পরীক্ষার নাম হচ্ছে 'সৃজনশীল'।
নামেই বুঝা যায় পরীক্ষার ধরন টা কেমন। অর্থাৎ সৃজনশীলতা বা সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে যেই পরীক্ষা দেয়া হবে সেটাই সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি। সাধুবাদ এই পদ্ধতিকে। শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার টেন্ডেনসি থেকে দূরে রাখছে এই সিস্টেম। কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে।
পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় ছয় টা। আর সময় বরাদ্দ থাকে মাত্র দুই ঘন্টা দশ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই আবার এটেন্ডেন্স শীটে সাইন করতে হয়। সাথে ইনভিজিলেটরের খাতা সাইন করা তো আছেই। অংকের হিসেবে দেখা যায় প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পাওয়া যায় মাত্র বিশ মিনিটের উপরে কিছু সময়! সেখানে প্রশ্ন পড়তে কিছু সময় কেটে যায়। সময়ের এই স্বল্পকালে ক, খ, গ আর ঘ অংশ গুলো লিখতে হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় পৃষ্ঠা! পরীক্ষার নামই যখন সৃজনশীল তখন কিছু সময় তো চিন্তাভাবনা করা লাগেই। চিন্তা না করে মাথা না খাটিয়ে একটু ভেবে উত্তর না করলে সৃজনশীলতা বা সৃষ্টিশীলতাটা আসবে কত্থুকে? এই দুই ঘন্টা দশ মিনিট ছয়টা সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার ক্ষেত্রে খুবই অপ্রতুল। যে না দিয়েছে সে বুঝবে না। পরীক্ষা শেষে হাত কাঁপতে থাকে।
যেহেতু পরীক্ষা টা সৃজনশীল তাই সৃষ্টিশীলতার প্রমান তো একটু রাখা লাগেই। তাই স্টুডেন্টরা (আমিও) এক বিশেষ পথ ধরে। একটা প্রচলিত ধারনা আছে যে খাতা ভরা থাকলেই নাম্বার। আর সুন্দর আর চারুকার্যময় খাতা হলে আরো বেশি নাম্বার। সৃজনশীল পরীক্ষায় চলে এই দুই থিওরির অপপ্রয়োগ। ইংলিশে আছে ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্যা লাস্ট ইম্প্রেশন। তাই স্টুডেন্টরা প্রথম তিনটা প্রশ্নের উত্তর সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সুন্দর করে গুছিয়ে লেখে। এতে এক ঘন্টা পনেরো থেকে বিশ মিনিট কেটে যায়। এরপরেই চলে খাতায় কলমের জেট প্লেন। যেভাবে পারা যায় খালি লেখ। পারলে একই লাইন দশভাবে ঘুরায় লেখ। কিন্তু লেখ। লেখে খাতা ভরালেই নাম্বার। এখানে সৃজনশীলতার ধার দিয়েও কেউ যায় না। আর পারলে একটু আঁকিবুঁকিও চলে। এক্সট্রা নাম্বার পাওয়া যায়। তবুও অনেকে ফুল এনসার করতে পারে না। সবই হচ্ছে সময় স্বল্পতার কারনে। প্রথম দিকের প্রশ্নের উত্তর দেখলে নিজেই অবাক হয়ে যাই। আর পরের গুল যেন আলোর নিচের অন্ধকারের মতো। ঠিক এই জায়গাতে এসেই সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি মার খেয়ে যাচ্ছে। সময় একটু বাড়ালে আরো ভাল হতো।
এবার মুল বক্তব্যে আসি। সেদিন টিভিতে হেডলাইন দেখলাম ২০১৭ সাল থেকে (আমরা HSC দিব) দশ নম্বরের অবজেক্টিভ কমিয়ে আরো একটা সৃজনশীল প্রশ্ন বাড়িয়ে দিবে! সময়ও বাড়াবে খুব সামান্য। যেখানে ছয়টা লেখতেই টানাটানি পড়ে যেত সাত টা প্রশ্নের উত্তর দেয়া যারপরনাই কষ্টকর।
এখন কথা হচ্ছে কেন এই উদ্ভট সিদ্ধান্ত? কারন টা নাকি প্রশ্নফাঁস। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আমাদের উপর। কিন্তু এই প্রশ্নফাঁস টা কে করছে? ছাত্ররা? নাহ, শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মচারী আর বিবেকবর্জিত শিক্ষক। আর এদের অপরাধের মাসুল গুনতে হবে আমাদের! অনেকটা উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ের মতো হয়ে গেল না? ঠিক মতো উত্তর করা যায় না যেই সময়ে, যেই সময়ে লিখে কুলানো যায় না সেই সময়ে আরো একটা প্রশ্নের বোঝা চাপিয়ে দিলে পরীক্ষা তো খারাপ হবেই। বেশ কিছুদিন ধরে এও শুনা যাচ্ছে যে বোর্ড পরীক্ষা গুলো নাকি এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করা হবে। জানতে খুব ইইচ্ছা করে মন্ত্রী মশাইয়ের কোন পিতাজি এই এক হপ্তায় তেরো সাবজেক্টের পরীক্ষা দিয়েছে। এরকম উদ্ভট, বেঢপ আর অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ওই ভদ্রপল্লীর নিয়ম প্রনেতা দের উচিত ছিল একবার নিজেদের উপর এই সিদ্ধান্ত টা প্রয়োগ করে দেখা। তবেই তারা বুঝত কত সময়ে কয়টা সৃজনশীল।
নিয়ম বানানোর ভদ্রপল্লির কর্তারা তো নিয়ম দিয়েই খালাস। কিন্তু এই নিয়ম গলধকরন করতে গিয়ে যে কতো জনের গলায় কাঁটা বিধবে তার খোঁজ কে রাখবে? রেজাল্ট টা কিন্তু আজীবন আমাদের গলার কাটা হয়ে লেগে থাকবে।
আর বোর্ড কর্তাদের বলব আরেকটু ভাবুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন যে সমস্যাটা আপনারাই তৈরি করছেন। আপনাদের পাছা উদাম হয়ে আছে। সেদিকে খেয়াল না করে আপনারা মাথা ঢাকাতেই ব্যস্ত হয়ে আছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৭:৩৪