্যামে অনদা ওয়ে থাকে এবং সারাদিনে গড়ে নূন্য ৩ লিটার (বাস্তবে আরো বেশী) জ্বলানী অপচয় হয়
তার আর্থিক মূল্য গড়ে প্রতি লিটার ৭০ টাকা ধরে বছের অপচয় হচ্ছে ১২৬০ কোটি টাকা!
গণপরিবহনকে উপেক্ষা করে প্রাইভেট কারের যে রেশীও যে কোন সুস্থ লোক থমকে যাবে!! কি করে সম্ভব!
আমাদের মন্ত্রী মহোদয়রা এত এত উন্নত দেশ সরকারী টাকা ঘুরে আসেন- ঐ সব দেশের ট্রাফিক, নিয়ম, ভাল সুন্দর পরিকল্পনা গুলো কি তাঁদের নজরে পরে না? এইসব শুভংকরের ফাঁকি না বুঝীয়ে শুধু স্বপ্ন দেখলে তা কখনোই পূরণ হবার নয়।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের দশা হয়েছে সেই বোকার মতো যে হাড়ির তলে ফূটা রেখে জল ভরতে চাইছে!!!
আমাদের এত্ত এত্ত বিভাগ এত্ত এত্ত পরিকল্পনা কমিশন এইসব শ্বেতহস্তি প্রতিষ্ঠানের পিছনে বাৎসরিক ব্যায়তো কম নয়! তারা করছে টা কি?
দীর্ঘমেয়াদী সঠিক পরিকল্পনা করতে না পরালে জনতার কাছে উন্মুক্ত পরিকল্পনা আহবান করুক। সেরা ৫টি পরিকল্পনা বাছাই করে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করুক। এতে লজ্জ্বার কিছূ নেই। সবাই সবরকম ভাবতে পারে না। আবার সবাই সব স্থানে নেইও। এরও সমন্বয় করতে হবে দেশের স্বার্থে জনগনের স্বার্থে।
একট বাসযোগ্য ঢাকা, গতিশীল ঢাকা সময়ের প্রয়োজন। বাসঅযোগ্য শহরের তালিকায় ১-৫ এর মধ্যে থেকে আর যাই হোক অর্বচীন স্বপ্ন দেখা যাবে বটে-বাস্তবতা অসম্ভব অধরাই রয়ে যাবে।
সময়ের প্রয়োজনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াই দূরদর্শীতা, প্রজ্ঞা।
আমাদের রাজনীতিবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজ প্রকৃত প্রয়োজনের বিষয়ে লোক দেখানো কর্মসূচি বা বক্তৃতা বাদ দিয়ে প্রকৃত কাজের শুভারম্ব করবেন কি? দূমদর্শীতা আর প্রজ্ঞার সমন্বয়ে বাঁচিয়ে রাখূন ঢাকা। বাঁচিয়ে রাখূন নাগরিকদের। বাঁচিয়ে রাখূন স্বপ্ন।
সত্যিকারের কাজ করলে কোন প্রচারণা লাগে না। মানুষ হৃদয় থেকেই তাঁকে আসনে বসিয়ে রাখে।
দোহাই লাগে -
অচল ঢাকাকে সচল করুন!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১১