একজন আকতার জাহান, রাজশাহী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। শিক্ষায়, আর্থিক দিক থেকে কোনভাবেই তিনি দূর্বল ছিলেন না। তবু তাকে আত্মহত্যা করতে হলো! কেননা সে ছিল অত্যাচারী স্বামীর নিপীড়ন থেকে বেরিয়ে আসা এক গৃহত্যাগী নারী। কেননা সে তার নিজের সন্তান আর নিজের জীবনকে ভালবাসত। তার স্বামী তাকে ছুরি নিয়ে তাড়া করার পর তিনি এক কাপড়েই গৃহ ত্যাগ করেছিলেন। এক কাপড়ে অতি যত্নে গড়া সংসারকে পেছনে ফেলে বাঁচতে চেয়েছিলেন খুব সাধারণভাবে। তবু শেষ রক্ষা হোল কই? সন্তানের নিরাপত্তা, সামাজিক হেনস্তা তাকে মানসিক যাতনায় রাখত। তাই সবার মাঝে থেকেও যে সে ছিল একা। একা একাই নিজের যন্ত্রনায় নিজেই কুকড়ে যেতেন। শেষমেষ মৃতু্যর পথই বেছে নিলেন।
যদিও তার মৃতু্যকে আমরা আত্মহত্যা বলছি, তবু এটি আত্মহত্যা নয়। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, এই কৃসংষ্কারে আবদ্ধ এই সমাজ এখনও ডিভোর্সী নারীকে একঘরে করে রাখতেই অভ্যস্ত। আর তাই সকল অার্থিক সামর্থ্য থাকা সত্বেও সে থাকে সমাজের এককোণে। আর নয়মাস দশদিন পেটে রেখে তিলে তিলে গড়া সন্তানের দায়িত্বও যখন একজন পিতা আইনগতভাবে পেয়ে যান তখন একজন নারী হয়ে পড়েন অসহায়। সহজে সে অন্য জীবনে অভ্যস্ত হতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ রকম আরও আরও কত আকতার জাহান মৃতু্যর প্রহর গুনছে কে জানে! এই সমাজ কি বদলাবে? নাকি এর অন্ধকার কূপে পড়ে প্রাণ দেবে আরও অনেক শিক্ষিত নারী? আমরা ভুলে যেতে পারি ঢাবির শিক্ষক রুমানার কথা। যার দু'চোখই অন্ধ করে দিয়েছিল তার নরপশু স্বামী।
তবু সমাজ চোখ বুজে থাকে। না দেখার ভাণ করে। মেয়ের অশান্ত মনের খবর জানার বা বোঝার চেষ্টা করেন না তার বাবা-মা। তারা সমাজের তথাকথিত সম্মানের ভয়ে মেয়েকে কোন রকমে সংসারে জীবনে টিকে থাকতে বলেন। আর এদিকে ধীরে ধীরে তার প্রিয় সন্তানটি মৃতের মত সংসারের ঘানি টেনে চলে যখন সে ঘানি আর টানতে না পারে তখনই ঘটে যায় বিষ্ফোরণ, আমাদের সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তার সীমাবদ্ধতা। আজকে সময় এসেছে নারীদেরকে সোচ্চার হবার- তার সমস্ত নিপীনের বিরুদ্ধে, তাকে দিতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা। আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কিছু পারিবারিক আইনেরও পরিবর্তন আজ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কারণ তিলে তিলে গড়া একজন নারীর সবকিছু তার প্রাক্তন স্বামী একাই পাবেন, তা তো হতে পারে না। ডির্ভোসী বাবা-মায়ের সন্তানের দায়িত্ব দু'জনেই সমানভাবে দেয়া উচিৎ। একজন মা ছটফট করে তার সন্তানকে দেখার আশায় অথচ তার বাবা পিতৃত্ব ফলানোর জন্য তাকে মায়ের সাথে দেখা করতে দেয় না। একজন আকতার জাহানকে এ সমাজ মেরে ফেলেছে, সে মরতে চায়নি, বাঁচতে চেয়েছিল প্রচন্ডভাবে! এর দায়ভার আমরা কিছুতেই এড়াতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৬