আমরা গরীব দেশের মুসলমান মানুষ, এই সত্য অনস্বীকার্য!
আমরা প্রায় প্রত্যেকে দেশ ছাড়ি মূলত জীবিকার তাগিদে, বিদেশ এসে অনেকে অনেক ভাবে প্রতিষ্টিত হয়ে গেলেও অধিকাংশই থেকে যাই খেটে খাওয়া দিন মজুর! আমেরিকা লন্ডন বা ইউরোপ সবখানে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসা প্রতিষ্টানের মালিকেরা এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শ্রমিককে পছন্দ করে একমাত্র কম বেতনের কারণে! অর্থাৎ আমরা সস্তা, আমাদের মজুরির মূল্য কম! আমাদের প্রয়োজন বেশি বলেই আমাদের এই অবস্থা!
আমাদের দেশের মেয়েরাও অনেক বৎসর থেকে প্রবাসে শ্রম বিক্রি করতে আসেন! বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতেই গৃহকর্মের জন্য বাংলাদেশী নারীদের প্রেরণ করা হয়! কিন্তু নামে মুসলিম ঐ নাপাক গুলোর অধিকাংশের ঘরেই একাদিক স্ত্রী থাকার পরও নারী গৃহকর্মীকে শারীরিক লালসার বস্তুতে পরিণত করে, ধর্ষণ করে! পিতা পুত্র মিলে এক গৃহকর্মীর সাথে যৌনাচারে লিপ্ত হবার কথাও শুনা গেছে বহুবার!
বাংলাদেশের নারীরাই অধিকাংশ ভাবে সেই সব অত্যাচারের শিকার হয়ে নিহত হোন, কারণ ফিলিপিন বা ইন্দোনেশিয়ান ও শ্রীলঙ্কার গৃহকর্মীরা যত সহজে এসব নোংরা পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে বাংলাদেশিরা তত সহজে এসব মেনে নিতে পারেনা! তারা প্রতিবাদ করে, পালাতে চায়, পুলিশে যেতে চায়, দেশে ফিরতে চায় এবং শেষমেশ নিহত হয়!
গত শনিবারে মুসলমানদের তীর্থ স্থান মহান সৌদি আরব থেকে এক কিশোরীর মরদেহ এসেছে। কাগজপত্রে আত্মহত্যা বলা হলেও আত্মহত্যা না। সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। ১৩ বছরের একজন কিশোরী কীভাবে বিদেশে যায় কাজ করতে, এ প্রশ্নের জবাব দেবার মতো আমাদের দেশে আসলে কেউ নেই! একটি দেশ এতো উদ্ভট হয় কী ভাবে?
গত আগস্টেই সৌদিতে মৃত্যু হয় ১৪ বছরের কিশোরী কুলসুমের। যে বাড়িতে কাজ করতো সেই বাড়ির নিয়োগকর্তা ও তার ছেলে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মেরে দুই হাত-পা ও কোমর ভেঙে দিয়ে একটি চোখ নষ্ট করে দিয়ে তারপর ওই অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়! অক্টোবরে সৌদি থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফেরেন খুলনার রুনু বেগম।
করোনার ৮ মাসে সৌদি আরব থেকে ২২ জন, লেবানন থেকে ১৪, জর্ডান থেকে ১১, ওমান থেকে ৭, আরব আমিরাত থেকে ৪জন নারী কর্মীর মরদেহ এসেছে। গত চার বছরে সৌদি আরব থেকে ১৭৫জনের লাশ এসেছে। অবশ্য সরকারি হিসাব এটা। প্রতিটি মৃত্যুই প্রশ্নবিদ্ধ। এসব মৃতের অধিকাংশের শরীরে অকথ্য অত্যচারের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এরপরও আমাদের মেয়েরা আমাদের বোনেরা দেশ ছাড়ছে, ঐ সব বর্বরদের দেশে জীবিকার তাগিদে যাচ্ছে, যেতে হচ্ছে!
এই যে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি নারী নির্যাতন ধর্ষণ এবং হত্যা এর সবগুলো খবর জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচার হয়! আমার ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইরা কোন প্রতিবাদ করেনা! করবে ও না!
দীর্ঘদিন ইউরোপ বা এই অঞ্চলে থাকি, নানা রকম ছিনতাই বা স্থানীয় সন্ত্রাসী হামলায় অনেক বাঙালি ভাই আহত বা আক্রান্ত হবার খবর শুনলেও কোনদিন কোন বাংলাদেশি নারীকে কোণ প্রকার বিপদের সম্মুখীন হতে শুনিনি! নারীর প্রতি সম্মান ইউরোপের এক অলিখিত ধর্মের নাম!
আমাদের দেশের ধর্ম ব্যবসায়ীরা এবার ঐক্যজোট! আমি সচেতন ভাবে বলছি ধর্ম ব্যবসায়ীরা, এই সেই বাবুনগরী যে আজ বর্তমান সরকারের একশত বৎসরের আয়ু কামনা করে বক্তৃতা করে গেল সে তো শাপলা চত্বরে কোমলমতি শিশুদের নিয়ে এসেছিল রাষ্ট্রপতি হবার স্বপ্ন নিয়ে! শাপলা চত্বর পরবর্তী সময়ে আল্লামা শফি আওয়ামীলীগ সরকারের ঘনিষ্টজন হয়েছিলেন চট্রগ্রামে রেলের ভূমি তাঁর পুত্রের নামে শত বৎসরের লীজের বিনিময়ে! এইসব ব্যবসা নতুন নয়, অনেক পুরাতন! এরা ব্যবসায়ী!
রাসূলে করিম সাঃ এর যে কোন অপমানে মুসলমান হিসেবে সকলেরই ব্যথিত হওয়ার কথা! আমরাও হই! কিন্তু মহানবী সাঃ কে কেন্দ্র করে কোন গুজব বা অপপ্রচারকে পুঁজি করে বাংলাদেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদেরকে যেভাবে বিক্ষুব্ধ করা হচ্ছে তা অন্যায়!
ফরাসি রাষ্ট্রপতি, রাসূলে করিম সাঃ কে বা ইসলাম ধর্মকে উদ্দেশ্য করে কিছুই বলেননি! তিনি এরকম কিছু বললে ফ্রান্সেই হাজার হাজার মুসলমান এর প্রতিবাদ করতো! বাস্তবতা হলো কট্টরপন্থী নেত্রী মারিয়া লো প্যানের বিপরীতে লক্ষ লক্ষ মুসলমানের ভোটেই নির্বাচিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাক্রোন! সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন মুসলমান বান্ধব রাষ্ট্রপতি!
শুরুর কথাটাই শেষে বলি, আমরা একটা মুসলমান দেশের দরিদ্র নাগরিক! আমাদের অন্য বস্ত্র বাসস্থানের নিশ্চয়তা দেবার ক্ষমতা আমাদের রাষ্ট্রের নেই! আমাদেরকে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়তে হয়! পৃথিবীতে মাত্র যে কয়টি হাতেগুনা দেশ আমাদেরকে চাকর, নিম্নশ্রেণীর মানুষ না ভেবে কেবল মানুষ মনে করে তার মধ্যে অন্যতম ফ্রান্স! কোন কারণেই, কোন রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশের সাথে ফ্রান্সের কূটনৈতিক সম্পর্কটা খারাপ হতে দেবেন না!
ভালো হোক সকলের
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২