খবরটি যখন চলছিল তখন আমি ড্রাইভ করছিলাম। হঠাৎ করে যেন আমার পৃথিবী দুলে উঠলো। কি ভয়ংকর ঘটনা, কি ভীষন কষ্টের খবর।আমি বিধ্বস্ত, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না কি বলা উচিত! এতো দিন স্কুলে গান স্যুট হয়েছে দেখেছি কিন্তু এরকম এ্যালিমেন্টারী স্কুলে স্যুটিং আর দেখিনি। দু'দিন ধরে কোন খবরে স্ক্রল করি না, টিভি খুলি না, পেপার পড়ি না। কোনভাবেই আমি নিতে পারছি না এ খবর।
সবাই আঙ্গুল তুলছে অস্র বিক্রির দিকে কিন্তু আসল সত্য কথা কাউকে বলতে শুনিনি। হাঁ, অস্রের সহজলভ্যতা এরকম ঘটনার জন্য অবশ্যই বড় একটি কারন। কিন্তু প্রশ্ন? অস্র হাতে থাকলেই কি ঝাঁপিয়ে পড়বে? মেজাজ খারাপ হলেই নির্বিচারে মানুষ মেরে ফেলবে? ছোট ছোট শিশুগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে? কেন হচ্ছে এমন ঘটনা বার বার? কেন এমন ১৭-১৮ বছরের টগবগে যুবক নির্বিচারে রক্তের হলি খেলছে?
উত্তরটা আমি নিজেই খোঁজার চেস্টা করেছি। হয়তো কেউ মানবেন কেউ মানবেন না। কিন্তু যে যাই বলুক সময় থাকতে আমাদেরকে যে এর সমাধান বের করতেই হবে!!
আমার মতে প্রধান কারন, পরিবারহীনতা। এখানকার সমাজ, কালচার, পরিবার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি বুঝেছি এখানকার শিশুদের বড় একটা অংশ নিরাপত্তাহীনতা, ভালোবাসাহীন জীবন, ট্রমাটিক শৈশব কাটায়। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ যেমন একটা কমন বিষয় তেমনি নতুন সংসার গড়াটাও তাদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হলো শিশুরা। কারন এরা একদিন হঠাৎ করে দেখে তার চেনা পৃথিবী সম্পূর্ণ অচেনা। কেউ হয়তো বাবার কাছে কেউবা মায়ের কাছে থাকে। কিন্তু নতুন পরিবেশে দেখা যায় সে অবহেলার স্বীকার হচ্ছে প্রতি পদে পদে। যে আদরে হয়তো বেড়ে উঠেছিল এতোদিন তা থেকে ছিটকে পড়েছে সে। কেউ মেনে নেয় আবার কেউ পারে না। কিন্তু তাদের ছোট্ট সে মনের ক্ষোভের মেঘ বাড়তে থাকে দিনের পর দিন।
দ্বিতীয় কারনটিও আমি বাবা-মার দিকেই আঙ্গুল তুলবো। জীবনের ব্যাস্ততা এখানে চরম পর্যায়ে। দু'পাশে বাবা-মা দু'জনেই ব্যাস্ত থাকে বাস্তবতায়। ছোট্ট শিশুটিকে নিজের সময় দেবার পরিবর্তে তার হাতে তুলে দেয় মোবাইল বা ট্যাব। আমি এমন কোন শিশু এখানে পাইনি যার হাতে কোন গ্যাজেট দেখিনি। পাশাপাশি বাবা-মা নিজেরাও ব্যাস্ত থাকে স্যোসাল মিডিয়ায়। সেলফি লাইক কমেন্টেস এর নেশায় আর কিছুর দিকে তাকানোর সময় নেই তাদের। এভাবে ধীরে ধীরে শিশুটি চারপাশের ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায় গেমের মাঝে। সত্যিকারের ভালোবাসাই ঠিকভাবে বোঝে না। বাবা-মায়ের ভালোবাসা ট্রান্সফার হয় নতুন নতুন গ্যাজটে, খেলনা বা গেইমের মাঝে।
তৃতীয় কারনটি নিয়ে আমি বরাবরেই সোচ্চার। আর তা হলো গেইমের নেশা। শিশুদেরকে ব্যাস্ত রাখতে যে গেইমের পথ বাবা-মা দেখিয়ে দেয় তা থেকে সহজে ফিরতে পারে না তারা। নেশা নেশা নেশা........ গোলাগুলি, রক্তারক্তি, খুনোখুনি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যায় তাদের কাছে। মানবিকতা, ভালোবাসা, আদর-স্নেহ..... সব কিছুই ম্লান হয়ে যায় ধীরে ধীরে। সবাইকে শত্রু মনে করে, সব কিছুর সমাধান মৃত্যু মাঝেই আছে তা ভেবে নেয়, তাই সবাইকে মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। আর গেইমগুলোও এমনভাবে তৈরী তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
আমেরিকা কানাডার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মারাত্বক সোচ্চার। তারপরও কেন কোন সমাধান হচ্ছে না? অবশ্যই কিছু না কিছু হচ্ছে। যার কারনে হয়তো অনেক ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পা্চ্ছি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সোচ্চারের পাশাপাশি দরকার শিশুদেরকে একটা সুন্দর শৈশব দেয়া, পরিবার দেয়া, নিরাপত্তা দেয়া, স্নেহ-ভালোবাসা দেয়া। সেটা কি খুব কঠিন? মোটেও কঠিন নয় কিন্তু।
ছবি: স্কাই নিউজ
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২২ সকাল ১০:৩৮