ইয়াহিয়া খানের কথামত তার শাসনামলে পাকিস্তানে প্রথম সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে অক্টোভর মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন হতে হতে ডিসেম্ভর লেগে যায়,কোনো কোনো ক্ষেত্রে জানুয়ারী ১৯৭১ চলে আসে।
এ নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানে ভোটার ছিল ২৩,৭৩০,২৮০ জন আর পূর্ব পাকিস্তানে ছিল ৩১,২১১,২২০জন ভোটার। নির্বাচনে মোট ২৪ টি দল অংশ নেয়। ৩০০ টি আসনে মোট ১,৯৫৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এর পর কিছু প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ১,৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে। আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং অবশিষ্টগুলি পশ্চিম পাকিস্তানে। জামায়াতে ইসলামী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী দেয়। তাদের প্রার্থী সংখ্যা ১৫১। পাকিস্তান পিপলস পার্টি মাত্র ১২০ আসনে প্রার্থী দেয়। তার মধ্যে ১০৩ টি ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে। পূর্ব পাকিস্তানে তারা কোন প্রার্থী দেয়নি। পিএমএল (কনভেনশন) ১২৪ আসনে, পিএমএল (কাউন্সিল) ১১৯ আসনে এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) ১৩৩ আসনে প্রতিদ্বন্দীতা করে।
ফলাফলে গিয়ে দেখা যায় আওয়ামীলীগ ১৬০টি আসন পায় যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬০টি। পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো আসন লাভ করতে পারে নি। পান্জাব,সিন্ধুতে ভোট পায় মাত্র ০.০৭%। আর বেলুচিস্তানে পায় ১% ভোট। অন্য প্রদেশ NWFP এ তে পায় মাত্র ০.২% ভোট।কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে পায় ৭৪.৯% ভোট। অন্যদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি ২য় হয় ৮৩টি আসন নিয়ে। যার পান্জাবে পায় ৬২টি আসন,সিন্ধুতে পায় ১৮টি আসন, NWFP তে মাত্র ১টি আসন পায় অন্য প্রদেশ বেলুচিস্তানে তারা কোনো আসন পায় নি মাত্র ২.৩%ভোট পায়। পিএমএল (কাইয়ুম) ৯টি আসন ৩য় হয় নির্বাচনে। যার একটি পান্জাবে, একটি সিন্ধুতে,৭টি NWFP তে। বেলুচিস্তানে তারাও কোনো আসন লাভ করে নি মাত্র ১০.৯% ভোট পায়,পূর্ব পাকিস্তানে তারা মাত্র ১% ভোট পায়। নির্বাচনে ৭টি আসন নিয়ে ৪র্থ হয় পিএমএল (কনভেনশন)। তারা ৭টি আসনই পায় পান্জাবে। পশ্চিম পাকিস্তানে তারা ভোট পায় ৬.৮% আর পূর্ব পাকিস্তানে পায় ২.৮%। নির্বাচনে ৭টি আসন নিয়ে ৫ম হয় জমিয়ত ইলেমা-ই-ইসলাম। তারা NWFP তে ৬টি আর বেলুচিস্তানে ১টি আসন পায়। পান্জাব,সিন্ধু,পূর্ব পাকিস্তানে তারা কোনো ভোট পায় নি। নির্বাচনে ৬ষ্ঠ হয় ৭টি আসন নিয়ে মারকাজি জমিয়ত-উলেমা-পাকিস্তান। তারা পান্জাবে ৪টি আর সিন্ধুতে ৩টি আসন লাভ করে। নির্বাচনে ৭ম হয় ৬টি আসন নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ওয়ালি। তারা বেলুচিস্তানে ও NWFP তে ৩টি করে আসন পায়। নির্বাচনে ৮ম হয় জামায়াত-ই-ইসলামী। তারা সিন্ধুতে ২টি ও পান্জাব, NWFP তে ১টি করে আসন লাভ করে। নির্বাচনে ৯ম হয় পিএমএল (কাউন্সিল) । তারা পান্জাবে ২টি আসন লাভ করে। ১০ ম হয় পিডিপি। তারা পূর্ব পাকিস্তানে ১টি আসন পায়। বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পশ্চিম পাকিস্তানে ১৫টি আর পূর্ব পাকিস্তানে ১টি আসন পায়।
প্রাদেশিক নির্বাচনের ফলাফল
প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান এ্যাসেম্বলীর ৩০০টি আসনের ২৮৮টি জিতে নেয়। পশ্চিম পাকিস্তানের অপর চারটি এ্যাসেম্বলীতে তারা কোন আসন পায়নি। পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের এ্যাসেম্বলীতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি ভালো করে কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসনে জয় পায়নি। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি) এবং পিএমএল (কাইয়ুম) ভালো করে।
আওয়ামীলীগ পূর্ব পাকিস্তানে ২৮৮টি আসন পায় আর অন্য প্রদেশগুলোতে কোনো আসন পায় নি। পিপিপি পান্জাবে ১১৩ টি,সিন্ধুতে ২৮টি আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ৩ টি আসন পায়। বেলুচিস্তানে তারা কোনো আসন পায় নি। পিএমএল (কাইয়ুম) পান্জাবে ৬টি,সিন্ধুতে ৫টি,উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ১০টি আর বেলুচিস্তানে ৩টি আসন পায়। পিএমএল (কনভেনশন) পান্জাবে ১৫টি,সিন্ধুতে ৪টি,উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ১টি আসন,পূর্ব পাকিস্তানে ১টি আসন পায়। জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামী পান্জাবে ২টি,বেলুচিস্তানে ২টি আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ৩টি আসন পায়। এছাড়া বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে পান্জাবে ৪৪টি আসন, সিন্ধুতে ২৩টি আসন,পূর্ব পাকিস্তানে ১২টি,বেলুচিস্তানে ১৫টি আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ২৩টি আসন পায়।
পূর্বে বাংলাদেশের নির্বাচন সর্ম্পকে পোস্ট করা হয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন সর্ম্পেকে পোস্ট করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯