পোশাক পাল্টানোর মতো আইন পাল্টাচ্ছে তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
যেকোন সাংবিধানিক সরকারকে তথাকথিত বলা অপরাধ। আসিফ নজরুলের মতো আইনের শিক্ষক না হলেও, যেহেতু আইন উন্মুক্ত বিষয় এবং যেকারো পড়ার সুযোগ ছিল, তাই এই বিষয়ে কিছু পড়াশোনা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে চলমান বর্তমান সরকারটি একটি অসাংবিধানিক সরকার। এরকম সরকারকে সো কলড বলা যায়।
একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এই হযবরল সরকারের উদ্ভব। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জনাব সলিমুল্লাহ খান এই সরকারের সাথে যুক্ত হাতে চাননি এর সাংবিধানিক এফিসিয়েন্সির কারণে। তিনিই মূলত এই সরকারকে হযবরল বলে আখ্যায়িত করেছেন। সরকার গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে সলিমুল্লাহ খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা বলেন। যদিও তা মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসেনি। অবশ্য পরবর্তীতে জনাব খান তাঁর অবস্থান জনসম্মুখেই পরিষ্কার করেছেন, রূপক অর্থে হলেও ছাত্রদের এই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলার বিপক্ষে তিনি। দেশ ১৯৭১ সালে একবারই স্বাধীন হয়েছে।
এই হযবরল সরকার ক্ষমতায় আসার আজ ১৩ দিন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ন্যূনতমভাবে নিয়ন্ত্রণে নিযে আসতে পারেনি তারা। দেশের তথা সরকারের অবস্থা এতোই নাজুক বা প্যান্ট খুলে পড়ার মতো যে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে সবাইকে অটোপাস করে দেবার দাবিতে সচিবালয়ের দশম তলায় মিছিল সহকারে প্রবেশ করেছে ছাত্ররা।
আহারে বাংলাদেশ। আজ ষোল দিন, দেশে কোন আইন আদালত নেই বললেই চলে। যা কিছু আইনি কার্যক্রম চালু তা দিয়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের এবং দীর্ঘ পনের বৎসর ক্ষমতার বাহিরে থাকা রাজনীতিবিদদের উপর থাকা মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে এবং সদ্য বিগত সরকারের মন্ত্রী এমপি এবং অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে।
আমি ফ্রান্স থাকি, আমি ডঃ ইউনুসকে ফ্রান্স সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে দেখেছি। কিছুদিন আগে প্যারিসে তাঁর নামে একটি রাস্তার নামকরণ হতে দেখে আনন্দিত হয়েছি। বৎসর দুয়েক আগে মালালা ইউসুফ জাইয়ের নামে একটি ছোট প্লাসের নাম দেখে তখন আমার মনে হয়েছিল আমাদের নোবেল লরিয়েটের নামেও হয়তো এখানে কখনো একটা কিছু হবে। সেদিন উনার নামে একটি রাস্তার নামকরণ হতে দেখে আনন্দ হয়েছিল এইজন্যেই। আমি ধরেই নিয়েছিলাম তিনি অত্যন্ত প্রাজ্ঞ ও সহনশীল একজন মানুষ হবেন। দুঃখিত, তিনি একটি হযবরল সরকারের প্রধান হয়ে যে চাঞ্চল্য ও প্রতিশোধ পরায়নতা প্রদর্শন করছেন, ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, নোবেল কমিটি অবধারিতভাবেই অপাত্রে কন্যাদান করেছে।
আমি ভেবেছিলাম তাঁর বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলো তিনি এটেন্ড করবেন এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজেকে বেকসুর প্রমাণ করবেন। আমি ভেবেছিলাম একটি সাংবিধানিক পথ খোঁজে সারাদেশের জনগণকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কৌশল অবলম্বন করবেন তিনি। আমি ভেবেছিলাম রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে রাষ্ট্র পুনঃনির্মাণের জন্য দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের সাহায্য চাইবেন তিনি। আমি ভেবেছিলাম আবু সাঈদের পাশাপাশি নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের মাথায়ও পড়বে তাঁর স্নেহের পরশ। আমি ভেবেছিলাম .......!
না, আমার বা আমার মতো কোটি মানুষের ভাবনার সাথে ডঃ ইউনূসের আচরণ মেলেনি। আইনকে যতেচ্ছা ব্যবহার করা হচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে সেই পুরাতন প্রক্রিয়ায়। আমরা কিন্তু অনেকেই বৎসরের পর বৎসর ধরে একটি ফখরুদ্দিন সরকারের অপেক্ষা করছিলাম, ডঃ ইউনূস আমাদেরকে হতাশ করলেন।
এই যে ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তা দাঁড় করানোর যোগ্যতা এই সরকারের আছে বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের ভেতরে থাকা প্রতিহিংসা বিষয়ক উপদেষ্টারা এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী।
এই সরকার ব্যর্থ হোক আমরা চাইনা। কিন্তু আমাদের চাওয়াতে তারা সফলও হতে পারবেনা। স্থানীয় সরকার সরকারের একটি চালিকা শক্তি, তা বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ আইনের মধ্যে থাকলেও তা মাত্র ৯০ দিনের জন্য। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে যে মানসিকতার দরকার এই সরকারের আসিফ নজরুল মার্কা উপদেষ্টাদের মধ্যে তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের প্রতি বিমাতা সুলভ নোংরা আচরণ করে কোনভাবেই দেশে কোন প্রকার নির্বাচন সম্ভব হবে না। যদি হয় তবে তা বিগত সরকারের মতোই প্রশ্নঃবিদ্ধ নির্বাচন হবে। যদি এখন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতো উদ্ভট আঁকার ধারণ করেছে তাহলে সিটি কর্পোরেশন উপজেলা বা পৌরসভার মতো জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্টানগুলো এখনই কেন ডিক্টেটর কায়দায় অবলুপ্ত করার চেষ্টা। নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যে না দিলে তো তা বিলুপ্তই করতে হবে। ক্রোধ আক্রোশ যদি আওয়ামীলীগের প্রতি থাকে, আওয়ামীলীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেবার মানসেই যদি তা করা হয় তাহলে তো নিশ্চিতভাবেই ভাবা যায় আগামী যেকোন নির্বাচনে বর্তমান অসাংবিধানিক এই সরকার আওয়ামীলীগের বিপক্ষে অবস্থান নেবে। বিশ্বজোড়া নামডাক যে ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের তিনি কি সত্যি এতোটা প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে চান। সারা জীবন ধরে এতো সম্মান এতো খ্যাতি এতো প্রাতিষ্টানিক পুরস্কার অর্জন করে মৃত্যুর আগে তিনি কি একটি জাতিকে দ্বি খন্ডিত করার দূর্নাম নিয়ে এই পৃথিবী ছাড়তে চান।
সেদিন গণভবনে ছাত্র জনতা ঢুকেছে, আজ সচিবালয়ে ছাত্ররা ঢুকেছে, আগামীকাল উপদেষ্টার বাসভবনে আর কেউ ঢুকার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হোক। অভিনয় করে হলেও তিনি একজন ভালো মানুষ, প্রধান উপদেষ্টার ভেতরের ভালো মানুষটি জেগে উঠুক। একটি ভালোবাসাময় বাংলাদেশ গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখে আমাদের সম্মানের মানুষ সকলের শ্রদ্ধার মানুষ হয়ে উঠুন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১:৫৮