বৎসরান্তে আবারো আমরা ব্যস্ততার চাদরে বর্ষবরণের প্রয়োজনে সকল আয়োজন সমাপনান্তে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় অনেক কিছু অর্জনের আশায় বর্জনের ফিরিস্তি হাতে মঙ্গলশোভাযাত্রার মহিদ্রক্ষনের অপেক্ষায় আছি। জানিনা গতবছরের বিকৃতমনাদের উন্মাদনার যে অভিজ্ঞতা বাঙ্গালী জাতি আবলোকন করেছে তার পুনরাবৃতি ঠেকাতে আমাদের দেশের কথিত শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত উশৃঙ্খল বাহিনী কতটা তৎপর।আপত:দৃষ্টিতে যদি গত বছরের বর্ষবরণের দিন হতে আজ পর্যন্ত একটি ছক টানি তাহলে দেখবো সাগরের পানি বাস্প হয়ে মেঘমালার বেশে কিন্চিত বৃষ্টি হয়ে নদির সাথে মিশে গিয়ে আবার সাগরেই পতিত হলো, মাঝে কেবল তন্নি তনুদের আর্তচিৎকার আর বিকৃতমনাদের নির্মম অট্টহাসি আমাদের জানান দিলো যে বিকৃতমনাদের এই দেশে মুক্তমনাদের ঠাই নেই।
আজ কষ্ট হয় একথা ভাবতে যে কতটা বিকৃত রুচির মানসিকতা লালন করলে মঙ্গলযাত্রায় মঙ্গল কামনা করতে আসা একটি নারীর প্রতি বিকৃত হায়েনার নগ্ন থাবা পরিকল্পিত ভাবে হতে পারে? ভাবা যায় ?? ভাবতে ঘৃনা হয় । পৈসাচিক এই উন্মাদনা আমাদের ইতিহাস বা ঐতিয্যের কোনো ধারায় তো নয়ই বরং আফ্রিকার কোন জংলী গোস্টিও এমন আচরনে অভ্যস্ত কিনা আমার সন্দেহ হয়! জঙ্গী মনাদের ভঙ্গী কেমন? কমপক্ষে তারা তো কাউকে প্রকাশ্যে বস্ত্রহরণ পূর্বক আনন্দ উল্লাসে করতে দেখা যায়না। তাহলে আমরা কী জঙ্গীমনাদের চেয়ে একদাপ এগিয়ে গেলাম??
বলিউডের কিছু সিনেমায় দেখেছি পুজোর ভীর থেকে কীভাবে মেয়েদের কিডন্যাপ করা হয়, কিভাবে একটি মেয়েকে হলিখেলার ফাকে বা বিভিন্ন শোভাযাত্রা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জিঘাংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করা হয়।ঐ রকমের কিছু একটা চিন্তা করে হয়তো কথিপয় নরপশু সামিয়ক পশুত্বসুলভ আচরণ করতে পারে। কিন্তু তাদের জন্য উচিত শিক্ষার ব্যবস্থা না করায় হিংস্রতা প্রতিদিন সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে তা বলার আর অবকাশ রাখে না। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জেন থেকে শুরু করে বস্তির অসহায় পোশাক কর্মীও তাদের নিষ্ঠুর থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আসলে যাদের মন-মানসিকতা বিগরে যায়, বিকৃত লালশা যাদের মস্তিষ্কে ঢুকে যায় তাদেরকে কোনো ধর্মের আওতায় বা ধর্মীয় পরিচয়ে তাদের চিণ্হিত করা যায় না। খ্যাতিমান ব্লগার হত্যার পিছনে যেমন একদল জঙ্গীমনার হাত আছে আবার ইমাম-মুয়াজ্জিন হ্যতার পিছনেও তাদেরই হাত আছে। ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় আমরা তাই জানতে পেরেছি।আশুরা পালন করতে আসা ইমাম বাড়ায় কিভাবে বোমা হামলা হলো কে বা কারা করেছে তারা যেমন ধরা ছুয়ার বাইরে রয়ে গেল তেমনি ব্লগারদের হত্যা, তনুদের উপর নির্মম বর্বরতা,পহেলা বৈশাখে নারীদের বস্ত্র হরণ। এসবের কোনটার কি কূলকিনারা খুজে পেয়েছেন? বাংলার মাটিতে এ সবের বিচার হবে কিনা সন্দেহ? বেশী চাপে পাড়লে জজমিয়ারা তো আছেই তাদের না হয় বলির পাঠা বানিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢেকে দেবে।
সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নাই তারা বিকৃতমনা এক ধরনের নর পিশাচ। আর তা না হলে কেবল গরুর মাংশ খাওয়ার সন্দেহ থেকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনাকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর অপকৌশল কি আমরা প্রতিবেশী বন্ধপ্রতীম রাজ্যে দেখিনি?
আজ আমাদের ভেবে দেখা দরকার কী কারনে আমাদের সমাজের এমন একটি বিকৃতমনা হিংস্র তৈরী হচ্ছে? এর পিছনে সমাজে কোন অংশটা দায়ী, কারা এদের মদমদাতা?