somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালের বিবর্তনে বদলে যাওয়া কোরবানীর ঈদ, আমাদের আবেগ কিংবা কারো কারো ভাষায় পশুহত্যা।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় দেখতাম দাদাবাড়িতে বিশাল একটা গোয়াল ঘর। গরু মহিষ ছাগল সব পালা হতো। দেখভাল করার জন্য রাখা হতো দু-তিনজন রাখাল। মাঝে মাঝে পশুগুলোকে দাদাও মাঠে নিয়ে যেতেন শখ করে। একটা গরুর যখন ষাঁড় বাছুর জন্ম নিতো তখন আর সবার আনন্দ ধরে কে। রাজার মতো আদর যত্নে পালা হতো সেটাকে। মায়া জন্মে যেতো ষাঁড়টার প্রতি। তীব্র মায়া।এই মায়ার তীব্রতা কতখানি যারা গরু পালে শুধুমাত্র তারাই বুঝে।পরের বছর সেই ষাঁড়টাকেই নেয়া হতো কোরবানীর জন্য কিংবা আর দু এক বছর পর। যত বেশিদিন পালা হতো, মায়া যেতো বেড়ে।
নিজের সন্তানের মতো মনে হতো সবার কাছে সেই ষাঁড়টাকে।
ঈদুল আযহার আনন্দটা আমরা ঠিক উপভোগ করতে পারতাম না। কোরবানী দিতে যখন গরুটাকে নেয়া হতো বুক চিরে কেমন যেন কান্না আসতো। পরিবারের অনেকের চোখে পানি দেখেছি আমি।ত্যাগ ব্যাপারটা বুঝি এমনই।
সন্তানের মতো অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যে গরুটা ছিলো কয়েক বছর ধরে, যাকে পালা হয়েছে রাজার হালে, যাকে দিয়ে এমনকি কখনো হালচাষও করা হয়নি শুধুমাত্র তার মাংশ খেয়ে মজা করার জন্য কোরবানী দেয়া কেউ দেয়নি, দিতে পারেনা। এই ত্যাগের আনন্দটাও অন্যরকম।সেই বুক চিরে আসা দীর্ঘশ্বাস কিংবা কষ্টের মাঝেই ঈদুল আযহার আনন্দ লুকিয়ে আছে।কাছের কিছু কে বা কাউকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে স্যাক্রিফাইস করা।

এখন কোরবানী মানে বড় বাজেটের একটা বিশাল গরু বা উট কেনা। পারসোনা থেকে সেজে গুজে গরুটার পাশে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়ে ছবি তোলা। ফেসবুকে আপলোড করা। আর বাচ্চা ছেলেদের কষ্ট, "আম্মা ওদের গরু আমাদের চেয়ে বড়"।
আহারে। কষ্টের ধরনটাও বদলে গেছে। আমার এখনো মনে আছে প্রথম যখন আমরা গরু কিনে এনে কোরবানী দেই আমি সেটাকে ৩ দিন কাছ থেকে দেখছিলাম। দু একদিন নিজ হাতে ঘাস খেতে দিয়েছি। তাতেই কি যে মায়া পড়ে গেছিলো। মনে হচ্ছিল কোরবানী না দিলে কি হয়? আমার প্রিয় গরুটাকে কোরবানী দেয়ার সময় আমি কাঁদছিলাম অঝোরে। বাচ্চাদের আবেগের ধরনটাও বদলে গেছে কতটা, টের পাই।

এই ফেসবুকীয় কিংবা বড়লোকীয় কোরবানী দাতাদের জন্যই আজ নাস্তিক কিংবা সেক্যুলার কিংবা কিছু বিশেষ ধর্মীয় লোকজন (যাদের কাছে মুসলিমদের খোচানোটাই পেশা) পশু হত্যা নামে একটা শব্দ ব্যবহার করার সুযোগ পায়। তাদের বলি, যখন রেস্টুরেন্টে বিফ আর মাটন ছাড়া কিছুই জোটে না মুখে তখন কোথায় থাকে এই শব্দ? যখন চিকেন ফ্রাই চিকেন ফ্রাই বলে গলা ফাটান তখন কি মনে হয় চিকেন সবজি থেকে আসছে? যে পরিমাণ গরু বাংলাদেশের সবগুলো হোটেলে প্রতিদিন জবাই হয় তার সম্পর্কে ধারণা আছে? শহুরে ধনিক শ্রেনীর জন্যই আজ বদলে গেছে কোরবানীর সংগা।
তারপরও একটাই কামনা, আল্লাহ পাক আমাদের কোরবানী কবুল করে নিন। আমীন।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×