Click This Link
চমৎকার একটা লেখা ছিল ফরহাদ উদ্দীন স্বপনের।
অধিকাংশ বিষয়ে দেয়া যুক্তিই মেনে নেবার মত। তারপরেও কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করায় এই লেখা।
আপনাদের সথে আমার মত পার্থক্য থাকতেই পারে। আমি মহাপন্ডিত নই । তবু সবার প্রতি অনুরোধ থাকল যুক্তি দিয়ে বিচার করবেন এ লেখাটা। কোন কিছু অবান্তর মনে হলে সুন্দর ভাবে ভাবাবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে যুক্তি উপস্থাপন করবেন।
বিঃদ্রঃ “..” (ইনভার্টেড কমা) র ভেতরে বোল্ড হরফে ফরহাদ উদ্দীন স্বপন এর বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
“ধর্মগুলো যুগের প্রয়োজন মেটাতেই প্রবর্তিত হয়েছিল এবং সীমাবদ্ধতার পরেও যুগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল।”
কথাটা আংশিক সত্য হলেও কিছু কথা থেকে যায় । মুসলমানদের মতে পৃথিবীর বুকে সবর্শেষ ধর্ম হিসেবে ইসলামের আবির্ভাব। অন্যান্য আসমানী কিতাব (ধর্মগ্রন্থ) ভালমত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এগুলোর কোনটিকেই ‘পূর্নাঙ্গ’ রূপে ঘোষণা কা হয়নি বরং প্রত্যকেটাই সমসাময়িক বিশেষ গোষ্ঠী বা জাতীর জন্য সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতার প্রেক্ষিতেই আবির্ভূত হয়েছিল এবং এসব ধর্মগ্রন্থের প্রতিটিতেই সব শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল এবং এসব ধর্ম প্রচারকারী প্রতিটি নবী ও রাসুল ই সব শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের বার্তা প্রচার করে গিয়েছেন। এমনকি বৌদ্ধ ও সনাতন ধর্মগ্রন্থেও (আমার যতদুর জানা আছে হিন্দু ধর্ম বলে কোন ধর্ম নেই। হিন্দু বলা হয় সিন্ধূ অববাহিকার বাসিন্দাদের এবং ‘হিন্দু’ শব্দটি প্রথম এই উপমহাদেশে আসা মুসলমান ধর্ম প্রচারকরা ব্যাবহার করেছেন এখানকার বাসিন্দাদেরকে বোঝাতে, কোন ধর্মকে নয়।) এমন ইঙ্গিত রয়েছে। (পরবর্তীতে সুযোগ হলে রেফারেন্স দেব, কারো কাছে রেডী রেফারেন্স থাকলে জানালে ভাল হয়)। একমাত্র ইসলামকেই ‘পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ভালমত কুরআন বিশ্লেষণ করলে অনুধাবন করা সম্ভব এর নির্দেশনা সমূহ এখনও কতটা যুগোপযোগী।
“কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থেই এ ধর্মগুলোর প্রবর্তন করা হয়েছিল”
ধর্ম সবসময় মজলুম গোষ্ঠীর পক্ষেই কথা বলে। তাই সেই বিশেষ গোষ্ঠীটা মজলুম গোষ্ঠীই।
“পৃথিবীর বাক পরিবর্তনকারী ধর্মগুলোকে এখন প্রগতি ও মত প্রকাশের বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে কেন বিবেচনা করা হচ্ছে? কারা এর জন্য দায়ী? আমার বিবেচনায়, এর জন্য দায়ী নিঃসন্দেহে যারা এই ধর্মগুলোকে তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মহীরুহে পরিনত করেছিল তাদেরই উত্তর পুরুষরা।“
একদম খাঁটি কথা। তবে এর জন্য ইসলাম দায়ী নয়, দায়ী সেই সব ‘মজিদ টাইপের কাঠ মোল্লারা’ যারা অযৌক্তিক ভাবে সম্পূর্ণরূপে নিজের স্বার্থ হাসিলে ধর্মের অপব্যাবহার করে। এই প্রবনতা আমাদের উপমহাদেশে সবচেয়ে প্রকট। কয়েকটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‘মীলাদ পড়া’, ‘পীরের দরগায় যাওয়া ও বিভিন্ন বিপদাপদের মুক্তি প্রার্থনা করা’, করো মৃত্যুতে ‘তিন দিন ও চল্লিশা পালন করা’। এ সবই এসব ‘কাঠ মোল্লা’ প্রবর্তিত রীতি যা তাদের ট্যাঁক ভারী করতে বিশেষ ভাবে সহায়ক এবং ইসলামে এসব আচার পালনের কোন নির্দেশ নেই। এসব মোল্লারা আবার মসজিদের দেয়ালে লিখে রাখে " মসজিদের ভিতর দুনিয়াবী আলাপ নিষিদ্ধ”। ইসলামকে জীবনের সাথে একাত্ম করতে না পারলে কোন লাভ নেই। ইসলাম মানে শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বা রমজান মাসে রোজা রাখা নয় বরং জীবনরে প্রতি পদক্ষেপে কিছু আদর্শকে ধারণ করে চলা।‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান’। মোল্লারা ইচ্ছাকৃত ভাবেই এমনটা করে যাতে সুন্দর এই ব্যবসা হাতছাড়া না হয়ে যায়। কেউ কখনও কোন মোল্লার বাড়ীতে মীলাদের দাওয়াতে বা কারো চল্লিশার খানা খেতে গিয়েছেন কিনা মনে পড়ে?
প্রতিটি ধর্মই একেকটা প্রতিষ্ঠান।প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু নিয়ম কানুন থাকে। এর মধ্যে কিছু অবশ্য পালনীয় যা ফরজ নামে অভিহিত এবং এর বাত্যায় ঘটলে শাস্তি প্রাপ্য হয়। একটা শ্রেণী কক্ষে যেমন ছাত্রদের হট্টগোল না করে সুশৃঙ্খল ভাবে অধ্যায়ন করা ফরজ যার বাত্যায় ঘটানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে শাস্তির ভয় দেখিয়ে কাউকে সুপথে আনার চেয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাকে ক্লাসে আকৃষ্ট করা শ্রেয়।
ইসাম খুবই সাধারন একটা ধর্ম যা সকলের জন্য সহজেই পালন যোগ্য। অতিরন্জিত বাড়াবাড়ি বা অলৌকিক কিছুর স্থান এতে নেই। এটা আমাদের মত মাটির ওপরে চলা মানুষের উপযোগী করেই প্রেরিত। উমুক আয়াত পড়লে অলৌকিক ভাবে রোগ ভাল হবে, তমুক আয়াতের তাবিজ গলায় ধারণ করলে শত্রু পরাস্ত হবে, ব্যাবসায় বরকত হবে, বালা মুসিবত কেটে যাবে- এ সবই সাধারন ধর্মভীরু মূর্খ মানুষকে ভয় দেখিয়ে/ প্রলুব্ধ করে পয়সা কামাইয়ের ধান্দা। সাধারন মানুষ অলৌকিক কে ভালোবাসে, অনেকে আবার শর্টকাট পদ্ধতিতে কাজ হাসিল করতে চায়। আর সেই সুযোগটাই নেয় ধর্ম ব্যাবসায়ী এক শ্রেণী। এরা প্রচার করার চেষ্টা করে জান্নাতের টিকেট এদেরই হাতে। সাধারন মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে এরা করে দিকভ্রান্ত আর শেষে দোষ গিয়ে চাপে ধর্মের উপর। তাবীজেই যদ সব মুসকিল আসান হতো তাহলে নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর চার খলিফাই সবাইকে তাবিজ কবচ, তুক তাক ও মন্ত্র তন্ত্র শিক্ষা দিয়ে যেতেন। রোগ ডাক্তার লাগতনা।
এই শ্রেণীর দৌরাত্ম এত বেশী বলেই আজ বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় ‘এই বুঝি ইসলাম’। আসলে এসবের কিছুই ইসলাম সম্মত নয়। তাই আমার মতে ধর্মের সংস্কার নয়, প্রকৃত ধর্ম বিকাশের প্রয়োজন; এসব জঞ্জাল সাফ করা প্রয়োজন। তাহলেই বোঝা যাবে ইসলাম সময়োপযোগী কি না। ইসলামের কোন আদেশ বা নিষেধ যদি মনে এতটুকু সংশয় সৃষ্ট করে, মুক্ত বিবেকের সাথে বিরোধ সৃষ্ট করে, সেখানেই উচিৎ হবে বিষয়টা ভালভাবে অনুসন্ধান করা; হয়ত যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যেতেও পারে (আমার বিশ্বাস অবশ্যই পাওয়া যাবে)।
“তাঁরা বুঝাতে চায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি সব তাঁদের ধর্মপুস্তকের জ্ঞানকে আবর্তন করে ঘূর্ণায়মান হচ্ছে।“
ব্যাক্তিত্বহীনরাই ধর্মের সাথে বিজ্ঞান এর তুলনা করে ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে। আসলে এর কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। বারেবারে প্রমানিত হয়েছে বিজ্ঞানের কোন সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত নয়, নিত্য নতুন ধারনা প্রবর্তিত হতেই আছে আর পুরোন ধারনা বতিল হয়ে যাচ্ছে। কেউই বলতে পারবেনা অমুক বিষয়ে অমূক সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত, আর কোন গবেষণার দরকার নেই। খোদ বিজ্ঞানীরাই বলেন বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সুতরাং যাঁরা আল কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের তুলনা করতে যান, বলেন “কুরআন বিজ্ঞান সম্মত” তাঁরা পক্ষান্তরে নিজের অজান্তেই আল কুরআনকে খাটো করেন। তবে একটা কথা বলতে পারি, আল কুরআনের বক্তব্য বিরোধী কোন কিছু বিজ্ঞান দ্বারা ‘চরম সত্য’ বলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এহেন নজীর আজ অবধি কেউ দেখাতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই। (আপনাদের জানা থাকলে জানাবেন আশা রাখি।) কিন্তু কোরআনে উল্লেখ আছে এমন অনেক বিষয় বিজ্ঞানীরা সত্য বলে মেনে নিয়েছেন।
অর্থনীতির প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হয়, ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গরীবদের সপক্ষেই কথা বলে। ইসলএম ‘যাকাত’ কে সামর্থ্যবানদের জন্য অবশ্য প্রদেয় করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা যদি সত্যি সত্যিই কোন সমাজে প্রকৃতপ্রস্তাবে প্রয়োগ করা হয় তবে ধনী গরীবের বৈষম্য অবশ্যই ঘুচে যাবে।
আস্তিকতা ও নাস্তিকতা নিয়ে বিরোধ করার কোন কারন নেই। যারা নিজেদের আস্তকি দাবী করে আস্ফালন করেন তাদের প্রতি আহ্বান, শুধু আস্তিক না ঈমানদার হন। এ দুয়ে বিস্তর ফারাক। নিজে আস্তিক তাই নাস্তিক দেখলে েআস্ফালন শুরু করা ভাল লক্ষন না।
আর নাস্তিকতা সম্বন্ধে আমার ধারনা খুব কম তবু কিছু বলি। প্লীজ কেউ যদি নাস্তিক থেকে থাকেন তো আমার ধারনা ভুল হলে ঠিক করে দিয়েন। আমার মতে “নাস্তিকতা হলপ্রচলিত ধর্মের প্রতি অনাস্থা এ সমসাময়িক সমাজ ব্যাবস্থার উপর অনীহা থেকে সৃষ্ট হতাশার ফল।“ গর্দভ ব্যক্তিরা নাস্তিক এমন আমার দেখা নেই, এঁরা খুবই বুদ্ধিমান মানুষ। কিন্ত আমার মনে হয় তাদেঁরও উচিৎ কেন তাদেঁর অনিহা তা বিবেচনা করা। আমার মনে হয় খুব কম নাস্তিকই পাওয়া যাবে যাঁরা ধর্মের ত্রুটির কারনে নাস্তিক। বরং ধর্মের ধারক ঐসব মজিদরাই মূল কারন। কারন এসব মজিদরা ধর্মের নামে যা করে তা সুস্থ্য বিবেকবান কারোরই মেনে নেবার কথা নয়।
আবারও অনুরোধ করব, আমার কথা কারো ভাল না লাগলে দয়া করে উত্তেজিত হবেন না। পারলে যুক্তি দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১১