হযরত ইয়াকুব (আঃ) হিব্রু বাইবেল এবং কোরআনের বর্ণনা অনুসারে তিনি ছিলেন একজন নবী।তার গোত্রের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল। এই নামে কোরআনে একটি সূরা নাযিল হয়েছে।ইয়াকুব (আঃ) এর বার জন পুত্র সন্তানের কথা কোরাআনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং হিব্রু বাইবেলেও বার জন পুত্র সন্তান এবং কয়েক জন কন্যা সন্তানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মেয়েদের মধ্যে শুধু একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই সন্তান সম্ভতি হয় এবং বংশ বিস্তার লাভ করেন। হিব্রু বাইবেল অনুসারে তাদের নাম হলঃ রেউবেন, সিমোন, লেভি, জুদাহ, দান, নাফতালি, গাদ, আশের, ইসসাচার, জেবুলুন, মেয়ে দিনাহ, জোসেফ বা ইউসুফ, এবং বেনজামিন বা বেনিয়ামিন। তার উপাধি ছিল ইসরাঈল । তাই বারটি পরিবার সবাই বনী-ইসরাঈল নামে খ্যাত হয়। বারপুত্রের মধ্যে দশ জন জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াকুব (আঃ) এর প্রথমা স্ত্রী লাইয়্যা বিন্তে লাইয়্যানের গর্ভে জন্মলাভ করে। তার মৃত্যুর পর ইয়াকুব (আঃ) লাইয়্যার ভগিনী রাহীলকে বিবাহ করেন। রাহীলের গর্ভে দু'পুত্র ইউসুফ ও বেনিয়ামিন জন্মগ্রহণ করেন। তাই ইউসুফ (আঃ) এর একমাত্র সহোদর ভাই ছিলেন বেনিয়ামিন এবং অবশিষ্ট দশ জন বৈমাত্রেয় ভাই ও কয়েক জন বোন। ইউসুফ জননী রাহীলও বেনিয়ামিনের জন্মের পর মৃত্যুমুখে পতিত হন।
হযরত ইয়াকূব (আঃ) এক সফরত অবস্থায় আনেরঅদূরে একস্থানে একটি পাথরের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েপড়েন। সে অবস্থায় তিনি স্বপ্ন দেখেন যে একদল ফেরেশতা সেখান থেকে আসমানেউঠানামা করছে। এ ঘটনার মধ্যেই আল্লাহতাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন অতিসত্ত্বর আমি তোমার উপরে বরকত নাযিলকরব তোমার সন্তান সন্ততি বৃদ্ধি করে দেব তোমাকে ওতোমার পরে তোমারউত্তরসূরীদের এই মাটির মালিক করে দেব। তিনি ঘুম থেকে উঠে খুশী মনে মানতকরলেন যদি নিরাপদে নিজ পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারেন তাহলে এই স্থানে তিনিএকটি ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠা করবেন এবং আল্লাহ তাকে যা রূযী দেবেন তার এক দশমাংশ আল্লাহর পথেই ব্যয় করবেন। অতঃপর তিনি ওই স্থানে পাথরটির উপরে একটি চিহ্ন একেদিলেন যাতে তিনি ফিরে এসে সেটাকে চিনতে পারেন।সেই স্থানেই বর্তমানে বায়তুল মুক্বাদ্দাস অবস্থিত যা পরবর্তীতেপ্রায় ১০০০ বছর পরে হযরত সুলায়মান (আঃ) পুনর্নির্মাণ করেন। মূলতঃ এটিই ছিল বায়তুলমুক্বাদ্দাসের মূল ভিত্তি ভূমি যা কাবা গৃহের চল্লিশ বছর পরে ফেরেশতাদের দ্বারা কিংবা আদমপুত্রদের হাতেকিংবা ইসহাক্ব (আঃ) কর্তৃক নির্মিত হয়। নিশ্চিহ্ন হওয়ার কারণে আল্লাহ ইয়াকূব(আঃ) কে স্বপ্নে দেখান এবং তার হাতে সেখানে পুনরায় ইবাদতখানা তৈরী হয়।ইস্রাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী ইয়াকূব হারানে মামার বাড়ীতে গিয়ে সেখানে তিনি তার মামাতো বোন লাইয়া এবং পরে রাহীল-কে বিবাহ করেন এবং দুইজনের মোহরানা অনুযায়ী অনেক বছর মামার বাড়ীতে দুম্বা চরান। ইবরাহীমী শরীআতে দুবোন একত্রে বিবাহকরা জায়েয ছিল। পরে মূসা (আঃ) এর শরী আতে এটা নিষিদ্ধ করা হয়। শেষোক্ত স্ত্রীরগর্ভে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বসেরা সুন্দর পুরুষ ইউসুফ (আঃ)। তারপর দ্বিতীয় পুত্রবেনিয়ামীনের জন্মের পরেই তিনি মারা যান। তার কবর বেথেলহামে অবস্থিত এবং ক্ববরে রাহীল নামে পরিচিত। পরে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ইয়াকূবের ১২পুত্রের মধ্যে ইউসুফ নবী হন। প্রথমা স্ত্রীর পুত্র লাভী এর পঞ্চম পুরুষ মূসা ও হারূণ নবী হন।
এভাবে ইয়াকূব (আঃ) এর বংশে নবীদের বংশে পরিনীত হয় ।ইয়াকূব-এর অপর নাম ইসরাঈল আর সে অনুযায়ী তার বংশধরগণ বনু ইস্রাঈল নামে পরিচিত হয়। হঠকারীইহুদী নাছারাগণ যাতে তারা আল্লাহর দাস একথা বারবার স্মরণ করে সেকারনে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাদেরকে বনুইস্রাঈল বলেই স্মরণ করেছেন।হারান থেকে ২০ বছর পর ইয়াকূব তার স্ত্রী পরিজন সহ জন্মস্থান হেবরনে ফিরে আসেন। যেখানে তার দাদা ইবরাহীম এবং পিতা ইসহাক্ব (আঃ) বসবাস করতেন।যা বর্তমানে আল-খলীল নামে পরিচিত। পূর্বেরমানত অনুসারে তিনি যথাস্থানে বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদ নির্মাণ করেন।কেনআন-ফিলিস্তীন তথা শাম এলাকাতেই তার নবুঅতের মিশন সীমায়িত থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭