কয়েছ আহমদ বকুল এর মত, মতান্তর - ০১
সাধারণ নির্বাচন ২০২৩,
কতটা বিশ্বস্ত থাকতে পারবে সরকার
_______________________________________
বাংলাদেশের সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছিল ২০১৮সালের ৩০ ডিসেম্বর। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে একটা কথিত বিরোধীদল নির্বাচনে অংশগ্রহন করলেও সরকার তথা আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণাধীন সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিস্টতা পায় আওয়ামীলীগ।
আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতার চেয়েও নির্বাচনকে প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা। ২৯৮ টি নির্বাচনী আসনে নির্বাচন অনুষ্টিত হয় অথচ ধানের ছড়া বা ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচিত হয় মাত্র ৭টি আসনে। যেকোনভাবেই নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসেন। চট্রগ্রামের একটি ভোট সেন্টারে ভোটের আগের রাতে নৌকা সিলমারা একবক্স ব্যালেটের সন্ধান দেন বিবিসি বাংলা বিভাগের এক সাংবাদিক। আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে বলে অভিযোগের পালে হাওয়া দেয় ঐ ভিডিও ফুটেজ। নির্বাচন নিয়ে খুব ভালো কথা বলেনা পর্যবেক্ষণে থাকা বিদেশী সংস্থাগুলো। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবার জন্য সমান ছিলোনা বলে আলোচনা হয়। জাতীয় নির্বাচন নিজেদের মাধ্যমে করতে যতটা বিশ্বস্ত হতে হয় আওয়ামীলীগ ততটা বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে পারেনি বলে কথা উঠে।
কিন্তু এতো কথা উঠার পরও, সকল প্রশ্ন ও অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে এবং প্রায় নির্বিঘ্নে সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার দেশে চলমান করোনা মহামারীর কঠিন পরিস্থিতিকেও সহনশীলভাবে মোকাবেলা করে।
লক্ষ করছি, একমাত্র নির্বাচন প্রক্রিয়া ছাড়া আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের তেমন কোন বড় অভিযোগ নেই। রাজনৈতিক কারণে কিংবা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির গোপন ষড়যন্ত্রে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে দেশে বিচ্ছিন্ন কিছু আন্দোলন বা সরকার বিরোধী পরিস্থিতির সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলেও সাধারণ মানুষ সেইসব আন্দোলনে তেমন সম্পৃক্ত হয়নি অথবা সম্পৃক্ত হবার সুযোগ পায়নি। সরকার শান্ত এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে সেইসব বিশেষ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে জনসাধারণের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে উদাসীন রয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার!
নির্বাচন নিয়ে মানুষের অভিযোগ বা প্রশ্ন কি সরকার একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেনা? ধারণা করি সরকারের এবং দল হিসাবে আওয়ামীলীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সর্বাধিক চিন্তা ও বিবেবচনায় রয়েছে নির্বাচন, নির্বাচন বিষয়ে উঠা প্রশ্নগুলো এবং বিরোধীদল, বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচনে আসতে না চাইলে কী প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থায় একটি গ্রহনযোগ্য অথবা ন্যূনতম গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করা যায়। এই চিন্তা বা আলোচনা সরকারের মধ্যে হঠাৎ আসেনি। একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগুচ্ছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে এসেছে সরকার। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো দলীয় মার্কা দিয়ে স্থানীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বিএনপি বা অন্যকোন রাজনৈতিক দল প্রত্যাখ্যান করেনি। প্রথমদিকে সকলেই দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্ৰহণও করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চরমভাবে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্ৰহণ থেকে সরে আসে। ফলে আওয়ামীলীগ বা সরকার স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে আসার যে মূল কারণ সেটা পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরু করে।
আওয়ামীলীগের দলীয় মার্কা নৌকা, বিপরীতে দীর্ঘদিন থেকে শক্তিশালী একমাত্র মার্কা ছিলো ধানের ছড়া। আওয়ামীলীগ বা সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষের কাছে নৌকার বিপরীতে অন্য মার্কা অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মার্কা পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছে। আওয়ামীলীগ বা সরকার সেক্ষেত্রে অনেকাংশেই সফল হয়েছে বলা যায়। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নৌকার বিপরীতে বিজয়ী জনপ্রতিনিধির সংখ্যাই বেশি এবং তার অধিকাংশই নৌকা না পাওয়া আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বিএনপির কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্ৰহণ করলেও তাদের অধিকাংশ নির্বাচিত হতে পারেনি। নিজেদের কোন মার্কা না থাকা বা নির্বাচন কমিশনে নিজেদের নিবন্ধন না থাকা জামায়াতে ইসলামী স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্ৰহণ করে আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছে।
কোন কারণে বিএনপি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জন করলে এবং আওয়ামীলীগ ২০২৩ সালে একটি সাধারণ নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হলে স্থানীয় নির্বাচনের এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া হয়তো সরকারকে সহযোগীতা করতে পারবে।
কিছু আসনে নিজেদের তুলনামূলক যোগ্য প্রার্থীকে নৌকা দিলোনা দল আওয়ামীলীগ, যোগ্যরা বিদ্রোহী প্রার্থী হলো। জামায়াতে ইসলামী স্থানীয় নির্বাচনের মতো তাদের জয় পাবার সম্ভাবনাময় আসনগুলোতে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয় পেলো।দল হিসাবে বিএনপি তাদের অনমনীয় অবস্থানে থাকলে দেশের অন্তত পঞ্চাশটি আসনে বিএনপির লোকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে। অনেকেই নির্বাচিত হয়ে আসবে। আওয়ামীলীগ বা সরকারের এই পরিকল্পনা হয়তো নির্বাচনকে নিয়ে উঠা প্রশ্নগুলো অনেকাংশেই কমিয়ে দেবে। আওয়ামীলীগের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শত্রু জামায়াতে ইসলামী এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে গ্রহনযোগ্য করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।
সরকার আগামী নির্বাচনে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে পারলে ১৭ থেকে ২৫ টি আসনে স্বতন্ত্রভাবেই বিজয়ী হবে জামায়াত।
বিএনপি বা কোন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়াও একটি ন্যূনতম গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করতে নিজেদেরকে বিশ্বস্ত রাখার কোন বিকল্প নেই আওয়ামীলীগ বা সরকারের কাছে।
২৭/০১/২০২২
চলবে ......
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩০