দেশের জনগনকে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বশেষ গনতান্ত্রিক পন্থা হচ্ছে ইউপি নির্বাচন। দেশে দশম ইউপি নির্বাচনের ৫ম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৫ জানুয়ারি। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের ইউনিয়নের ও নির্বাচন হতে যাচ্ছে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আছে জিজ্ঞাসা, প্রত্যাশা। একটি ইউনিয়নে ১ জন চেয়ারম্যান ৯ টি ওয়ার্ডে ৯ জন মেম্বার এবং তিনটি সংরক্ষিত আসনে ৩ জন মহিলা মেম্বার নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়ন পরিষদ। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নাগরিককে তার সব অধিকার, সুবিধা দেওয়াই মূল লক্ষ্য থাকে এই পরিষদের
ইউনিয়নে পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে আসার পর এর সুবিধা অসুবিধা দুই রয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে প্রচারের ভাষা, ইশতেহার আর প্রার্থী দের ভোট চাওয়ার আপিলে। কিন্তু জন প্রত্যাশা এখনো আগের মতোই অপরিবর্তিত। এখনো জনগণ চায় জনপ্রতিনিধি যেই হৌক নিশ্চিত করুক তার সর্বোচ্চ অধিকার। সেগুলো স্থান পাক তাদের ইশতেহারে।
কিন্তু বড়ই দুঃখজনক বিষয় নির্বাচনের বাজারে সবাই প্রচারণা, প্রতীক মিছিল কিংবা ঘরোয়া সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত।কোন প্রার্থীকেই বলতে শোনা যায়না তার ইশতেহার কি?, তিনি প্রার্থী কেন হলেন? কি দিবেন? নেই তার কোন কথা।শুধু মাইকেই শোনা যায় ভোট চাই ভোটারের দোয়া চাই সকলের। কিন্তু এই ভোট কেন দিবে? কাকে দিবে? নেই তার কোন আপিল। একজন নাগরিক হিসেবে একটি আদর্শ ইউনিয়নে যেই প্রত্যাশাগুলো রয়েছে তারা না বললেও আমরা বলতে চাই।তুলে ধরতে চাই।অন্তত তারা যেন নির্বাচন পরবর্তীতে কাজ শুরু করতে পারে। জনগনকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে। সাধারন নাগরিকের প্রত্যশার ইশতেহার তুলে ধরছি নিচে।
প্রথমত যে জিনিসটি নিয়ে কাজ করতে হবে তা হলো মাদক আর সরকারি সহায়তা নিয়ে। সবার আগে সরকরি সহায়তা নিয়ে একটি স্বচ্চ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। কোন খাতে কোথায় খরচ তার স্বচ্ছ হিসাব এবং তথ্য অধিকার আইনের আওতায় যেন যে কেউ জানতে পারে সেই সুযোগ রাখা হয়। এছাড়া ইউপি বাজেট যেন জনসম্মুখে জনগনকে নিয়ে করা হয় ও তার বাজেট এবং এর পরবর্তী ফলোআপ যেন ইউপি সাইটে প্রচার করা হয়।
মাদক মহামারী আকার ধারন করেছে। সব বয়সীরা এখন নানান মাদকে আসক্ত। তাই প্রয়োজন মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ও মাদক সেবন কারীদের সুস্থ পরিচর্যা। এসবের জন্য থাকা দরকার ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল গুলো আনা উচিত সিসিটিভির আওতায়। বাড়ানো উচিত গ্রাম পুলিশের টহল।
এছাড়া স্থানীয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, কিশোর গ্যাং, শিক্ষার হার নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা।
কেবল জনপ্রতিনিধি দাড়ালেই নয় কার কি কাজ, কতটুকু দ্বায়িত্ব আছে এবং কাজ করার এখতিয়ার আছে সে সম্পর্কেও রাখা দরকার সম্যক ধারনা। বিশেষত, সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের জন্য রাখা উচিত আলাদা নজর। যেন তারাও তাদের সর্বোচ্চ দিতে পারেন ও আদায় করতে পারেন। এধরনের নির্বাচনে দেখা যায় তারা বরাবরই অবহেলিত থাকে।
সামাজিক সুরক্ষা ভাতার সুষ্ঠু বন্টন ও তদারিক হওয়া উচিত। ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থাকবে সিটিজেন চার্টার। ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিক যেন তার সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে কাজে দিতে পারে ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নির্ধারিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ, গ্রুপ ও ইউপি নির্বাচনে দাড়ানো প্রার্থীদের পেইজ। নাগরিক মতামত যেন প্রদান করতে পারে সে ব্যবস্থাও রাখা উচিত।
এসব যেমন একদিনে জাদুর কাঠিতে পরিবর্তন সম্ভব নয় তেমনি এখানো আশা প্রত্যাশা গুলো খুব বড় কোন প্রত্যাশাও নয়। তাই দরকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সৎ উদ্যোমী উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টা এবং বছর ভিত্তিক পরিকল্পনা। যা তারা জনসম্মুখে করা বাজেটের মাধ্যমে পরিকল্পনা গঠন,পরিবর্তন, পরিমার্জন ও বাস্তবায়ন করতে পারবে।
তাই নির্বাচনের শেষ মূহর্তে এসে যেন প্রার্থীরা এসে ভোট চাওয়ার সময় যেন বলে ইউনিয়ন নিয়ে তার ইশতেহার কি, বছর ভিত্তিক পরিকল্পনা কি এবং কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন।
সর্বশেষ, হাইমচরের ২ নং উত্তর আলগী ইউনিয়েনের এক প্রতিবন্ধী মেম্বার প্রার্থী হয়েছেন তার নাগরিক চাহিদা না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে। এবং তিনি তার ইশতেহার ঘোষনা করেছেন সর্বোচ্চ দিবেন নাগরিক অধিকার আদায়ে। এছাড়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ছয় নম্বর ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতু। যা আমাদের মাঝে আশার জোয়ার সৃস্টি করছে যে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে তার অধিকার নিয়ে কথা বলার ও জনগনের অধিকার এর জন্য লড়ে যাবার। যার প্রমান এই দুটি ঘটনা। মানুষ সচেতন আগের থেকে।তাই ভোট দেবার আগে ইশতেহার নিয়ে ভাবুন।প্রার্থী আপনাকে ইশতেহার না দিলে ভোট চাওয়ার কালে তার কাছে ইশতেহার চান। ভোট কেবল নাগরিকের অধিকার নয় কর্তব্য। এবং ভোট অধিকার প্রয়োগের আগে কাকে কেন ভোট দিবেন তার ভাবনাও নাগরিক কর্তবের অংশ।
একটি সফল ও স্বার্থক নির্বাচন তখনই সম্ভব যখন একজন নাগরিক জানতে চাইবে সে ভোট কেন কাকে দিবে এবং প্রার্থী তার ইশতেহার জানাবে। কেন তাকে ভোট দিবে; আর প্রশাসন সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশের ব্যবস্থা করবে। এই তিনে মিলেই তবে সফল স্বার্থক ইউপি নির্বাচন সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৩৮