করোনাঃ সরকারি সাহায্য, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের দায়িত্ব
--বাহাউদ্দিন আবির
সারাদেশে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে লকডাউনের দেড়মাস পেরিয়ে দুমাসের পথে। বর্তমানে সারাদেশে করোনাভাইরাস এর সংক্রমনের সংখ্যা বাড়ছেই দিনে দিনে। সর্বশেষ (১৩-০৫-২০২০) সরকারি হিসেব মতে, এক থেকে শুরু হয়ে সর্বশেষ সর্বোচ্চ সংক্রমণ একদিনে চিহ্নিত হয়েছে ১১৬২ জন যা সব মিলিয়ে ১৭৮২২ জন সব মিলিয়ে ও সর্বমোট মৃত্যু ২৬৯ জন। এই সংখ্যা দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছেই। দেশের প্রায় সব জেলাতেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সরকার একদিকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষনা করে এখন তা কিছুটা শিথিল করেছে অর্থনীতি সীমিত পরিসরে চলমান রাখতে। তারই পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পন্য সরবারাহের জন্যও। কিন্তু দিন যত বাড়ছে লকডাউন অমান্যের সংখ্যাও বাড়ছে,সংক্রমনের সংখ্যাও বাড়ছে।
এমূহর্তে যারাই লকডাউন অমান্য করছে অধিকাংশই নিজেদের ক্ষেত্রে যুক্তি দিচ্ছে পরিারের চলার মতো অর্থ কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব মেটাতে তারা এই ভাইরাসের ঝুঁকি জানা স্বত্বেও বাহিরে বের হয়েছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ হতে নানান প্রণোদনা ও ত্রানের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে এবং তা বন্টন ও হচ্ছে। কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি,সরকারি সাহায্য লোপাট এবং অনেকক্ষেত্রে দলীয় লোকদের মাঝে বন্টনের অভিযোগ উঠেছে। এসবের কিছু কিছু ঘটনা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও হয়েছে যেমন সরকারি সাহায্যে লুটপাটের কারনে প্রায় ৫০ জনের মতো জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত করা হয়েছে।আবার কোথাও সরকারি সাহায্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্টন না করে বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বন্টনের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে যারা বিভিন্ন এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা (ভোটার নয়) তারা সাহায্য পাচ্ছে না ঠিকমতো। এদের অধিকাংশই শহরে বিভিন্ন কাজের খাতিরে অবস্থান করছিলো। করোনা একটি মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করছে।এই সংকটে সকল শ্রেণীর মানুষ পড়লেও এমূহর্তে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে মধ্যবিত্তরা।তারা না পারছে চাইতে না পাচ্ছে সরাসরি কোন সাহায্য। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি উদ্যোগ ও নিয়েছে মধ্যবিত্তের ঘরে খাবার পৌছে দেওয়ার।
সরকার প্রথম থেকেই খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যের ও ঘোষনা দিয়েছে এবং তা বন্টন হলেও প্রকৃত ভুক্তভোগীর নিকট পৌছায় কিনা একটি বড় প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কেননা নাহলে এত মানুষ লকডাউন কেন ভাংতে উৎসাহী হচ্ছে?
একদিকে মানুষ বলছে ঘরে খাবার নেই। না খেয়ে মৃত্যুর চেয়ে করোনায় মৃত্যু ভালো। অন্যদিকে সরকার বলছে তারা পর্যাপ্ত সাহায্য পৌছে দিচ্ছে জনগনের দোরগোড়ায়। এই দ্বিমুখী বক্তব্যের যেমন দরকার সমাধান তেমনি সংক্রমণ বন্ধে দরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ। আর এই দ্বিমুখী বক্তব্যের সমাধান নিশ্চিত করা যায় তথ্যের অবাদ প্রবাহ নিশ্চিত করন ও তথ্য প্রকাশ করার মাধ্যমে।
এক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর কাজকে অনুসরন করা যেতে পারে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এখন করে যাচ্ছেন।তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের খবর নিচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। দেশে ত্রান প্রশাসনিক ভাবে আসছে তারপর তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্টন হচ্ছে। এক্ষেত্রে জেলা উপজেলা প্রতিটি স্তরের প্রতিটি প্রশাসনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব একাউন্ট রয়েছে।সেখান থেকে যদি প্রতিনিয়ত সাহায্যের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা হয় তবে এই তথ্য বিভ্রাট কমবে৷ এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, উপজেলা টিএনও তাদের কাছে আসা সাহায্য তাদের আওতাধীন এলাকার কোন জনপ্রতিনিধিকে কতটুকু বরাদ্ধ দিয়েছে এবং বন্টনের কোন শর্ত যদি থাকে তা তুলে ধরলে এবং সেই অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিরাও নিজ নিজ একাউন্ট হতে ওয়ার্ড কিংবা পাড়া মহল্লা ভিত্তিক তথ্য তুলে ধরলে খুব সহজেই তথ্যের স্বচ্ছতা যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি জবাবদিহিতাও।
কিন্তু বর্তমানে এরুপ অবস্থান দেখা ভার। কিছুকিছু সাহায্য হয়তো সরকারি ওয়েবসাইটে থাকে কিন্তু তা বৃহত্তর পরিসরে। স্থানীয় পর্যায়ে যদি থাকতো তবে আসল চিত্র ফুটে আসতো।
অন্যদিকে এই করোনাভাইরাসের কারনে সারাদেশেই জনসমাগম নিষিদ্ধ। একজন জনপ্রতিনিধি সে সংসদ সদস্য হতে শুরু করে স্থানীয় চেয়ারম্যান যেই হৌক না কেন বাহিরে বের হয়ে জনগনের কথা শুনতে গেলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে তা শুনাটা দুষ্কর।কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এই কাজ খুব সহজেই করতে পারে।এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা নিয়মিত নিজ নিজ এলাকার খোজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের চলমান কার্যক্রম ও নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনার কাজ ও খুব সহজেই সম্ভব। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছেনা এমন ও নয়। শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, নড়াইল -০২ আসনের সাংসদ মাশরাফি, কুমিল্লা-০৪ আসনের বাহারউদ্দিন বাহার বরিশালের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদ সহ অনেকেই নিজ নিজ এলাকার কার্যক্রম তুলে ধরছেন এবং পাশাপাশি নিজ নিজ এলকার জনগনের প্রতি নিয়মিত বার্তা দিচ্ছে ও তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে।
কিন্তু এই সময়ে এসেও দেখা যাচ্ছে এরপরেও অনেক জনপ্রতিনিধি সামনে আসছেন না। জনগন এমূহর্তে আশার বানী শুনতে চায়,তারা চায় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি রা তাদের খোজ খবর নিচ্ছে তাদের তরফ হতে পর্যাপ্ত সাহায্য করছে। নেতাকর্মীরা চায় তাদেরকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হোক,তাদের কাজের খোজ খবর নেওয়া হোক কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,এ মূহর্তে অনেক জনপ্রতিনিধিই সামনেই আসছে না ।
অন্যদিকে, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন দলের, স্বতন্ত্র সহ অনেক প্রার্থী ছিলো। তারাও নানা ভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করছে কি করছেনা সেসবও তুলে ধরতে পারতো ও পারে। এবং তারা জনগনকে বুঝাতে পারে আমরা আপনাদের পাশে আছি সবসময়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এ মূহর্তে হাতেগোনা কিছু প্রার্থী ছাড়া বাকি সবাই এমূহর্তে দৃষ্টির অগোচরে অবস্থান করছে।
জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধি হতে আগ্রহীদের হাতে এখনই সর্বোৎকৃষ্ট সময় নিজেকে জনগনের সেবক,জনগনের বন্ধু হিসেবে তুলে ধরার,যোগ্য হিসেবে প্রমান করার। করোনা পরবর্তী সময়ই জনগন এই দুঃসময়ের হিসেব করেই জনপ্রতিনিধিতের কাছে টানবে কিংবা দূরে ঠেলে দিবে।
এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কেবল সরকার, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কাজ করলেই হবেনা এগিয়ে আসতে হবে জনগনকেও। কিছুদিন আগে সীমিত পরিসরে মার্কেট খোলার ঘোষনা দিলে যে হুড়োহুড়ি পড়েছিলো যেন করোনা কোন সংক্রমণের রোগ নয়। অথছ সরকারী নির্দেশনা ছিলো সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে এই কেনাবেচা করতে হবে কিন্তু কে শোনে কার কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় টিএনও বারবার বলছে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এই শপিং এ কেন? কারো মুখে কোন জবাব ছিলোনা। আবার করোনা মোকাবেলায় সামনের সারিতে থেকে কাজ করে যাওয়া বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ যেমন ডাক্তার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা,ব্যাংকাররা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জনগনের সেবার জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কিছুকিছু সময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও পাচ্ছেনা আমাদের থেকে। কিছুদিন আগের খবরে বের হয়েছে নারায়নগঞ্জের এক ডাক্তার পরিবার করোরোগীর সেবা করতে গিয়ে পুরো পরিবার করোনা আক্রন্ত হয় এবং এরপর স্থানীয় জনগন তাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করলে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এর নিরসন হয়।একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অন্যদিকে সাধারন মানুষ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পাহারা দিয়ে রাস্তায় নামছে।
এই ভাইরাস সংক্রমনে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষঙ্গিক সাহায্য করবে আর জনগনকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারকে সাহায্য করতে হবে। জনগন, সরকার ও প্রশাসন এই তিনের সমন্বিত প্রয়াসই পারে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে। তাই এই ভারইাস মোকাবেলায় সকলকে সচেতনভাবে যার যার অবস্থান হতে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যেতে হবে।তবেই আমরা জয়ী হতে পারবো এই যুদ্ধ।
©বাহাউদ্দিন আবিরকরোনাঃ সরকারি সাহায্য, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের দায়িত্ব
--বাহাউদ্দিন আবির
সারাদেশে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে লকডাউনের দেড়মাস পেরিয়ে দুমাসের পথে। বর্তমানে সারাদেশে করোনাভাইরাস এর সংক্রমনের সংখ্যা বাড়ছেই দিনে দিনে। সর্বশেষ (১৩-০৫-২০২০) সরকারি হিসেব মতে, এক থেকে শুরু হয়ে সর্বশেষ সর্বোচ্চ সংক্রমণ একদিনে চিহ্নিত হয়েছে ১১৬২ জন যা সব মিলিয়ে ১৭৮২২ জন সব মিলিয়ে ও সর্বমোট মৃত্যু ২৬৯ জন। এই সংখ্যা দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছেই। দেশের প্রায় সব জেলাতেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সরকার একদিকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষনা করে এখন তা কিছুটা শিথিল করেছে অর্থনীতি সীমিত পরিসরে চলমান রাখতে। তারই পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পন্য সরবারাহের জন্যও। কিন্তু দিন যত বাড়ছে লকডাউন অমান্যের সংখ্যাও বাড়ছে,সংক্রমনের সংখ্যাও বাড়ছে।
এমূহর্তে যারাই লকডাউন অমান্য করছে অধিকাংশই নিজেদের ক্ষেত্রে যুক্তি দিচ্ছে পরিারের চলার মতো অর্থ কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব মেটাতে তারা এই ভাইরাসের ঝুঁকি জানা স্বত্বেও বাহিরে বের হয়েছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ হতে নানান প্রণোদনা ও ত্রানের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে এবং তা বন্টন ও হচ্ছে। কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি,সরকারি সাহায্য লোপাট এবং অনেকক্ষেত্রে দলীয় লোকদের মাঝে বন্টনের অভিযোগ উঠেছে। এসবের কিছু কিছু ঘটনা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও হয়েছে যেমন সরকারি সাহায্যে লুটপাটের কারনে প্রায় ৫০ জনের মতো জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত করা হয়েছে।আবার কোথাও সরকারি সাহায্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্টন না করে বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বন্টনের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে যারা বিভিন্ন এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা (ভোটার নয়) তারা সাহায্য পাচ্ছে না ঠিকমতো। এদের অধিকাংশই শহরে বিভিন্ন কাজের খাতিরে অবস্থান করছিলো। করোনা একটি মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করছে।এই সংকটে সকল শ্রেণীর মানুষ পড়লেও এমূহর্তে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে মধ্যবিত্তরা।তারা না পারছে চাইতে না পাচ্ছে সরাসরি কোন সাহায্য। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি উদ্যোগ ও নিয়েছে মধ্যবিত্তের ঘরে খাবার পৌছে দেওয়ার।
সরকার প্রথম থেকেই খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যের ও ঘোষনা দিয়েছে এবং তা বন্টন হলেও প্রকৃত ভুক্তভোগীর নিকট পৌছায় কিনা একটি বড় প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কেননা নাহলে এত মানুষ লকডাউন কেন ভাংতে উৎসাহী হচ্ছে?
একদিকে মানুষ বলছে ঘরে খাবার নেই। না খেয়ে মৃত্যুর চেয়ে করোনায় মৃত্যু ভালো। অন্যদিকে সরকার বলছে তারা পর্যাপ্ত সাহায্য পৌছে দিচ্ছে জনগনের দোরগোড়ায়। এই দ্বিমুখী বক্তব্যের যেমন দরকার সমাধান তেমনি সংক্রমণ বন্ধে দরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ। আর এই দ্বিমুখী বক্তব্যের সমাধান নিশ্চিত করা যায় তথ্যের অবাদ প্রবাহ নিশ্চিত করন ও তথ্য প্রকাশ করার মাধ্যমে।
এক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর কাজকে অনুসরন করা যেতে পারে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এখন করে যাচ্ছেন।তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের খবর নিচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। দেশে ত্রান প্রশাসনিক ভাবে আসছে তারপর তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্টন হচ্ছে। এক্ষেত্রে জেলা উপজেলা প্রতিটি স্তরের প্রতিটি প্রশাসনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব একাউন্ট রয়েছে।সেখান থেকে যদি প্রতিনিয়ত সাহায্যের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা হয় তবে এই তথ্য বিভ্রাট কমবে৷ এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, উপজেলা টিএনও তাদের কাছে আসা সাহায্য তাদের আওতাধীন এলাকার কোন জনপ্রতিনিধিকে কতটুকু বরাদ্ধ দিয়েছে এবং বন্টনের কোন শর্ত যদি থাকে তা তুলে ধরলে এবং সেই অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিরাও নিজ নিজ একাউন্ট হতে ওয়ার্ড কিংবা পাড়া মহল্লা ভিত্তিক তথ্য তুলে ধরলে খুব সহজেই তথ্যের স্বচ্ছতা যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি জবাবদিহিতাও।
কিন্তু বর্তমানে এরুপ অবস্থান দেখা ভার। কিছুকিছু সাহায্য হয়তো সরকারি ওয়েবসাইটে থাকে কিন্তু তা বৃহত্তর পরিসরে। স্থানীয় পর্যায়ে যদি থাকতো তবে আসল চিত্র ফুটে আসতো।
অন্যদিকে এই করোনাভাইরাসের কারনে সারাদেশেই জনসমাগম নিষিদ্ধ। একজন জনপ্রতিনিধি সে সংসদ সদস্য হতে শুরু করে স্থানীয় চেয়ারম্যান যেই হৌক না কেন বাহিরে বের হয়ে জনগনের কথা শুনতে গেলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে তা শুনাটা দুষ্কর।কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এই কাজ খুব সহজেই করতে পারে।এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা নিয়মিত নিজ নিজ এলাকার খোজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের চলমান কার্যক্রম ও নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনার কাজ ও খুব সহজেই সম্ভব। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছেনা এমন ও নয়। শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, নড়াইল -০২ আসনের সাংসদ মাশরাফি, কুমিল্লা-০৪ আসনের বাহারউদ্দিন বাহার বরিশালের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদ সহ অনেকেই নিজ নিজ এলাকার কার্যক্রম তুলে ধরছেন এবং পাশাপাশি নিজ নিজ এলকার জনগনের প্রতি নিয়মিত বার্তা দিচ্ছে ও তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে।
কিন্তু এই সময়ে এসেও দেখা যাচ্ছে এরপরেও অনেক জনপ্রতিনিধি সামনে আসছেন না। জনগন এমূহর্তে আশার বানী শুনতে চায়,তারা চায় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি রা তাদের খোজ খবর নিচ্ছে তাদের তরফ হতে পর্যাপ্ত সাহায্য করছে। নেতাকর্মীরা চায় তাদেরকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হোক,তাদের কাজের খোজ খবর নেওয়া হোক কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,এ মূহর্তে অনেক জনপ্রতিনিধিই সামনেই আসছে না ।
অন্যদিকে, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন দলের, স্বতন্ত্র সহ অনেক প্রার্থী ছিলো। তারাও নানা ভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করছে কি করছেনা সেসবও তুলে ধরতে পারতো ও পারে। এবং তারা জনগনকে বুঝাতে পারে আমরা আপনাদের পাশে আছি সবসময়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এ মূহর্তে হাতেগোনা কিছু প্রার্থী ছাড়া বাকি সবাই এমূহর্তে দৃষ্টির অগোচরে অবস্থান করছে।
জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধি হতে আগ্রহীদের হাতে এখনই সর্বোৎকৃষ্ট সময় নিজেকে জনগনের সেবক,জনগনের বন্ধু হিসেবে তুলে ধরার,যোগ্য হিসেবে প্রমান করার। করোনা পরবর্তী সময়ই জনগন এই দুঃসময়ের হিসেব করেই জনপ্রতিনিধিতের কাছে টানবে কিংবা দূরে ঠেলে দিবে।
এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কেবল সরকার, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কাজ করলেই হবেনা এগিয়ে আসতে হবে জনগনকেও। কিছুদিন আগে সীমিত পরিসরে মার্কেট খোলার ঘোষনা দিলে যে হুড়োহুড়ি পড়েছিলো যেন করোনা কোন সংক্রমণের রোগ নয়। অথছ সরকারী নির্দেশনা ছিলো সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে এই কেনাবেচা করতে হবে কিন্তু কে শোনে কার কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় টিএনও বারবার বলছে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এই শপিং এ কেন? কারো মুখে কোন জবাব ছিলোনা। আবার করোনা মোকাবেলায় সামনের সারিতে থেকে কাজ করে যাওয়া বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ যেমন ডাক্তার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা,ব্যাংকাররা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জনগনের সেবার জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কিছুকিছু সময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও পাচ্ছেনা আমাদের থেকে। কিছুদিন আগের খবরে বের হয়েছে নারায়নগঞ্জের এক ডাক্তার পরিবার করোরোগীর সেবা করতে গিয়ে পুরো পরিবার করোনা আক্রন্ত হয় এবং এরপর স্থানীয় জনগন তাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করলে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এর নিরসন হয়।একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অন্যদিকে সাধারন মানুষ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পাহারা দিয়ে রাস্তায় নামছে।
এই ভাইরাস সংক্রমনে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষঙ্গিক সাহায্য করবে আর জনগনকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারকে সাহায্য করতে হবে। জনগন, সরকার ও প্রশাসন এই তিনের সমন্বিত প্রয়াসই পারে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে। তাই এই ভারইাস মোকাবেলায় সকলকে সচেতনভাবে যার যার অবস্থান হতে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যেতে হবে।তবেই আমরা জয়ী হতে পারবো এই যুদ্ধ।
©বাহাউদ্দিন আবির
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫