প্রথম সাঁতার কাটা শিখেছিলাম দাদুর কাছে থেকে । সেই শৈশবে । ভাসা ভাসা মনে পড়ে । দাদুর পিছেপিছে নদীতে যাচ্ছি । তখন আমি দাদুর কোমরের সমান । দাদু হাত দিয়ে আমার হাফপ্যান্ট-এর কোমরের কাছের অংশে ধরে নদীর পানির উপর ঝুলিয়ে রাখতেন । আমি হাত পা নাড়াতাম । কখনো অজান্তেই কোমর ছেড়ে দিতেন তিনি । এভাবে সাঁতার কাটা শিখে গেলাম । তারপর কতবার যে কত নদী পাড়ি দিয়েছি তার হিসেব নেই ।
ঢাকায় আসার পর যেন একটা বিশাল সমুদ্রে পড়ছিলাম । দাদুর সাথে ফোনে কথা বলতাম নিয়মিত । এই সমুদ্রেও সাঁতার কাটা শিখে গেলাম একদিন । বাড়ি গেলে দাদুর সাথে বের হতাম । ঘুমাতাম দাদুর পাশেই । খুচিয়ে খুচিয়ে কত কথা বের করতাম দাদুর জীবনের ।
মনে পড়ছে শৈশবে যেখানেই দাদু যেত পিছু ছাড়তাম না কখনো । জীবনের প্রথম ব্যাট, ফুটবল, কেরাম বোর্ড, দাবা দাদু কিনে দিয়েছিলেন । আমার জীবনের প্রথম মোবাইল দাদুর কাছেই পেয়েছিলাম ।
২০০৬ এ দাদু একবার খুব অসুস্থ । মির্জাপুর কুমদিনি হাসপাতালে কি যেন একটা অপারেশন হয়েছিল দাদুর । সেটাই আমার প্রথম হাসপাতাল ভ্রমণ । হাসপাতালের বেডে দাদুকে দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল । মূর্ষা গিয়েছিলাম হঠাৎ করে । বুঝতে শেখার পর সেটাই মনে হয় প্রথম কান্না ছিল । দাদু সুস্থ হলে আমার সে কি যে খুশী !
৯০ এর কাছাকাছি বয়স হয়ে গিয়েছিল দাদুর । কয়দিন হাটা- চলা করেন । আবার কয়দিন অসুস্থ হয়ে বেডে । শেষ বার এই কয়দিন আগে দাদুর অসুস্থতার কথা শুনে ছুটে গিয়েছিলাম বাড়িতে । বিছানায় শায়িত অবস্থাতেও তার মুখে এক চিলতে হাসি আমাকে আশ্বস্ত করেছিল । ফেরার আগেও দাদুকে প্রণাম করে ফিরেছি ।
২০১১ চলে গেল । প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তির খাতাটা বারবার মিলিয়ে দেখছে অনেকেই । আমি পারছি না । দাদু গত ৩০ ডিসেম্বর আমাকে গভীর সমুদ্রে ভাসিয়ে চলে গেলেন । মৃত্যুর পরের জগৎ থেকেও তিনি হয়তো দেখিয়ে যাবেন গভীর সমুদ্রে চলার পথ । তিনি স্বর্গবাসী হোন ।
________
কান্না করতে পারছিনা । বাথরুমে দরজা বন্ধ করে চেষ্টা করেও পারিনি । বার বার শুধু দাদুর সাথের স্মৃতিগুলোই মনে পড়ছে । একটু কাঁদতে পারলে ভালো হত । চারপাশে অথই সমুদ্র । আমার চোখে জল নেই কেন ।