বাবরি মসজিদ(বর্তমানে রাম লালা/ বাবরি মন্দির) ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বুলবুল ও বাংলাদেশ
প্রথমত, বুলবুল শক্তি ক্ষয় করে এগোচ্ছে৷ সরকার থেকে, সাধারণ মানুষ থেকে সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে, নিয়েছে,নিচ্ছে হেফাজতের মালিক আল্লাহ। আর সবাই মিলেই কাজ করলে যে কোন বিপদ মোকাবিলা করা সম্ভব। দুর্যোগে কখনো আতঙ্কিত হওয়া যাবেনা।শান্ত থাকতে হবে। নিজের নিরাপত্তা সবার আগে।
দ্বিতীয়ত, বাবরির যে স্থানটি নিয়ে আজ রায় হলো ১০৪৫ পৃষ্ঠার, তার সারাংশ যা বুঝেছি, আর্কিওলজিস্টের মতে বাবরি মসজিদের নিচে কিছু পাওয়া গেছে তা শিউর না কি তবে মানুষ যেহেতু বিশ্বাস করে মন্দির ছিলো, সে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ট্রাস্ট গঠন করে মন্দির নির্মান করতে হবে। ট্রাস্ট তিন মাসের ভিতর গঠন করতে হবে। এবং মুসলিমদের বা সুন্নী ওয়াকফ বোর্ডকে ৫ একর জায়গা দিবে অযোধ্যাতেই যেন মসজিদ নির্মান করতে পারে। এই রায় ৫ জন বিচারপতি একমত হয়েছে।
এই ইস্যু নিয়ে কথা বলা জরুরি৷ কারন এর ইমপ্যাক্ট বাংলাদেশে ও পড়েছিলো,পড়বে এবং সর্বোপরি জানা জরুরি।
যা জানা দরকারঃ
১) যে প্রধান বিচারপতো রায় দিয়েছে উনি অবসরে যাবে একসপ্তাহ পরে। এবং ইনিই ভারতে এনআরসি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
২) রায়ে বলা হয়েছে বিশ্বাসের ভিত্তিতে এই রায় হয়েছে। যেহেতু প্রত্নতত্ত্ববিদরা শিউর না বাবরির নিচের নমুনা কিসের ছিলো তবে যেহেতু মানুষ বিশ্বাস করে তাই দেওয়া। The court said: "on the balance of probabilities, there is clear evidence to indicate that the worship by the Hindus in the outer courtyard continued unimpeded in spite of the setting up of a grill-brick wall in 1857. Their possession of the outer courtyard stands established together with the incidents attaching to their control over it."
(আদলত জমির মালিকানা নির্ধারন করতে পারে বিশ্বসের না) এই দুইনং পয়েন্ট হতে আরো কিছু পয়েন্ট আসে যার কারনে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবেঃ
ক) এরমানে হচ্ছে আদলত আইন কম বিশ্বাসে দৃষ্টি রাখছে। এবং এর ফলে অযোধ্যা ছাড়া বাকি শহরগুলোতে যেমন কাশি,বিহার এসব জায়গাতে নতুন দাবি আসে কিনা যে এখানে আগে হিন্দু জায়গা ছিলো(মুসলিম শাসনের আগে) সো আমাকে এ জায়গা দেও। ব্যাপারটা সিম্পল ধরেন কাবাতে পোত্তলিকরা পুজো করতো, এখন করা নিষেধ কিন্তু তারা দাবি করবে এখন এর দখল দেও। এটা একপক্ষের বক্তব্য আবার অন্যদিকে কেউ বলছে যেহেতু বাবরের আগে হিন্দু শাসন ছিলো এবং স্থাপনা ছিলো, ও নিয়মিত পূজা হতো তাই এটা রাম মন্দির। মোদ্দাকথা বিশ্বাসের ভিত্তিতে এই রায়।
খ) আদালত বলেছে যে যারা মসজিদ ভেঙেছে সেটা অন্যায় কিন্তু আবার সেই আদালতই বলছে বিশ্বাসের ভিত্তিতে রায় দিয়েছে। তারমানে ইন্টারেস্ট অফ কনফ্লিক্ট। এবং এর ফলে আদালত প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা?
এটাকে অনেকে Balancing Judgement. আদালত বলেছে জাস্টিস হবেনা যদি আমি একপক্ষকে নেগলেক্ট করি। সেজন্যই আলাদা পাঁচ একর জমি আদালত তার স্পেশাল পাওয়ার ব্যবহার করে দিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, যেহেতু এটা সেন্টিমেন্টাল জায়গা এবং আদালতের কাজ আইন ও প্রমান দেখা সেখানে আদালত তা না করে সেটেলমেন্টে গিয়েছে এবং একধরনের সমাঝোতা করেছে এরকম অন্য স্থান হতে নতুন দাবি উঠে কিনা এই রায়কে বেইজ পয়েন্ট করে যে মসজিদ/উপাসনা হটাও। মন্দির ওহি বানেগা।
এবার আসি বাংলাদেশের সাথে কি সম্পর্ক?
ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ সেকুলার দেশ হলেও যথাক্রমে হিন্দু ও মুসলিম মেজরিটি দেশ। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় বাংলাদেশেও দাঙ্গা হয়েছিলো। এ মূহর্তে ইন্ডিয়াতে আপাতদৃষ্টিতে সব ঠান্ডা। পরিস্থিতি অনূকূল আছে।উত্তপ্ত হতে নিষেধ করা হচ্ছে সব পক্ষ হতে। আদালত এই রায়কে কেন্দ্র করে সেলিব্রেশন এবং বিক্ষোভ যেন না হয় সেজন্য স্ব প্রনোদিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে নতুন দাবি নিয়ে নতুন কোন স্থান নিয়ে বিবাদে জড়ালে বাংলাদেশে যেন বিশৃঙ্খলা না হয়। কোন গুজব না হয়। কোন দাঙ্গা না হয়।
এর প্রভাব হিন্দু / ইসকন কেন্দ্রিক বিদ্বেষ যেন এ দেশে না বাড়ে। বর্তমানে সবকিছুতেই ইসকনকে জড়ানো হচ্ছে। হিন্দু মানেই ইসকন।একটা সময় যেমন সরকার বিরোধী মানেই শিবির। কিংবা আরো একগোষ্ঠী আছে যারা ভাবে এই দুনিয়ার সবকিছু ইলুমিনাতি নিয়ন্ত্রণ করে।সো ব্যাসিকালি কথা হচ্ছে কেউ যেন এর সুযোগ নিতে না পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থা যেমনই থাকুক না কেন বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার কাশ্মির নিয়ে ৩৭০, নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতা ঘোষনা,নেপাল ইন্ডিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো, এন আরসি, কোলকাতায় বাংলা জাতীয়তাবাদের উথান, রোহিঙ্গা ক্রাইসিস, সীমান্ত হত্যা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সব মিলিয়ে এই মূহর্তে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম হাব হিসেবে আছে। একে কেবল দেশি শক্তিই কাজে/অকাজে/স্বকাজে লাগাচ্ছে/ব্যবহার করছেনা বিদেশি শক্তিও ইনভলব। এবং ভৌগোলিক কারনে আমরা এই স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট পেয়েছি। এটা এড়ানো যাবেনা। সচেতন থাকলে আমরা শক্তি পাবো,অসেচতন হলে শক্তি কেড়ে নেবে।
1) পুরো রায়ঃ Click This Link
2) আর্কিওলজিস্টদের বক্তব্যঃ Click This Link
3) এই ইস্যুতে একটা ডকুমেন্টারিঃ https://youtu.be/GMT18TMNQbY
4) এই রায় নিয়ে দুই পক্ষই শান্ত থাকার কথা বলেছে: Click This Link
5) Click This Link
6) Click This Link
7) Victory over Faith: Click This Link
8) Podcast: https://youtu.be/_YIwT5YNopk
9)প্রথমে গুন্ডামি করে মসজিদটা ভাঙা হল, তার পরে আদালত বলল ওখানে মন্দির হবে!--- Click This Link
©বাহাউদ্দিন আবির
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৭