somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ভুল ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে ফ্রান্স?

২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





বাংলদেশের রাজনৈতিক আবহে ফ্রান্স এখন বায়ান্ন তাসের বান্ডিল। কে কত ভালো খেলতে পারেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে ডানপন্থী মৌলবাদী শিবির প্রথম দিকে খেলাটা ভালো খেলতে পেরেছে বলেই মনে হচ্ছে। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী এই চক্রটি সরকার তথা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নেতিবাচক অর্থে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলেও ফ্রান্স নিয়ে তাদের উগ্র ও আক্রমণাত্মক মানসিকতা বাংলাদেশের একটা আলাদা পরিচয় বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
ফ্রান্স বিশ্বে যে চারটি দেশে তাদের নাগরিকদের সতর্ক ভাবে অবস্থান করতে এবং ভ্রমনে না যাবার অনুরোধ করছে তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি যতটানা এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম স্থান পাওয়ার জন্য দায়ী তারচেয়ে অনেক বেশি দায়ী সরকারের ভেতরকার মৌলবাদী চক্র।

আওয়ামীলীগ একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ছিল। কিন্তু বিগত দশকে খুবই দুঃখজনক ভাবে লক্ষ করা গেছে আওয়ামীলীগ তাদের সেই চেতনাকে আসলে অন্তর মনে খুব বিশ্বাস করেনা। নামে আওয়ামীলীগ হলেও এই দলটির স্থানীয় এমন কি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতারই চলাফেরা জীবন দর্শন সাম্প্রদায়িক নেতাদের মতোই। তাদের চরিত্রে ধর্মীয় বিষয়টা সে অর্থে খুব উপস্থিত না থাকলেও সংখ্যাঘরিষ্ট মুসলমান মানুষের দেশে নিজেদেরকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে তারা মূলত সাধারণ মানুষের পাশাপাশি থাকার চেষ্টা করেন। সেই কারণেই এই দলটিকে এখন আর অসাম্প্রদায়িক দল বলার সুযোগ খুবই কম।

বিশ্ববাজারে ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের চলমান পরিস্থিতি এবং রাসূল করিম সাঃ এর কার্টুন প্রদর্শন পরবর্তী সময়ে ফরাসি রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা প্রথম দিকে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে বা কোন ভাবেই তেমন লক্ষ করা যায়নি। মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অঘোষিত নেতা এবং সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদ তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইপ এরোদগণ ফরাসি পণ্যবর্জনের ঘোষণা দেবার পরই বাংলাদেশের সচেতন মুসলিম সমাজ নড়েচড়ে বসেন। ফরাসি পতাকা জ্বালানো, ফরাসি রাষ্ট্রপতির ছবি বিকৃত করা, সাইবার আক্রমন সহ বিভিন্ন অপপ্রচারে অংশ নেন তারা। আওয়ামীলীগ সরকার মৌন থেকেই সেই সব কর্মকান্ডে তাদের সমর্থন আছে বলেই জানিয়ে দেয়। এতে আওয়ামীলীগের দুটি লাভ, প্রথম লাভ বর্তমানে বাংলাদেশে রায়হান হত্যা, ধর্ষণের আগ্রাসী অবস্থান, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সাধারণ মানুষ সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনায় না গিয়ে ফ্রান্স নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। দ্বিতীয় লাভ ভারত আমেরিকা সহ অন্যান্য শুভাকাঙ্খী দেশগুলোকে আওয়ামীলীগ দেখাতে পারলো মৌলবাদী বা উগ্র পন্থার মুসলমানরা এখন বাংলাদেশে সরব সুতরাং যেকোন ভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা এখনো প্রয়োজন। কিন্তু নিজের সরকারের বা দলের লাভের কথা চিন্তা করে পুরো দেশটাকেই বিশ্বের কাছে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করার আওয়ামীলীগের এই কৌশল নিশ্চিত ভাবেই নিন্দনীয়।

ফ্রান্স কি আসলেই একটি মুসলিম বিদ্বেষী রাষ্ট্র? সহজ জবাব, না। ফ্রান্সের কোন রাষ্ট্র ধর্ম নেই, সে কারণেই এই রাষ্ট্রটির কোন ধর্মের প্রতিই আলাদা কোন আকর্ষণ বা বিদ্বেষ নেই। ফ্রান্সের নাগরিকদের যে কেউ তার ইচ্ছা মতো নিজের ধর্ম পালন করতে পারে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রটৌকলের মাধ্যমে সেই ধর্মকর্ম করার ব্যবস্থা করা হয়। ফ্রান্স মূলত তিনটি মৌলিক বিষয়কেই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র হিসেবে বিশ্বাস করে। এগলিটি, ফ্রেটার্নিটি এবং লাইসিটি। এগালিটি হচ্ছে ফ্রান্সের সকল নাগরিক সমান, সকল নাগরিকের অধিকার সমান। ফ্রেটার্নিটি হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের সাথে প্রত্যেক নাগরিকের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিশ্চিত করা। লাইসিটি হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত এই মৌলিক বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রপতি পুনরায় বলার কারনে বা ব্যাখ্যা করার কারণে তাঁর বক্তব্যকে ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য বলা হচ্ছে। যারা এই কথা প্রচার করছেন, এর প্রতিবাদ করছেন আমার মনে হয় তারা না জেনে না বুঝেই এটা করছেন। রাষ্ট্রপতি এখানে নতুন কিছুই বলেননি, রাষ্ট্রের সংবিধানের এই বিষয়টাকে তিনি পরিষ্কার করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। ফ্রান্সে ইসলাম বা মুলমান নগরিকরা কোন প্রকার হিংসা বিদ্বেষের সম্মুখীন হচ্ছেন না। তবে হ্যা, যেসব রাষ্ট্রে উগ্র ভাবে অন্যায় ভাবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সে সকল রাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসী বা স্বল্প মেয়াদে কাজের অনুমতি পাওয়া নাগরিকের বিষয়ে বিরোধীদল এবং ফরাসি নাগরিকদের চাপের মুখে সরকার হয়তো কোন সিদ্ধান্ত নিতেও পারে। এরকম কিছু হলেও নিশ্চিত ভাবেই বাংলদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।


একজন মুসলমান হিসেবে হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর কার্টুন তৈরিতে আমার ব্যক্তিগত প্রতিবাদ আছে। আমাদের নবী মোহাম্মদ সাঃ এর জীবদ্বশায় তাঁর কোন প্রকার চিত্র বা ছবি তৈরী হয়নি। তাহলে তথাকথিত এই কার্টুনকে প্রথমত আমি নবীজির কার্টুন বলেই মানতে চাইনা। এরপরেও নিশ্চয়ই এরকম কার্টুন করা নিন্দনীয় অপরাধ। রাসূলে করিম সাঃ এর জামানায়ও তিনি এরকম বহুবার মানুষের বিকৃত মানসিকতার আক্রমণের শিকার। কিন্তু কখনোই তিনি এই কারনে যুদ্ধ বাদিয়ে দেয়া বা মানুষ হত্যা করাকে সমর্থন করেন নি। ফরাসি পত্রিকায় রাসূলে করিম সাঃ এর কার্টুন ছাপাকে কেন্দ্র করে পত্রিকা অফিসে হামলা করে যারা ১২ জন সাংবাদিক ও কর্মচারীকে হত্যা করলো তারা সন্ত্রাসী। এরই রেষ ধরে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমন করে ১৩০ জন মানুষ মারা হলো তাও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। একজন মুসলমান লরি ড্রাইভার একটি অনুষ্টানে লরি দিয়ে হামলা করে ৮৪ জন মানুষ মেরে ফেললো সেটাই ধর্মীয় উগ্রপন্থা। শিক্ষক স্যামুয়েলকে রাস্তায় কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করলো যে ১৮ বছরের যুবক সেটাও সন্ত্রাসী কাজ। তাহলে আজ আমরা যারা সেই সব হত্যা কাণ্ডের বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না করে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির বিকৃত ছবি উপস্থাপন করছি, পণ্য বর্জনের বেহুদা ডাক দিচ্ছি আমরা তাহলে কী ?

ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ছোট্ট বাক্যটাকে বিশ্বাস করলে অন্তর মনে এতোটা হিংস্র আমরা হতে পারতামনা।

আমাদের দেশে ধর্ম একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। সেই হাতিয়ার ব্যবহার করে মূলত এবার ইউরোপে থাকা হাজার হাজার অসহায় বাংলাদেশী ভাইদেরকে বিপদগ্রস্থ করা হচ্ছে।

রাষ্ট্র হিসেবে ফ্রান্স একটি মানবিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে মানবিক হতে হয় , ধর্মীয় হলে চলেনা।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৪:৫৫
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×