somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যবিত্তের বড় পোলা।

১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে হওয়ার কন্টক মুকুট মাথায় নিয়ে জন্মাবার মতো বালাই জগতে আর দ্বিতীয় টা নাই। এর জন্য অনেক কিছু স্যাক্রিফাইজ করা লাগে। অনেক কিছুর সাথে কম্প্রমাইজ করা শেখা লাগে।

মধ্যবিত্ত বাবা-মা কিছু পারুক আর না পারুক স্বপ্ন দেখতে পারে প্রচুর। স্বপ্ন দেখে তাদের বড় ছেলে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনবে। তারা শুধু স্বপ্ন দেখেই যায়। কিন্তু যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে তার সামর্থ্য টুকু আর বিচার করে না। অনেকেই এই এক্সপেক্টেশনের ভারে নুব্জ হয়ে পড়ে। আর দাঁড়াতে পারে না। স্বপ্ন ভঙ্গের দায়ে তারা ফ্যামিলির জন্য 'বোঝা' হয়ে উঠে।

জীবনের কঠিন হিসাব-নিকাশের মার প্যাঁচে পড়ে বড় ছেলে গুলো এক সময় জীবন্ত ক্যালকুলেটর বনে যায়। তাদের প্রোগ্রামার বাবা-মা। তারা দেখে বাবা মানুষটা কী অমানবিক খাটুনি খেটে টাকা উপার্জন করছে। দেখে স্বল্প শিক্ষিত মা কেমন দক্ষতার সাথে যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ করে প্রতিটা টাকা গুনে গুনে খরচ করছে। কোনো আজেবাজে খরচ নাই। অর্থের অর্থ মধ্যবিত্ত বাবার বড় ছেলেরা খুব ভালো ভাবে জানে।
একটা সময় যে বাবার কাছে ক্যান্ডি কেনার জন্য দুই টাকা চাইতে দ্বিতীয়বার ভাবা লাগত না বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই বাবা অচেনা হয়ে যায়। একটা খাতা কেনার টাকা কিংবা যাতায়াত ভাড়া চাইতেও নিজেকে ছোট মনে হয়। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দীক্ষা বড় ছেলে গুলো এখান থেকেই পায়। তারা বুঝতে শিখে যে বাবার কাঁধে আর বেশি দিন ঝুলে থাকা যাবে না। এবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সেভিংস ব্যাপার টা এরা ভালো বুঝে। টাকা পয়সার ব্যাপারে মধ্যবিত্তের বড় ছেলেরা অন্যদের চাইতে অনেক আগেই ম্যাচিউরড হয়।

অন্য বন্ধুরা যখন মোবাইলের এইট মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে সেলফি তুলে তখন তারা পকেটে রাখা মোবাইলটা সযত্নে নেড়ে দেখে যে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা। সেই মোবাইলে ফ্রন্ট ক্যামেরা দূরে থাক ব্যাক ক্যামেরার জন্যও কোনো ছিদ্র থাকে না। এমন না যে বাবা কে বললে একটা ভালো মোবাইল কিনে দিবে না। আজ না হয় কাল ঠিকই কিনে দিবে। কিন্তু বলতে সাহসে কুলায় না। তার মন সায় দেয় না। কারন সে জানে একটা মোবাইল কেনার জন্য বাবা কে কয়েক মাসের বাজার খরচ থেকে টাকা বাঁচাতে হবে। টাকায় টান পড়বে। সে বাপের বড় পোলা। তার দায়িত্ব অনেক। এমনটা সে হতে দিতে পারে না। তার দায়িত্ববোধ তাকে বাঁধা দেয়।

একেকটা ঈদ হয়ে উঠে তাদের জন্য একেকটা মন খারাপের উপলক্ষ। মধ্যবিত্ত এমন হয় যে প্রান যায় তবুও মান যেন না যায়। তাই বাবা মা নিজেদের মান রাখতে আর ছেলের মন রাখতে হয়তো ঈদে একটা নতুন পাঞ্জাবী নিতে বলে। কিন্তু ছেলের মন বাঁধা দেয়। সে ম্লান হেসে বাবা মা কে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলে যে গত ঈদের পাঞ্জাবীতেই তার চলে যাবে। তারা হঠাৎ করেই খুব সমাজবাদী হয়ে উঠে। গলায় বিপ্লবী সুর নিয়ে এসে বলে, “যতদিন এইদেশের সব মানুষ ঈদের দিন নতুন জামা না পরতে পারবে ততোদিন আমিও ঈদে মার্কেট করব না।’’ পাঞ্জাবীটার বগলের ওখানটায় যে ছিদ্র হয়ে আছে তা আর বলে না। বললেই জোর করবে হয়তো। কী দরকার শুধু শুধু টাকা খরচ করানোর? কোনো এক সময় গিয়ে সেলাই করিয়ে ভালো মতো ধুয়ে আইরন করে নিলেই হলো। ঈদ কাবার।

প্রেম করার জন্য মধ্যবিত্তের বর ছেলেরা পারফেক্ট চয়েজ। তারা ভালোবাসার মর্ম বুঝে। প্রিয় মানুষের প্রতি দায়িত্ববান হয়। কিন্তু সমস্যা হয় অন্যখানে। তাদের প্রেম চুড়ান্ত পরিনতি পর্যন্ত যেতে পারে না। কারন ছেলের উপর শুধু একটা মেয়েই না পুরো ফ্যামিলির দায়িত্ব এসে পড়ে। এই দায়িত্ব উপেক্ষা করে স্বার্থপরের মতো সে পালাতে পারে না। জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে নিজ পায়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে অনেক সময় লেগে যায়। একটা মেয়ে এতোদিন অপেক্ষা করতে পারে না। মনের অবাধ্য হয়েই ফ্যামিলির চাপে তাকে বিয়ে করতে হয়। মধ্যবিত্তের বড় ছেলে যখন চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় মেয়েটা তখন স্বামীর সংসারে পাক্কা গিন্নী বনে যায়।

তবে দিন শেষে বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত বাবার বড় ছেলেরাই জয়ী। এরা ভাল ফ্যামিলি ম্যান হয়ে উঠে। ভাল বাবা, ভালো জীবন সঙ্গী। যারা বাবা মায়ের স্বপ্ন কে ভার হিসেবে না নিয়ে জীবন চলার কঠিন পথের অনুপ্রেরনা হিসেবে নেয় তারা লাইফে শাইন করে। ছোট বেলা থেকে পেয়ে আসা ট্রেনিং একটা পর্যায়ে এসে কাজে দেয়। জীবন চলার পথে হোঁচট খেতে খেতে শেখা ব্যাপার গুলো দিয়ে তারা বড় সমস্যার সমাধান করতে পারে। তারা অর্থ কষ্ট কাকে বলে তা উদাহরন সহ বুঝে। তাই নিজ সন্তানদের আর সেই অভিজ্ঞতার মুখে ফেলে না। নিজের অতীত কিছুটা স্যাক্রিফাইজ আর কিছুটা কম্প্রমাইজ করে কাটলেও সন্তান আর জীবন সাথীর জন্য একটা ভালো ভবিষ্যত রেখে যেতে পারে। যে বাবা মা জীবন একদিকে আর ছেলের ভবিষ্যত একদিকে রেখে শত অভাবের মধ্যেও লেখা পড়া করিয়েছে তাদের জন্য একটা সুখকর শেষ বেলা এই মধ্যবিত্তের বড় ছেলেরাই উপহার দিতে পারে।
এভাবেই কাটে মধ্যবিত্ত বাবার বড় ছেলেদের এইসব দিন রাত্রি। জীবনের জটিলতায় একেকজন হয়ে উঠে জীবন যুদ্ধের ক্লান্ত কিন্তু বিজেতা যোদ্ধা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৪৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×