সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অনিহা কেন?
----বাহাউদ্দিন আবির
ডিজিটাল বিপ্লবকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বলা হচ্ছে। সারা বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন, ইন্টারনেট,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, জৈবপ্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়গুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন এনেছে তা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন।বর্তমানে বিটিআরসির তথ্যমতে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দশকোটির কাছাকাছি এবং নিয়মিতই তা বাড়ছে। এর বেশিরভাগই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী।তথ্যমতে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ তরুনই বর্তমানে এক বা একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার হচ্ছে মতামত প্রকাশ প্রচার ও অধিকার নিয়ে সোচ্চার হবার দাবিতে।
বিগত জাতীয় নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও নির্বাচন পরবর্তীতে তা প্রায় থেমে যায়। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জনপ্রতিনিধিরা যেখানে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকছে, নাগরিকদের মতামত সমালোচনা সরাসরি শুনছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন সহ পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত সক্রিয়। নিজেদের এবং পাশাপাশি সরকারের নানা কর্মকান্ড তুলে ধরে। বেশি দূরে যাবার দরকার নেই আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেই প্রায় প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি,সরকারি দফতর গুলো তাদের কর্মকান্ড তুলে ধরে। নাগরিকরা তাদের মতামত দেয়। বর্তমানে অল্প কিছু সরকারি দপ্তর নিজেদের কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভোক্তা অধিকারের পেইজ ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পেইজ।
অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন সাংসদ ও মেয়র সক্রিয় থাকলেও অধিকাংশেরই কোন ভ্যারিফাইড একাউন্টই নেই। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের কয়েকজন সংসদ ও প্রতিমন্ত্রী সক্রিয় থাকলেও অন্য দলগুলোর অবস্থা খুবই করুন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নামে ভুয়া একাউন্টের ছড়াছড়ি থাকলেও ভ্যারিফাইড কোন একাউন্ট নেই। জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির দলীয় ভ্যারিফাইড কোন একাউন্ট নেই, নেই দলীয় প্রধান এবং সংসদদের ও নেতাদের। সাবেক বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতারই নেই কোন সোসাল মিডিয়া একাউন্ট। তবে সবার নামেই ভুয়া একাউন্টের ছড়াছড়ি রয়েছে এবং এসব একাউন্টের মাধ্যমে অনেকেই প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে। একদিকে যেমন প্রতারণা বাড়ছে অন্যদিকে জনগণের কাছাকাছি থাকার বদলে বিভ্রান্তি ও গুজবের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমান সরকারের টার্গেট যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ সেখানে জনপ্রতিনিধিরা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে থাকছে। জনগনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততার,তাদের মতামত জানার সুযোগ থাকা স্বত্তেও পিছিয়ে থাকছে। যেহেতু অধিকাংশ নাগরিকই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে, জনপ্রতিনিধিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সক্রিয় হলে জনগনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা বাড়ার পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তে জনগনের মতামত জানার সুযোগও তৈরি হবে। এইভাবে প্রতি মুহূর্তে জনগন ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা হলে উভয়ের মাঝে একটি আস্থার জায়গাও তৈরি হবে। তাই জনপ্রতিনিধিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সক্রিয়তা নাগরিক সেবা হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি।
https://www.bhorerkagoj.com/epaper/2019/10/02/index.php
বিঃদ্রঃ পুরো লিখাটি কাটছাট করে আসায় বোঝার জন্য পুরোটা দেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৩৭