মধ্যযুগীয় চিনা মেয়েদের পা ছোট করে রাখার কুপ্রথা এবং কনফুসীয় অপ-দর্শন
সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই নারীর স্বাভাবিক বিকাশের পথটি রুদ্ধ করতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কত বিধিবিধানই না রচনা করেছে। নারীর স্বাধীনতা খর্ব করতে উদ্ভাবন করেছে অজস্র পদ্ধতি । চিনা মেয়েদের পা ছোট করে রাখা সেই নির্মম ইতিহাসেরই অংশ। আশ্চর্য এই-সেই অমানবিক মানবতাবিরোধী পদ্ধতির পিছনে ছিল তথাকথিত চৈনিক দার্শনিকদের প্রত্যক্ষ মদদ এবং সে সব একদেশদর্শী দার্শনিকদের রচনা নারী সম্বন্ধে হীন মন্তব্যে পরিপূর্ণ। যেমন দার্শনিক কনফুসিয়াস বিশ্বাস করতেন: A husband may marry twice, but his wife must never remarry.এভাবে নারীকে হীন এবং অধঃপতিত করে দেখালে নারীকে বিকলাঙ্গ করে রাখতে সহজ হত ...
চিনের মানচিত্র। চিনে আজ নারী স্বাধীনতা স্বীকৃত হলেও প্রাচীন কাল থেকেই চিনা নারীরা ছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের খেয়ালখুশির শিকার। আর পুরুষ চিন্তাবিদের তাতে সমর্থ ছিল।
চিনে কীভাবে উদ্ভব হল ওই কুপ্রথার?
বলা হয়ে থাকে-কোন্ চিনা রাজপুত্রের মেয়েদের ছোট পায়ের ওপর fetish ছিল। fetish মানে- object arousing sexual desire. এর মানে হল: মেয়েদের ছোট পা দেখে সেই চিনা রাজপুত্রের যৌনবোধ জাগ্রত হত । ব্যস। এরপর চিনদেশে মেয়েদের পা ছোট রাখার পদ্ধতি আবিস্কার হল। বলা বাহুল্য পদ্ধতিটি ছিল যন্ত্রণাদায়ক। তথাপি চিনে সমাজে এই ধারণা ছড়িয়ে পড়ল যে -ছোট পা হল আভিজাত্যের প্রতীক, সেই ছোট পা কে বলা হল ‘পদ্ম-পা’।
এতটুকু মেয়েদের বিকলাঙ্গ করা হত
চিনে মেয়েদের পা ছোট করে রাখার প্রথা প্রচলিত হয় সুং শাসনামলে। সময়কাল- ৯৬০ থেকে ৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ। কারও কারও মতে অবশ্য সপ্তম শতকে এই প্রথার উদ্ভব। প্রথম প্রথম এর চর্চা ছিল সীমিত। পরবর্তীকালে, অর্থাৎ, দশম শতকের পর ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। কেবলমাত্র অভিজাত সমাজই নয়- এমনকী মধ্যবিত্ত সমাজেও পদ্মপায়ের লোভে মেয়েদের পা বিকৃত করে ফেলা হত। ... কেবল মাত্র নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়েরা রেহাই পেয়েছিল। যেহেতু ওদের কাজ করে খেতে হত।
যুগ যুগ ধরে চিনা মেয়েদের ওপর এই অমানবিক নির্যাতন চলেছে
তিন বছর বয়েসি শিশুর পা বিকলাঙ্গ করা হত ;এসময় পায়ের বাঁকা হাড় ও আঙুল ঠিক মতো বিকাশ লাভ করে না। সাধারনত শীতকালে এই বিকৃতিকরণ করা হত। এ সময় ঠান্ডায় পা জমে থাকত বলে ব্যথা কম হত। প্রথমে দুটি পা-ই উষ্ণ ভেষজ ও পশুরক্তে ভিজিয়ে নেওয়া হত। এতে পা নরম হত, আঙুলগুলি বাঁকিয়ে বেঁধে ফেলতে সুবিধে হত। এরপর যদ্দূর সম্ভব পায়ের আঙুলের নখ কেটে ফেলা হত । তারপর ম্যাসেজ করা হত। তুলার ব্যান্ডেজ উষ্ণ ভেষজ ও পশুরক্তে ভিজিয়ে নেওয়া হত। এরপর আঙুল ও বাঁকানো হাড় নীচের দিকে চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলা হত! ভাঙা পায়ে শক্ত করে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে বাঁধা হত। শিশু তীব্র যন্ত্রনায় কাৎরাত। কী আর করা ! প্রথা বলে কথা! মেয়েরা হাঁটত গোড়ালির ওপর ভর রেখে।
বিকৃত পায়ের এক্সরে।
পুরুষশাসিত সমাজে পা বিকৃত না করে উপায় ছিল না। তার ওপর এটি হয়ে উঠেছিল ফ্যাশন। কর্মহীন পায়ের মর্যাদা গড়ে উঠেছিল। পা যত ছোট তত অভিজাত। মধ্যবিত্ত সমাজেও চলত প্রতিযোগীতা- কার মেয়ের পা কত ছোট। যদিও মেয়েরা সংসারের কাজ ঠিকঠাক করতে পারত না।
বিকলাঙ্গ পায়ের জন্য নির্মিত বিশেষ জুতা।উচ্চবিত্ত সমাজে কন্যার পা ছোট না থাকলে বিয়েই কঠিন হয়ে পড়ত।
তবে পা বিকৃতির মূল উদ্দেশ্য ছিল মেয়েরা যাতে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে না পারে। আমরা জানি প্রাচীন ও মধ্যযুগে চিনা সমাজে দার্শনিক কনফুসিয়াসের (৫৫১-৪৭৯ খ্রিস্টপূর্ব) দারুন সম্মান ছিল। এই নৈতিকতার ধ্বজাধারী ব্যাক্তিটি একবার বলেছিলেন ... A woman's business is simply the preparation and supplying of food and wine. She may take no step of her own motion, and may come to no conclusion in her own mind. Beyond the threshold of her apartments she should not be known for good or evil. She may not cross the boundaries of a state to accompany a funeral. (মেয়েদের কাজ হল রান্নাবান্না করা ও মদ তৈরি করা এবং সেসব পরিবেশন করা। সে স্বেচ্ছায় এক পাও নড়বে না। নিজস্ব বিবেচনায় কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হবে না। বাড়ির বাইরের ভালোমন্দ সম্বন্ধে জানবে না। রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে শেষকৃত্যে যোগ দেবে না। )
এখন যেন মেয়েদের পা ছোট করে রাখার বিষয়টি অনেকখানি পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে।
মেয়েরা যেন হাঁটতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা। কারও সাহায্য ছাড়া বেশি দূর যেতে পারত না। যন্ত্রণা হত।
২৮ সেপ্টেম্বর কনফুসিয়ারে জন্মদিন। প্রতি বছরই চিনা বিশ্বে মহাসমারোহে দিনটি পালিত হয়। হংকং-এ কনফুসিয়াসের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্টানে নারীর উপস্থিতি বিস্ময়কর ঠেকতেই পারে।
চিনা সমাজে কনফুসীয় এই নারী বিদ্বেষী কুপ্রথা টিকেছিল প্রায় ১০০০ বছর। ১৯১১ সালে চিনে মাঞ্চু রাজবংশের পতনের পর নতুন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। তার পর এই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। পথাটিকে ‘চাইল্ড অ্যাবিউজ’ বলে আখ্যাহিত করা হয়। তবে সে সময় যাদের পায়ের বাঁধন খুলে ফেলা হয়েছিল তাদের পায়ে দীর্ঘকাল ক্ষত বহন করতে হয়েছিল। এমন কী ১৯৯০ সালেও কোনও কোনও চৈনিক বৃদ্ধার পায়ের সমস্যা ছিল।
সমগ্র বিশ্বের চোখ এখন প্রচন্ড গতিতে অগ্রসরমান চিনের দিকে । কিন্তু প্রশ্ন হল- চিনা সমাজে মেয়েদের ওপর পুরুষতন্ত্রের শাসন কতখানি শিথিল হয়েছে?
চিনে পা বিকৃতির কারণ সম্বন্ধে কোন্ এক চিনা রাজপুত্রের মেয়েদের ছোট পায়ের ওপর fetish এর কথা বলা হয়। আসলে সেই রাজপুত্র রক্ষিতাদের বন্দি করে রাখতেই এক কুপ্রথার জন্ম দিয়েছিল আর সে ‘যথার্থ’ কাজে ফনফুসিয় ‘মহান’ বাণীর দৃঢ় সমর্থন তো ছিলই ...এভাবে পুরুষেরা যুগ যুগ ধরে শাস্ত্রের বাণী ইচ্ছে মতো ব্যাখ্যা করে নিজ উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে চলেছে ...
হাই হিল। সম্ভবত এই আধুনিক শৈলীর পাদুকাটির পিছনে রয়েছে চিনে মেয়েদের গোড়ালীর ওপর ভর দিয়ে হাঁটার দুঃসহ স্মৃতি ... অনেকে যেমন বলেন বাঙালি মেয়ের হাতে রিনরিন করে বাজা চূড়ি হল পূর্বযুগের দাসত্বের চিহ্ন ...
তথ্যসূত্র
Click This Link
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন