এই বাড়িটির নাম Twin Mirror Houses। বড়িটি ইতালির South Tyrol নামক অঞ্চলে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি মুলত আঙ্গুর উৎপাদনের জন্য খুবই বিখ্যাত। এই বাড়িটি এধরনের একটি সাধারন আঙ্গুর ক্ষেতে মাঝখানেই করা হয়েছে। কিন্তু বাড়িটি করা হয়েছে একেবারে অত্যাধুনিক ডিজাইনের মাধ্যমে।
বাড়িটির ঠিক পেছনেই রয়েছে অন্য একটি পুরাতন ধাচের চিরাচরিত কায়দায় বানানো বাড়ি। কিন্তু সেই বাড়িটি বর্তমান আধুনিক বাড়িটির সৌন্দর্য ধংস্ব না করে উল্টো পুরো এলাকাটির অসাধারন একটা আউটলুকিং তৈরি করেছে।
মজার বিষয় হচ্ছে বাড়িটাতে মুলত দুইটা আলাদা আলাদা ইউনিট রয়েছে। দুই ভাই একই সাথে এই পুরো ক্ষেত এবং জমির মালিক। তাই তারা একই সাথে একই স্থানে একই বাড়িতে দুটি ইউনিট নির্মান করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে বাড়িটির ডিজাইন এভাবে কেন করা হয়েছে। আর্কিটেক্ট যেটা বলেছেন তা হচ্ছে এই অঞ্চলে শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা পরে। তাই ঠান্ডাকে বাধা প্রদান করে যাতে শীতকালের অসম্ভব দামি সুর্যের আলোটুকুন যাতে পাওয়া যায় তাই এই ভাবে বাড়িটির ডিজাইন করা হয়েছে। অথবা গরমের দিনেও যাতে ঘরটি যথেস্ট পরিমান ঠান্ডা থাকে তার চেস্টা করা হয়েছে।
এইবাড়িটি অন্যান্য বাড়ি থেকে একটু আলাদা হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে বাড়ির ঠিক পেছনের পুরোটুকুন দেয়ালের সাথে সেটে দেয়া হয়েছে অসাধারন রিফ্লেকশন বা প্রতিবিম্ব ক্ষমতা সম্পন্ন আয়নার কাচের প্যনেল। এই প্যানেলগুলো এমন ভাবে এবং এমন এঙ্গেলে বসানে হয়েছে যে দুর থেকে তাকালে এখানে কোন বাড়ি আছে কিনা সেটা বোঝার কোন উপায় থাকবে না।
বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমেই চোখে পরবে অসাধারন ড্রইং রুমটি। প্রথমে কিছু কাঠের চেয়ার রাখা হয়েছে কারন হচ্ছে কাঠের চেয়ারগুলো শীতের দিনের জন্য বেশ কার্যকর ভাবে রোদ পোহাতে চমৎকার কাজ করে। কাঠের চেয়ারের পরেই রাখা হয়েছে সোফা সেটগুলো। বড়ির সামনের অংশটুকুন মাটি থেকে বেশখানিকটা উচু করা হয়েছে যাতে মাটির আদ্রতা বাড়ির মেঝেকে শিতল করতে না পরে। তাছারা বরফ পরার সময় নিচের ওই খালি অংশটুকুন বাড়িটিকে আলাদা একটু উষ্নতা দেয়।
যেহেতু বাড়িটি একটি সম্পুর্ন খোলা স্থানে নির্মান করা হয়েছে। তাই প্রচুর বাতাস পাওয়া যায়। আর সেই বাতাসকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করানোর জন্যই ছাদে এই ভেন্টিলেশনগুলো রাখা হয়েছে। এতে যেমন বাড়ির ভিতরের অতিরিক্ত গরম বাতাস বের করে দেয়া যায় ঠিক তেমনি বাতাস প্রবেশ করানো যায়। এছারা শীতের দিনেও এটি চমৎকার কাজে দেয়।
বেডরুমটিকে একটা আলাদা কাঠের স্লাইডিং ডোর দিয়ে একেবারে মুল রুম থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এই স্লাইডিংটার সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এটি সম্পুর্ন ম্যাগনেটিক বা চুম্বকিয় সিস্টেমে চলে ফলে এটিকে টানতে বা বন্ধ করতে কোন সমস্যাই হবে না যেটি সচারচর আমাদের বাড়িতে হয়ে থাকে। বিশেষ করে ময়লা আটকে স্লাইডিং গুলো বন্ধ করতে বা খুলতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়।
এবার আসি এপাশের ইউনিটের বেডরুমটিকে নিয়ে। এখানেও একই কাজ করা হয়েছে। তবে এটাতে খাটটির ঠিক পাশে একটু ভালো করে তাকালেই দেখতে পাবেন একটি হিডেন ওয়াল কেবিনেট। এখানেই এই রুমের সব কিছু থকে। কিন্তু বাইরে থেকে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই। এগুলোও স্লাইডিং। এবং অবশ্যই ম্যাগনেটিক স্লাইডিং। ছবিটির ঠিক ডান পাশে তাকালে দেখবেন কিচেনটি। অসাধারন তাইনা। চুলো হচ্ছে একটি ইলেকট্রিক বার্নার। একটি সিংক এবং উপরে নিচে রয়েছে প্রচুর কেবিনেট এবং সাথে একটি ওভেনও রয়েছে। অল্প স্থানের মধ্যেই হয়ে গেল সুন্দর একটি আদর্শ কিচেন।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে অপর পাশের ইউনিটটির কিচেন টি। কিচেন এর ঠিক সামনেই চারটি চেয়ার এবং একটি ছোট গোল ডাইনিং টেবিলের মাধ্যমে খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে ফ্যামিলি লিভিং, কিচেন, ডাইনিং রুম একই স্থানে করা হয়ে গেল। তাই আমি সবসময় বলি আদর্শ ফ্লাট করতে স্থানের প্রয়োজন হয় না প্রয়োজন হয় আপনার একটু খানি পরিকল্পনা এবং তার সংস্থান।
রুমটিকে খানিকটা বড় দেখানোর জন্য পাশের দেয়ালটিতে একটি ফুল হাইট মিরর দেয়া হয়েছে। এটি বসবাসকারিদের দৃস্টি সিমা বৃদ্ধি করে রুমটিতে নিজেদেরকে আরো স্বাচ্ছন্দ বোধ করে বাস করতে উৎসাহিত করে।
বুঝতেই পারছেন অনেক অনেক দামি জিনিষ না লাগিয়ে শুধু একটু সুন্দর পরিকল্পনা কিভাবে আপনার ছোট বাথরুমটিকেও অনেক অনেক সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দময় করে তুলতে পারে।
যেহেতু মুল বাথরুমের সাইজ অনেক ছোট তাই বেসিনটি বাইরে করা হয়েছে। এবং সেখানে চমৎকার ভাবে কেবিনেট করে অল্পের মধ্যে সবকিছুর সংকুলান করার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। উপরে কাচের এবং নিচে ছোট ছোট ড্রয়ার করা হয়েছে। যাতে আপনার ব্রাস পেস্ট হতে শুর করে টওয়াল বা ওষুঘ পর্যন্ত সেটে যায়।
মেইন দরজাতেও রাখা হয়েছে অভিনবত্ব।
একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখতে পাবেন বাড়িটি নিচে প্রচুর পাথর ব্যাবহার করা হয়েছে। মুল বাড়িটি মাটি থেকে বেশ খানিকটা উচু করে বানিয়ে ফাকা স্থানটুকু পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে এবং তাতেও কিছুটা
ফাকা রাখা হয়েছে। এর কারন হচ্ছে বাড়িটি যাতে শীত বা গরমে মাটি থেকে আসা আদ্রতা স্পর্শ করতে না পারে। এতে পুরো বাড়িটি অত্যান্ত স্বাস্থকর হিসাবে তার বসবাসকারিদের সুবিধা দেবে।
রাতে নিচের দিকে আলো ছরিয়ে আলাদা একটি আভা নিয়ে আসা হয় পুরো বাড়িটিতে। একেবারে সাধারন একটি আইডিয়া অসাধারন একটি দৃশ্যের অবতারনা করে।
বাড়িটি কি ইটের তৈরি ভাবছেন?? মোটেই না। এটির মুল স্ট্রাকচার স্টিলের , দেয়ালগুলো এলুমিনিয়ামের সাথে থাই এবং গ্লাস রয়েছে। এছারাও ভিতরে ব্যাবহার করা হয়েছে কাঠ এবং বোর্ড। ফলে পুরো বাড়িটি আপনার কল্পনার থেকেও হালকা এবং খুবই বিদ্যুৎ সাশ্রই। বাড়িটি অতিরিক্ত তামপাত্র গ্রহনও করে না আবার ছারেও না। এবং যথেস্ট পরিমান সাউন্ড প্রুফ।
সামনে পাহাড়গুলো অসাধারন দৃশ্যের অবতারনা করে। ড্রইং রুমে বসে আপনি অপলক দৃস্টিতে পাহাড়গুলোকে অবলোকন করতে পারবেন দৃস্টির কোন বাধা ছারাই।
খুবই সাধারন এবং মনোরম একটি স্থানে অসাধারন এবং অত্যাধুনিক একটি বাড়ি। আশা করি আপনাদের ভালই লাগবে। পরের পরের্ব আরো চমৎকার সব বাড়ির ডিটেইলস নিয়ে আসার চেস্টা থাকবে। ধন্যবাদ এতক্ষন কস্ট করে পরার জন্য।