
খুব ছোটবেলায় যখন বাসার সামনে দিয়ে আইসক্রিম...আইসক্রিম বলে চিৎকার করে যেতো আইসক্রিমওয়ালা তখনই আমার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আর যাই হই আইসক্রিমওয়ালা হতেই হবে। শুধু খাব আর বিক্রি করবো, আহা কি সুখ! এরপর ক্রমান্বয়ে কতকিছু হওয়ারই স্বপ্ন দেখেছি... ট্রাক ড্রাইভার, ট্রেন চালক থেকে শুরু করে পাইলট পর্যন্ত। মনে পড়ে যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি বড় মামা জিজ্ঞেস করেছিল বড় হয়ে কি হতে চাই। আমি বড় হয়ে বড় হতে চাই- আমার সহজসরল উত্তর শুনে সবাই হাসাহাসি করলেও মামা গম্ভীর ভঙ্গিতে আর্শীবাদ করেছিলেন যেন আমি বড় হয়ে বড় হতে পারি। আজ মামা বেচেঁ থাকলে কষ্ঠ পেতেন এদেখে যে তাঁর আর্শীবাদ আমার জীবনে কাজে লাগেনি। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় ইংরেজির অনিল স্যার একদিন ক্লাসে বললেন- বড় হয়ে তোমরা কে কি হতে চাও লিখ। কেউ লিখলো ডাক্তার, কেউ ইন্জিনিয়ার, কেউ ব্যবসায়ী। আমি লিখেছিলাম 'কবি', আমি বড় হয়ে কবি হতে চাই। এ নিয়ে সহপাঠীদের সে কি হাসাহাসি। এরপরতো অনেকে ব্যঙ্গ করে রবীন্দ্র, নজরুল বলেও ডাকতো। আমার সহপাঠীরা যারা ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী হতে চেয়েছিল তারা অনেকেই তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী ডাক্তার-ইন্জিনিয়ার হয়েছে কিন্তু আমার আর 'কবি' হওয়া হয়নি। হায়! তখন কি জানতাম চাইলেই কবি হওয়া যায় না।
শৈশবে কতকিছু হতে চাওয়া আমার কিছুই হওয়া হয়নি, না আইসক্রিমওয়ালা না কবি। যাপিত জীবনের যাতাকলে বন্দী আমি রোজ ৯ - ৫ টা করে জীবনের ঘানি টানি। দুপুরের বিরতিতে সহকর্মীদের সাথে বসে দেশ উদ্ধার করি। বিমলমিত্রের কড়ি দিয়ে কিনলাম-এ অন্যতম চরিত্র স্কুল শিক্ষক অপু যখন স্কুল থেকে বিদায় নেয় স্কুলের ছাত্ররা তাকে বিদায় দিতে আসে ষ্টেশনে। অপু ছাত্রদের বড় হয়ে কে কি হতে চায় জিজ্ঞেস করলে কেউ বলে ডাক্তার, কেউ ইন্জিনিয়ার, কেউ রাজনীতিবিদ হতে চায়। তোমরা যা যা হতে চাও সব ঠিক আছে কিন্তু সবার আগে মানুষ হও। মানুষ হওয়াটাই জরুরী। - ছাত্রদের প্রতি অপুর উপদেশ।
না, আমার আর মানুষ হওয়াও হয়নি।