চেঙ্গিস খানের তৃতীয় ছেলে ওগেদাই খান তিনি ছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় খাগান।চেঙ্গিস খানের পর তিনিই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিস্তার অভিযান এগিয়ে নিয়ে যান। চেঙ্গিস খানের প্রথমদিককার অন্য ছেলেদের মত তিনিও চীন, ইরান এবং মধ্য এশিয়া জয়ে অংশ নিয়েছেন।চেঙ্গিস খানের উত্থানের সময় তিনি বিভিন্ন ঘটনায় অংশ নিয়েছেন। ওগেদাইয়ের ১৭ বছর বয়সের সময় চেঙ্গিস খান জামুখার বিরুদ্ধে একটি লড়াইয়ে পরাজিত হন। যুদ্ধক্ষেত্রে ওগেদাই আহতাবস্থায় নিখোজ হন। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়।১২১১ সালের নভেম্বরে ওগেদাই তার ভাইদের সাথে প্রথমবার জিন রাজবংশের বিরুদ্ধে অভিযানে স্বাধীনভাবে অংশ নিয়েছেন। তাকে দক্ষিণে এবং পরে উত্তরে প্রেরণ করা হয়েছিল।পূর্ব পারস্যে অভিযানের সময় ওগেদাই এবং চাগাতাই ১২১৯ ও ১২২০ সালে পাঁচ মাস অবরোধের পর ওতরারের বাসিন্দাদের হত্যা করেন। তারপর তিনি উরগঞ্জে জোচির সাথে যোগ দেন।সামরিক কৌশল নিয়ে জোচির সাথে চাগাতাইয়ের বনিবনা না হওয়ায় চেঙ্গিস খান উরগঞ্জ অবরোধের জন্য ওগেদাইকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১২২১ সালে তারা শহর দখল করেন। দক্ষিণপূর্ব পারস্য এবং আফগানিস্তানে বিদ্রোহ দেখা দেয়ার পর ওগেদাই গজনির বিদ্রোহ প্রশমিত করেছিলেন
১২২৯ সালে ওগেদাই খানের অভিষেক।
১২২৭ সালে চেঙ্গিস খান মারা যাওয়ার পর ওগেদাইয়ের ছোট ভাই তোলুই খান ১২২৯ সাল পর্যন্ত রাজকার্য তদারক করেছেন। ১২২৯ সালে অনুষ্ঠিত কুরুলতাইয়ে ওগেদাইকে খাগান নির্বাচিত করা হয়।চেঙ্গিস খানের কাছে ওগেদাই যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতেন।পিতার মত সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্যও তিনিও আলোচিত হন।খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্যের শেষ শাসক জালালউদ্দিন খোয়ারিজম শাহ ১২২৬ সালে সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালান। ১২২৭ সালে তার বিরুদ্ধে প্রেরিত মঙ্গোল বাহিনী দামেগানে পরাজিত হয়। তারপর প্রেরিত আরেকটি বাহিনী বিজয়ী হলেও সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি।ওগেদাইয়ের নির্দেশে চোরমাকান ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ সৈনিক নিয়ে অগ্রসর হয়ে পারস্য এবং খোরাসান দখল করে নেন। ১২৩০ সালে তারা আমু দরিয়া নদী অতিক্রম করেন এবং খোরাসান দখল করে নেন। পশ্চিম আফগানিস্তানে হামলার জন্য চোরমাকান তাদের পেছনে দায়ির নোয়ানের নেতৃত্বে একটি বাহিনী রেখে আসেন এবং নিজের বাহিনী নিয়ে পারস্যের উত্তর দিক দিয়ে অগ্রসর হন।রাইয়ে পৌছানোর পর চোরমাকান এখানে শীতকালিন শিবির স্থাপন করে উত্তর পারস্যের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালান। ১২৩১ সালে তিনি দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কোম ও হামাদান দখল করেন। সেখান থেকে তিনি ফারস ও করমানে তার সেনাদল প্রেরণ করেন। অন্যদিকে পূর্বে দায়ির আফগানিস্তান অভিযানে সফল হয়েছিলেন।১২৩০ সালের শেষের দিকে ওগেদাই খান শানশি প্রদেশের দিকে অগ্রসর হন। তিনি জিন বাহিনীকে পরাজিত করে ফেংশিয়াং শহর দখল করেন। পরবর্তীতে তারা নেনানে জিনদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। ১২৩২ সালে জিন সম্রাট তার রাজধানী কাইফেঙে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এরপর ওগেদাই তার সেনাপতিদেরকে দায়িত্ব দিয়ে ফিরে যান। ১২৩৪ সালে জিনরা পরাজিত হয়।
১২৩২ সালে চোরমাকানের নেতৃত্বাধীন মঙ্গোলরা ককেসাস ফিরে আসে। ১২৩৫ সালে কেটাপুল্ট ব্যবহার করে গানজাকের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়। ইরবিলের বাসিন্দারা মঙ্গোলদেরকে বার্ষিক কর দেওয়ার প্রতিশ্রুতির পর মঙ্গোলরা সেখান থেকে ফিরে যান। আর্মেনিয়া জয়ের পর চোরমাকান তিফলিস দখল করেন। ১২৪০ সাল নাগাদ চোরমাকান ট্রান্সককেসিয়া বিজয় সম্পন্ন করেন। জর্জিয়া তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।১২২৪ সালে কোরিয়া কর প্রদান বন্ধ করে দেয় এবং এক মঙ্গোল দূত নিহত হয়। ১২৩১ সালে ওগেদাই তাদের দমন করার জন্য সারিতাইকে প্রেরণ করেন। এরপর গোরিওর রাজা সাময়িকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে তারা শর্ত ভঙ্গ করে। ওগেদাই এরপর কোরিয়া, দক্ষিণ সুং এবং কিপচাকদের জয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। ১২৩৮ সালে গোরিওর তরফ থেকে শান্তি প্রস্তাব দেয়া হয়। ওগেদাই রাজাকে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হওয়ার শর্ত দেন। শেষপর্যন্ত গোরিও রাজা জিম্মি হিসেবে কয়েকজন অভিজাতকে মঙ্গোলিয়ায় প্রেরণ করেন।বাতু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোল সাম্রাজ্য পশ্চিমে বিস্তার লাভ করেছে। সেসময় প্রায় সমগ্র রাশিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়া তাদের পদানত হয়। ওগেদাই ইউরোপের বাকি অংশেও হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর ফলে অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়।১২৩৫ সাল থেকে ১২৪৫ সালের মধ্যে মঙ্গোলরা সুংদের এলাকার অনেক ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু আবহাওয়া এবং সুংদের সৈন্যসংখ্যাধিক্যের কারণে তারা পুরোপুরি সফল হয়নি। ওগেদাইয়ের ছেলে খোচু অভিযানকালে মারা যান। ১২৪০ সালে ওগেদাইয়ের আরেক ছেলে খুদান তিব্বত অভিযান চালিয়েছিলেন।ওগেদাই তার সেনাপতি দায়িরকে গজনির এবং মেংগেতুকে কুন্দুজের শাসক নিযুক্ত করেন। ১২৪১ সালের শীতে মঙ্গোলরা সিন্ধু অববাহিকায় হামলা করে। অভিযানের সময় তারা লাহোর অবরোধ করেছিল। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে মঙ্গোলরা এখানে ব্যাপক হত্যাকান্ড চালায়।১২৩৫ সালের পর আরেকটি মঙ্গোল বাহিনী কাশ্মিরে হামলা করে। পরবর্তীতে কাশ্মির মঙ্গোলদের অধিনস্ত রাজ্যে পরিণত হয়।
১২৩৫-৩৮ সালে ওগেদাই খান মঙ্গোলিয়ায় যাযাবরদের যাত্রাপথের বিভিন্ন অবতরণস্থলে প্রাসাদ ও স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ১২৩৫ সালে কারাকোরাম শহর নির্মাণ সম্পন্ন হয়। শহরের চারদিক দেয়াল দ্বারা ঘেরা ছিল। এখানে একটি দুর্গও অবস্থিত ছিল। ওগেদাই খান ১২৪১ সালে মঙ্গোলিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। ১২৪৬ সালে তার ছেলে গুয়ুক খান পরবর্তী খাগান হন। কুবলাই খান ১২৭১ সালে ইউয়ান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করার পর সরকারি দলিলে ওগেদাই খানকে তাইজং নামে লিপিবদ্ধ করেন।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
এবং
https://www.thoughtco.com/medieval-and-renaissance-history-4133289
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:১৪